মার্চ 28, 2024

করোনাভাইরাস ভ্যারিয়েন্টের (501Y.V2) সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকরী হতে পারে কিলার টি-লিম্ফোসাইট

Reading Time: 3 minutes

শুভময় ব্যানার্জী, পিএইচডি, নিউক্র্যাড হেলথ এর প্রতিবেদন, ফেব্রূয়ারি ২৪, ২০২১

কোভিড-১৯ এর প্রকোপ কিছুটা কমতেই দেখা দিয়েছে নতুন সমস্যা। সেটা হল করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ। বিজ্ঞানীরা ব্রিটেন, আফ্রিকা ও ব্রাজিলে তিনটি আলাদা SARS-CoV-2 ভ্যারিয়েন্টের সন্ধান পেয়েছেন, যাদের যথাক্রমে B.1.1.7, B.1.351 এবং P.1 বলে উল্লেখ করা হয়। এই ভ্যারিয়েন্টগুলি অনেক সহজে ও দ্রুতগতিতে সংক্রমিত হবার ক্ষমতা রাখে। যার ফলে বাড়তে পারে কোভিদ-১৯ জনিত অসুস্থতা ও মৃত্যুর হার।

মানুষ নভেল করোনাভাইরাসের দ্বারা একবার আক্রান্ত হলে, তার শরীরে তৈরি হয় কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াই করার অ্যান্টিবডি। বিজ্ঞানীদের মতে, অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়া বিশেষ ভাবে জরুরী, কারন পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি হলে, তবেই ভাইরাসের প্রোটিনের সাথে সেটি যুক্ত হয় এবং সংক্রমণকে প্রশমিত করে।করোনা ভ্যাকসিন তৈরি করার মূল ভিত্তি হোল শরীরে কার্যকরী অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়া। তবে, এই অ্যান্টিবডি করোনা ভ্যারিয়েন্টগুলির সংক্রমণ প্রতিরোধে আংশিক কার্যকরী। তাই বিজ্ঞানীরা আমাদের শরীরের অন্যান্য ইমিউন কোষগুলির কার্যকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত গবেষণা করে দেখেছেন, করোনা সংক্রমণের পরে আমাদের শরীরে সংক্রমণ প্রতিরোধে তৈরি হয় “কিলার টি-লিম্ফোসাইট” যা শরীরে দীর্ঘমেয়াদী ইমিউনিটি তৈরি করতে সাহায্য করে এবং নতুন করোনা ভ্যারিয়েন্টগুলির সাথে লড়াই করতেও অনেক বেশী কার্যকরী হয়। 

কিভাবে সংক্রমণ প্রতিরোধ করে কিলার টি-লিম্ফোসাইট?

দেহকোষে ভাইরাস সংক্রমণ হলে, ভাইরাসের প্রোটিন বা অ্যান্টিজেন বি-লিম্ফোসাইট, ডেনড্রাইটিক কোষ, ম্যাক্রোফেজ ইত্যাদি “অ্যান্টিজেন প্রেজেন্টিং কোষের” (APC) ভিতরে ছোট ছোট পেপটাইডে পরিনত হয় এবং মেজর হিসটোকম্প্যাটিবিলিটি কমপ্লেক্সের (MHC) মাধ্যমে টি-লিম্ফোসাইট রিসেপ্টরের সাথে যুক্ত হয়। এর ফলে দুটি ঘটনা ঘটতে পারে, 

১) হেল্পার টি-লিম্ফোসাইট (TH Cell or CD4+ Cell) সক্রিয় হয়ে অ্যান্টিবডি উৎপাদনকারী বি-লিম্ফোসাইটগুলিকে উদ্দীপিত করে।

২) কিলার টি-লিম্ফোসাইট (TK Cell or CD8+ Cell) তৈরি হয়ে সরাসরি ভাইরাস সংক্রমিত কোষকে বিনষ্ট করে।

এই প্রসঙ্গে, স্টকহলমের ক্যারোলিন্সকা ইন্সিটিউটের ইমিউনোলজিস্ট ডঃ অ্যানিকা কার্লসনের বক্তব্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর মতে, কিলার টি-লিম্ফোসাইটের সক্রিয়তার উপর নির্ভর করে, যে ভাইরাস সংক্রমিত কোষ কত দ্রুত ধ্বংস হবে। অর্থাৎ, কোন করোনা রোগীর শরীরে সক্রিয় কিলার টি-লিম্ফোসাইট যত বেশী কাজ করবে, তত দ্রুত শ্বাসনালীর উপরিভাগের সংক্রমণ প্রশমিত হবে এবং সংক্রমণযোগ্য ভাইরাসের পরিমান কমে আসবে। এর ফলে, সুস্থ ব্যাক্তির দেহে করোনা সংক্রমণের হারও কমবে।  

