ইনফার্টিলিটি ক্লিনিকের দারস্থ হবার আগে জেনে নিন কিছু বিশেষ তথ্য
নিউক্র্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদন, কলমে শুভ্রা অধিকারী এবং অনুবাদ ও অক্ষরদানে-মোনালিসা মহান্ত
একটি দম্পতির জীবনের সবচেয়ে সুখকর ও আনন্দদায়ক ব্যাপারটি হল সন্তানের জন্মদান, কিন্তু অনেক দম্পতিই এই আনন্দের থেকে বঞ্চিত। প্রতিটি দম্পতি স্বাভাবিক ভাবে সন্তানের জন্ম দিতে পারার মতো ভাগ্যবান হন না। যখন কোনো দম্পতি বহু চেষ্টা করেও গর্ভধারণের সুখ থেকে বঞ্চিত হন, তখন তারাঁ বিভিন্ন ইনফার্টিলিটি ক্লিনিকের দারস্থ হন । এই ক্লিনিকগুলির কাজ হল, দম্পতিরা যাতে স্বাভাবিক ভাবেই সন্তানধারণ করতে পারে সেইজন্য সাহায্য করা। প্রথমেই, তারা পুরুষ ও মহিলার একাধিক পরীক্ষা করতে দেন, যাতে ঠিক কী সমস্যার কারণে সন্তান আসছে না তাই নির্নয় করা যায়। তারপর, তারা প্রয়োজন অনুযায়ী, সাহায্যকারী প্রজনন প্রযুক্তিতে (ART) চিকিৎসার দ্বারা বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণ করার উপাযগুলি প্রয়োগ করার পরামর্শ দেন।
ইনফার্টিলিটি ক্লিনিকগুলো কিন্তু অনেক সময় অনেক কিছু অসাধু কাজকর্ম চালায় ।
নানান রকম টেস্ট করতে দেয়, যেগুলো হয়তো করবার কোনো প্রয়োজনই পড়ে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা টেস্ট গুলি এমন ল্যবরেটরি থেকে করা হয়েছে,যেগুলো যেগুলো নিম্নমানের ।
ইনফার্টিলিটি ক্লিনিকগুলিতে কি পরীক্ষা করা হয়?
সন্তান ধারণের জন্য ঠিক কী অসুবিধা আছে যা খুঁজে বের করতে পুরুষ ও মহিলার একাধিক পরীক্ষা করা হয়। ক্লিনিকগুলিতে করা হয় এমন কিছু জনপ্রিয় পরীক্ষা নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো।
পুরুষদের ক্ষেত্রে সাধারণত যে সমস্ত পরীক্ষা গুলি করা হয়:-
অ্যান্ড্রোলজিস্টরা পুরুষদের ক্ষেত্রে যে সমস্ত পরীক্ষা সাধারণভাবে করতে বলেন সেগুলো হলো বীর্য বিশ্লেষণ, হরমোন টেস্ট, জেনেটিক টেস্ট, টেস্টিকুলার বায়োপসি, ট্রান্সরেক্টাল বা স্ক্রোটাল আল্ট্রাসাউন্ড, ভ্যাসোগ্রাফি, এবং বোন মিনার্যাল ডেনসিটি স্ক্যান ইত্যাদি। এই পরীক্ষাগুলো শরীরের মধ্যে সেই সব অস্বাভাবিকতাগুলি নির্ধারণ করে, যা শুক্রাণুর ও ডিম্বাণুর নিষেকে বাধা সৃষ্টি করে।
মেয়েদের যে সমস্ত পরীক্ষা গুলি করা হয়:-
পুরুষদের অনুরূপ মহিলাদের জন্যেও নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করার প্রয়োজন হয়। এগুলি হল অভ্যুলেশন টেস্ট, হায়স্টারসালপোগ্রাফি (ফোরপোয়ারিয়ান টিউবে কোনো বাধা আছে কিনা এবং জরায়ুটি কী অবস্থায় আছে তার পরীক্ষা ), হরমোন টেস্ট, এবং হায়স্টার-সনোগ্রাফি ইত্যাদি। এই পরীক্ষাগুলো করে সঠিক সমস্যাটি খুঁজে বের করার পর চিকিৎসক প্রয়োজনমতো চিকিৎসা ব্যবস্থা করেন।
যেমন অভ্যুলেশন বাড়ানোর জন্য ঔষধ ব্যবহার করতে পরামর্শ দেন। আবার কাওকে ইন্ট্রাইউটেরাইন ইনসিমেনেশন (IUI) বা ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (IVF) করার পরামর্শ দেন।
ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনকারী সেন্টার গুলি সাধারণত যে সমস্ত অসৎ কাজ কর্ম গুলি করে থাকেন:-
