চীন থেকে আমদানি রাসায়নিক রং না খেলে প্রাকৃতিক ভেষজ রঙের সাথে হোলি খেলুন
যাতে এই আনন্দোৎসব আপনার বা আপনার পরিবারের কাছে বিপদজনক না হয়ে ওঠে নিউক্র্যাড হেলথ বাংলার এই ছোট্ট প্রয়াস। কলমে শুভ্রা অধিকারী, অনুবাদে-মোনালিসা মহান্ত
“আজ কৃষ্ণচুড়ায় আগুন আগুন খেলা
আজ হৃদয় বলে মাতাল হবি চল্
……………………………………..
……………………………………..
আজ বাতাসে দোলের উন্মাদনা
আজ মেতেছে বুড়ো কচি সব।
আজ ভগ্ন হৃদেও হাজার উদ্দীপনা
আজ হর্ষ আনে বসন্ত উৎসব।।”
-সুকান্ত পাল
শীতের জীর্ণতা সরিয়ে এসেছে ঋতুরাজ। পহেলা ফাল্গুন- জীবনকে রাঙিয়ে দেয়ার দিন। ৯ ই মার্চ, ২০২০ -এ ভারতীয় জনসংখ্যার এক বিশাল অংশই রং বা হোলি উৎসব উদযাপন আনন্দ ও আবেগের সাথে। এই উৎসবের প্রায় পনের দিন আগে থেকেই আপনি দেখবেন স্থানীয় দোকানগুলিতে হোলির জন্য ছোট বোতলবন্দী হরেক রকম রং বিক্রি হচ্ছে চারিদিকে।
যাইহোক, আসল কথা হল আপনার আমার মতো অনেকেই জানিই না, এই রংগুলো তৈরীর সময় কী কী ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। তারপর আবার চীন থেকে আমদানি করা সস্তার রাসায়নিক রং – অনেক সময় রাসায়নিক উপাদানের নাম লেখা থাকে না ।
ঐতিহ্যগতভাবে, নতুন ঋতুকে স্বাগত জানাতে এই মহোৎসব উদযাপনের সময় বসন্ত কালের নানান রঙ-বেরঙ ফুল সংগ্রহ করে তার থেকে রং তৈরী করা হত। কিন্তু, আজকাল ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত লাভ রাখতে গিয়ে রঙের গুনগত মানের দিকে খেয়ালই রাখেন না; বহু বিষাক্ত যৌগে ব্যবহার করে কম খরচে হোলির রঙ তৈরি করেছেন। এই রং গুলির শরীরের চামড়া এবং অন্যান্য অঙ্গগুলির উপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলতে পারে। আজ হোলির রঙের ক্ষতিকারক প্রভাবগুলি এবং ত্বককে এই ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানোর কয়েকটি উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো।
হোলির রঙে কী ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহৃত হয়?
এখনকার দিনে বেশিরভাগ রং এই নানান বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে।
আজকাল এক একটি বিশেষ রং-এ সাধারণত কী রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হচ্ছে, তার
তালিকা বদ্ধ করে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো।
- সবুজ-তামার সালফেট এবং মাল্যাকাইট গ্রীন।
- লাল – মারকারি সালফেট
- সিলভার-অ্যালুমিনিয়াম ব্রোমাইড
- কালো- সীসার অক্সাইড
- নীল-প্রুশিয়ান ব্লু, তুঁত, কোবল্ট নাইট্রেট, এবং দস্তার লবণ।
কিছু বিরল ক্ষেত্রে, নির্মাতারা রং এর মধ্যে চকচকে ভাব আনার জন্য অভ্র ও সুক্ষ্ম কাচের কণাও যোগ করছে। কিন্তু এটি মনে রাখা অত্যন্ত জরুরি যে, এই ধরনের সামগ্রী যুক্ত রঙের ব্যবহার কিন্তু ত্বককে ভীষণ রকম ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে। আর এই জন্যই, প্রায়শয় এই আনন্দোৎসবের পরেই মানুষজনকে ডার্মাটোলজিস্টের কাছে বা হাসপাতালে ছুটেতে হয়। এই রঙগুলি বিক্রিবাটা প্রশাসন কোনোরকম নিয়ন্ত্রণ না করায়, আজকাল বাজরে এই সমস্ত সস্তা রঙে ভরে গেছে। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে, এই ধরনের রং গুলো কিন্তু বাজারে আসার আগে কোন রকম গুণগত মান পরীক্ষা না করেই বিক্রি করা হয়।
তাহলে খেলবেন কীভাবে?
