প্লাজমা থেরাপি – আশার আলো দেখাতে পারে সঙ্কটজনক করোনা রোগীদের – এগিয়ে বাংলা ও কেরালা
নিউক্র্যাড হেলথ বাংলা এপ্রিল ১৫ , ২০২০
পৃথিবী ব্যপী কোরোনার আক্রমণে মনুষ্যজাতির জীবনচক্রের ইতিহাস সাক্ষী হয়ে থাকলো আরও এক মহামারীর। গোটা বিশ্বজুড়ে কোভিড 19 এর গ্রাসে ১,৯৯৯,০১৯ ছাড়িয়েছে সংক্রমণ মাত্রা, এবং মৃত ১২৬,৭০৮ এর বেশী। ভারতবর্ষেও ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর মাত্রা ফেলছে কোভিড 19; এ মুহুর্ত পর্যন্ত ১১,৪৮৭ এর বেশী মানুষের মধ্যে পাওয়া গেছে সংক্রমণ এবং মৃত প্রায় ৩৯৩ বেশী। বৈঞ্জানিক মহলেও দিন রাত চলছে গবেষণা, যদিও একটি ভ্যাকসিন আবিস্কারে সময় নিতে পারে আনুমানিক ১২ থেকে ১৮ মাস বা তারও বেশি; তবুও দিবারাত্র গবেষণা, লক্ষ একটাই, করোনা-যুদ্ধ মোকাবিলার একটি বিস্তত্ব উপায়, আর সেটা যত দ্রুত সম্ভব। প্রতিদিনই ক্রমাগত বেড়েই চলেছে কোরোনা আক্রমণের সংখ্যা, এবং প্রাণ হারাচ্ছে বহু মানুষ। এদিকে সঠিক ওষুধ এর নামও অজানা। এই মেঘ কুয়াশার মতো ধোঁয়াশায় একটু আশার আলো দেখা গেল “প্লাজমা থেরাপি”এর এক বিশেষ পরীক্ষায়। যা ইতিমধ্যেই, বহুদেশ কোভিড আক্রান্ত সংকটজনক অবস্থায় থাকা রুগীদের চিকিৎসায় করেছে শুরু। “ক্রমান্বয়ে স্বাস্থ্য পুনরূদ্ধাকারী প্লাজমা থেরাপির” ব্যবহার; অন্তত এ মুহুর্তে দাঁড়িয়ে কোরোনা-চিকিৎসার অন্যতম পথ বলে মনে করেছেন অভিজ্ঞ চিকিৎসকেরা। ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু অর্থ্যাৎ গত শতক ধরে ডাক্তারেরা এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করে আসছেন, সংকটপূর্ণ রোগীর চিকিৎসায়।
চিন প্রদেশের ১০ জন রূগীর মধ্যে করা একটি পরীক্ষার প্রতিবেদনে জানা গেছে, প্লাজমা থেরাপির ব্যবহারে রোগীর আরোগ্যের সময় কমেছে, রোগীর দেহে অক্সিজেনের মাত্রাও বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং রোগাক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে ক্রমে হ্রাস পেয়েছে ভাইরাসের বোঝা। হুয়ানের National Engineering Technology Research Centre for Combined Vaccines-এ, শাওমিয়াং জ্যাং-এর অভিব্যক্তিতে স্পষ্ট যে, এই চিকিৎসা পদ্ধতি তাদের দিয়েছে বাকরূদ্ধ করা ফলাফল [১]।
ফলপ্রসূ ফলাফলের নীরিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড ও ড্রাগের পরিচালকগোষ্টী (FDA) প্লাজমা থেরাপির পরীক্ষামূলক প্রয়োগকে অনুমোদিত করেছে বিনা দ্বিধায়। দক্ষিণ কোরিয়ার চিকিৎসক মন্ডলীও এই পদ্ধতিতে চিকিৎসাকে গুরুত্ব দিয়েছেন, ICU এর রোগীদের চিকিৎসায়। ভারতবর্ষের ICMR বা Indian Council for Medical Research দ্বারাও অনুমোদন পেয়েছে পরীক্ষামূলক এই চিকিৎসা পদ্ধতি। ভারতবর্ষের কেরালা রাজ্যে প্রথম এই চিকিৎসা পদ্ধতি বাস্তবায়িত হয় কোভিড আক্রান্ত এক রোগীর দেহে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার বেলিয়াঘাটা আইডি হাসপাতালের কোভিড -১৯ রোগীদের নিরাময়কৃত রোগীদের রক্তের অ্যান্টিবডি ব্যবহার করার জন্য ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরুর অনুমোদন দিয়েছে। Indian council of medical research (ICMR) “কনভ্ল্যাসেন্টস প্লাজমা” ব্যবহার করে প্যাসিভ টিকাদান থেরাপির অনুমোদনের জন্য একাধিক রাজ্যের কাছে যোগাযোগ করেছিল এবং বেঙ্গলই প্রথম রাজ্য যা অনুমোদন দিয়েছে। চার সপ্তাহের ব্যবধানের পরে কোভিড -১৯ সংক্রমণ থেকে সুস্থ্য হয়ে ওঠা রোগীদের কাছ থেকে রক্তের প্লাজমা নিয়ে গুরুতরভাবে অসুস্থ্য কোভিড -১৯ রোগীদের দেয়া হবে। বিজ্ঞানী ও ডাক্তারমহল এই থেরাপি নিয়ে খুব আশাবাদী । রক্তের প্লাজমার মধ্যে অ্যান্টিবডি রোগীদের কোভিড -১৯ সংক্রমণ এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে ।