নিউক্র্যাড হেলথ নিয়ে আসছে নিউক্র্যাড হেলথ হাব – বাংলায় এক নতুন স্টার্ট আপ ,
এক বাঙালি বিজ্ঞানীর হাত ধরে। নিউক্র্যাড হেলথ হাব এর এন্ট্রেপ্রেনিউরশিপ প্রোগ্রাম এ কোনো পুঁজি না লাগিয়ে অংশ গ্রহণ করতে অথবা জানতে হোয়াট’স আপ করুন +917001105893

করোনাভাইরাস নির্দিষ্ট টি-লিম্ফোসাইট ভ্যাক্সিনঃ বিজ্ঞানীদের নতুন প্রয়াস

নভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে মানুষের দেহে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি ও টি-লিম্ফোসাইট আলাদা ভাবে কাজ করে। অ্যান্টিবডি ভাইরাস প্রোটিনের একটি বিশেষ এপিটোপকে চিহ্নিত করে তার সাথে যুক্ত হয় ও সংক্রমণ প্রশমনে সাহায্য করে। যেমন, বেশীরভাগ করোনা ভ্যাকসিন SARS-CoV-2 এর স্পাইক প্রোটিনের এপিটোপগুলি ব্যাবহার করে তৈরি হয়েছে এবং এরা ভাইরাস স্পাইক প্রোটিনের বিশেষ এপিটোপগুলির বিরুদ্দে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। কিন্তু, চিন্তার বিষয় হোল এই স্পাইক প্রোটিনের এপিটোপগুলি বিভিন্ন কারনে ভীষণভাবে গঠন পরিবর্তন করে অর্থাৎ তারা ‘ভ্যারিয়েবল’। সুতরাং, করোনা ভাইরাসে একবার আক্রান্ত হলে যে অ্যান্টিবডি শরীরে তৈরি হবে, পরবর্তীকালে যদি করোনা ভ্যারিয়েন্টগুলি সংক্রমণ ঘটায় তখন ওই অ্যান্টিবডি কাজ নাও করতে পারে। কিন্তু, গবেষণায় প্রমান হয়েছে, সংক্রমণের পরে দেহকোষে তৈরি টি-লিম্ফোসাইটগুলি করোনাভাইরাস প্রোটিনের ১৫-২০টি আলাদা আলাদা স্থানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। এছাড়া, কোন নির্দিষ্ট স্থান থেকে কোন নির্দিষ্ট টি-লিম্ফোসাইট তৈরি হচ্ছে তা ব্যাক্তিবিশেষে বিভিন্ন হয়। ফলে, করোনা সংক্রমণের পরে কোন জনগোষ্ঠীতে বিভিন্ন প্রকারের টি-লিম্ফোসাইটের কম্বিনেশান পাওয়া যায়। এই পরিস্থিতিতে, করোনাভাইরাসের পুনরায় সংক্রমণ করার ক্ষমতা কমে যায়। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, করোনাভাইরাস 501Y.V2 ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ অ্যান্টিবডি প্রতিহত করতে পারে না, কিন্তু টি-লিম্ফোসাইট অনেক দিন পর্যন্ত এই সংক্রমণকে রুখে দিতে সমর্থ হয়। তবে কি আনবিক পদ্ধতিতে টি-লিম্ফোসাইটগুলি কাজ করে, সেই বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তে আসতে গেলে আরও গবেষণার প্রয়োজন।  

May be an image of 2 people and text

তথ্যসূত্রঃ

  1. Ledford H. How ‘killer’ T cells could boost COVID immunity in face of new variants. Nature. 2021 Feb;590(7846):374-375. doi: 10.1038/d41586-021-00367-7. PMID: 33580217.
  2. Shah VK, Firmal P, Alam A, Ganguly D, Chattopadhyay S. Overview of Immune Response During SARS-CoV-2 Infection: Lessons From the Past. Front Immunol. 2020 Aug 7;11:1949. doi: 10.3389/fimmu.2020.01949. PMID: 32849654; PMCID: PMC7426442.
  3. Chen Z, John Wherry E. T cell responses in patients with COVID-19. Nat Rev Immunol. 2020;20(9):529-536. doi:10.1038/s41577-020-0402-6
  4. DiPiazza AT, Graham BS, Ruckwardt TJ. T cell immunity to SARS-CoV-2 following natural infection and vaccination [published online ahead of print, 2020 Oct 23]. Biochem Biophys Res Commun. 2020;538:211-217. doi:10.1016/j.bbrc.2020.10.060
  5. Cox RJ, Brokstad KA. Not just antibodies: B cells and T cells mediate immunity to COVID-19. Nat Rev Immunol. 2020;20(10):581-582. doi:10.1038/s41577-020-00436-4