ফুলের পাপড়ি বা পাতাগুলির মত উদ্ভিদজাত দ্রব্যগুলি থেকে তৈরি করা প্রাকৃতিক ভেষজ রঙের সাথে হলি খেলাই সবথেকে নিরাপদ। এই রঙগুলো ত্বকের উপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি ফেলে না।
ক্রেতাদেরকে রং কেনার সময় অত্যন্ত সচেতন হতে হবে। আদর্শ রং নির্বাচন করার আগে রঙের প্যাকেট বা কৌটার গায়ের লেবেলে দেওয়া তথ্য খুঁটিয়ে পড়ে তবেই কেনা উচিৎ। কারণ অনেক প্রস্তুতকারক রং তৈরির সময় জৈব উপাদানগুলি রসাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের অ্যাডিটিভ মিশিয়ে থাকে, যা এই ন্যাচারাল রঙকেও অনেক সময় বিষাক্ত করে তোলে।
পাউডার রং (আবীর) এবং তরল রংগুলির মধ্যে ( এ ক্ষেত্রে বোতল বন্দী তরল রঙ্গক জলে গুলে ব্যবহার করা হয়), আবীর ব্যবহার করাই নিরাপদ। কারন আবীর ব্যবহার করার পরে সহজেই ধুয়ে ফেলা যায়; কিন্তু তরল রং ত্বকের খাঁজ ও স্তরের মধ্যে শোষিত হয়ে যাওয়ায় , এই রঙের ছোপ দীর্ঘ সময়কাল জন্য থেকে যায়।
হোলির রঙ ব্যবহার করার পর কী কী পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে?
ইতিমধ্যেই আমরা আলোচন করেছি যে অধিকাংশ কৃত্রিম রঙই ত্বকের গুরুতর ক্ষতি করে।
এর থেকে ত্বকের আ্যলার্জি হতে পারে, যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তিরা চুলকানি, শুষ্কতা, লাল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। কখনও কখনও স্থায়ী চর্মরোগ বা ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে।
এই রং অসাবধানতা বশত চোখ চলে গেলে অসহ্য জ্বালা শুরু করে এবং এমনকি অন্ধত্ব পর্যন্ত হতে পারে।
দুর্ঘটনাজনিত ভাবে একবার এই রং পেটে চলে গেলে ভীষণ রকম ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে, এমনকী স্থায়ী ভাবে কিডনী নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষকরে যদি রঙে সীসার অক্সাইড থাকে।
ক্লোরিন বা আইয়োডিন ধারণকারী রঙ্গকগুলির হাঁপানি (অ্যাস্থমা) সৃষ্টি করার প্রবণতা খুব বেশি রয়েছে। এছাড়াও রং চুলের ও ক্ষতি করে। চুলকে শুষ্ক, রুক্ষ করে তোলে। অনেকের ক্ষেত্রে আবার দীর্ঘস্থায়ী টাঁকের সমস্যাও তৈরি করে।
আপনি কিভাবে এই ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব প্রতিরোধ করবেন?
কিছু পদ্ধতি বিশেষজ্ঞরা সুপারিশ করেছেন যা রঙের প্রতিকূল প্রভাবগুলি কমিয়ে আনতে সহায়তা করতে পারে।
- রঙের উৎসবে মাতার আগে শরীর এবং চুলের উন্মুক্ত অংশে নারকেল বা জলপাই তেলের প্রলেপ দিয়ে নিন।
- কানের কাছে, নখের কাছাকাছি এলাকা এবং কনুইয়ের অঞ্চলের ,ত্বকের পাঁজরযুক্ত জায়গায় বেশ পুরু করে তেলের প্রলেপ দিয়ে নিন।
- সানগ্লাস এবং টুপি ব্যবহার করুন, হোলির সময় চোখ এবং চুল রক্ষা পাবে।
- সস্তা খোলা রঙের বদলে আজকাল বাজারে প্রচুর প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি রং পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো ব্যবহার করুন।
খেলার সময় এই টুকিটাকি জিনিস গুলিয়ে আপনাকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। অবশেষে, প্রত্যেকেরই মনে রাখা উচিত, আমার আনন্দ যেন অন্যকারো জন্য দুঃখের কারণ না হয়ে যায়। সুতরাং, সাবধানতা অবলম্বন করুন এবং উৎসবের সময় নিরাপদ থাকুন।