ভাইরাল ইনফেকশন থেকে মুক্তি পাওয়া কোনো রোগীর দেহে একটি অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, যা পরবর্তীতে কোনো রোগের প্রতি অনাক্রমতা গঠনে সাহায্য করে। যদি আরোগ্যায়িত রোগীর দেহের প্লাজমা সংগ্রহ করে সেটিকে একটি সংকটজনক অবস্থাসম্পন্ন রোগীর দেহের ভিতর প্রদান করা যায়, তাহলে সেটি বাঁচাতে পারে তাদের জীবন। প্লাজমা গ্রহীতা রোগীদের শরীরের ইমিউন কোষ থেকে B-লিম্ফোসাইট নিঃসৃত হতে শুরু করে, যা SARS-CoV-2 ভাইরাসটিকে চিহ্নিত করে এবং তাকে অকার্যকর করে তোলে।
কোভিড 19 আক্রান্ত রোগীদের দেহের থেকে যে প্লাজমা উদ্ধার করা হয়, তা থেকে দু’একক মাত্রায় অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। যদিও গবেষণা বলছে যে, SARS-CoV-2 ভাইরাসটির বিপক্ষে লড়াইয়ের জন্য অ্যান্টিবডি তৈরির ক্ষেত্রে এক একক মাত্রাই যথেষ্ট [২,৩]।
আশার আলো থাকলেও এখনই সমস্ত কোভিড আক্রান্ত রূগীরা প্লাজমা থেরাপির জন্য উপযুক্ত নন, যেহেতু প্লাজমা উদ্ধার একটি সময় সাপেক্ষ চ্যালেঞ্জ এর পদ্ধতি। তাই এই পদ্ধতিটি ডাক্তাররা তাদের শরীরেই প্রয়োগ করতে পারবেন, যাদের শরীরে ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত সংকটপূর্ণ অবস্থার সাথে সাথেও নীচের লক্ষণ গুলির একটি বা দুটি উপস্থিত :
- রোগীর জীবন-আশঙ্কার সময় উপস্থিত হলে, যেমন নিশ্বাসের দুর্বলতা, মাল্টি অরগান ফেইল বা পচনশীল অভিঘাত হলে।
- শ্বাসযন্ত্রের কম্পাঙ্ক (respiratory frequency) প্রতি মিনিটে ৩০ বা তার বেশি হলে
- রক্তে অক্সিজেনের সম্পৃক্ততা ৯৩ শতাংশের কম বা সমান হলে।
- Lung infiltrate ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টায় ৫০ শতাংশ এর বেশী হয়ে গেলে [৪]।
প্লাজমা থেরাপির জন্য দাতা ও গ্রাহকের সদৃশতার জন্য কি করা হয় :
প্লাজমা পরিব্যাপ্তীর জন্য প্রথমে প্রযুক্তিবিদরা বাছাই করা দাতা ও গ্রহীতার ABO ও RhD সদৃশতা দেখেন।
প্রজননকালীন মহিলাদের ক্ষেত্রে; RhD নেগেটিভ গ্রহীতার জন্য, RhD নেগেটিভ শ্রেণীর রক্ত প্রযুক্ত হয় এবং অবশ্যই উপযুক্ত বয়সের নিরিখে। কিছু সময় গ্রহীতা ও রোগী দেহের রক্তের ABO গ্রুপ পরীক্ষার ফলাফল একই হয় না, সেক্ষেত্রে ডাক্তাররা নিম্নলিখিত পদ্ধতি ব্যবহার করেন :
- যদি রোগীর দেহের সমস্ত রক্তই শোধনের দরকার পরে, তাহলে স্বাহ্য পুনরুদ্ধারকারী, গ্রুপ O ব্যক্তির অ্যান্টি A ও অ্যান্টি B অল্প মাত্রায় ব্যবহার করা হয়।
- যদি শুধুমাত্র প্লাজমা পরিশোধনের দরকার হয়, তাহলে, ডাক্তারেরা centrifugation পদ্ধতিতে AB গ্রুপের স্বাহ্য পুনরুদ্ধারকারী ব্যক্তির প্লাজমা পৃথকীকরণ করে ব্যবহার করেন [৬]।
References:
১. The feasibility of convalescent plasma therapy in severe COVID-19 patients: a pilot study
২. Effectiveness of convalescent plasma therapy in severe COVID-19 patients
৩. Convalescent plasma as a potential therapy for COVID-19
৪. Recommendations for Investigational COVID-19 Convalescent Plasma
৫. Convalescent Plasma: A Therapy for COVID-19?
৬. Use of Convalescent Whole Blood or Plasma Collected from Patients Recovered from Ebola Virus Disease for Transfusion, as an Empirical Treatment during OutbreaksType a message…