চিকিৎসা পদ্ধতি মাত্রই কিছু না কিছু ঝুঁকি রয়েই যায়। কিন্ত যখন চিকিৎসক বা যেইখানে চিকিৎসা করাচ্ছেন সেখানে সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা সঠিকভাবে চিকিৎসা করেন না, বা যে পরিমাণ সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত সেই পরিমাণ সর্তকতা অবলম্বন করেন না, তখন তাদের গাফিলতির কারণে এই ঝুঁকি বহগুণে বেড়ে যায়। অনেক ইনফার্টিলিটি সেন্টারে কিন্তু মানুষজন এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন। এখান থেকে মারাত্মক ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে, কী কী ধরনের সমস্যা গুলি নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
অনুন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি ও চিকিৎসকের গাফিলতি:–
কখনও কখনও ডাক্তার বা সেন্টারের অন্যান্য সদস্যরা উদাসীনতা ও অবহেলার কারণে রোগীকে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। অনেক সময় রোগী জখম পর্যন্ত হতে পারেন। অনেক সময় দেখা যায় চিকিৎসকের গাফিলতির কারণে মহিলারা একটোপিক গর্ভাবস্থায় ভুগে থাকেন। এক্ষেত্রে হয় কী, ভ্রূণেটি জরায়ুর বা গর্ভাশয় এর মধ্যে প্রতিস্থাপন করার বদলে ভুল করে ফ্যালোপিয়ান টিউবের মধ্যে প্রতিস্থাপন করা হয়ে যায়।
অনেক সময় চিকিৎসকেরা ভ্রূণের কি সমস্যা আছে তা নির্ণয় করতে পারেন না এর ফলে বিকৃত বাচ্চার জন্ম হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে মহিলার মৃতসন্তান ও প্রসব করেন।
আবার কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় দম্পতিকে বাইরে থেকে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু নিতে হয়; সেই সমস্ত ক্ষেত্রে ডোনারের যে সমস্ত পরীক্ষাগুলি করবার প্রয়োজন হয় অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক ভাবে সেই সমস্ত পরীক্ষা গুলি করা হয় না।
ভ্রূন প্রতিস্থাপন করার সময় গন্ডগোল:-
IVF দিতে ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করার সময় যদি যথাযথ সর্তকতা অবলম্বন না করা হয় তাহলে এক দম্পতির ভ্রূণ আরেক দম্পতির গর্ভে প্রতিস্থাপন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। ভাবতে পারছেন কত বড় সমস্যা? যেখানে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে দম্পতিরা সন্তান লাভের চেষ্টা করছে, সেখানে এই ধরনের অসাবধানতার কারণে একটি পরিবার মানসিকভাবে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে, এমনকি একটি দম্পতির জীবন শেষ হয়ে যেতে পারে। তবে, এই ধরনের গন্ডগোল খুব কমই দেখা যায়। যে সমস্ত ফার্টিলাইজেশন সেন্টার গুলি যথাযথ তথ্য সংগ্রহ বা সতর্কতামূলক পদক্ষেপ সঠিকভাবে পালন করে না সেই সমস্ত সেন্টার গুলিতেই এই ধরনের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
গর্ভে একাধিক ভ্রূণের উপস্থিতি:-
আইভিএফ একাধিক ভ্রূণের উপস্থিতির মতো ঘটনা প্রায়ই দেখা যায়। ফার্টিলাইজেশন প্রক্রিয়া সফল করার জন্য ডাক্তাররা মায়ের জরায়ুতে একাধিক ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করেন। যা শেষমেশ, একক চক্রের মধ্যে একাধিক গর্ভধারণের দিকে পরিচালিত করে। পিতামাতাকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয় আরেকটি ভ্রূনকে রাখবেন না সেই সেটিকে নষ্ট করে দেবেন। যদি একজন চিকিৎসক প্রথম থেকেই সঠিক ভাবে তত্ত্বাবধান করেন ও যথাযথ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেন তাহলে একজন দম্পতিকে এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না।