মার্চ 28, 2024

COVID-19 ও ফুসফুসের সংক্রমণ – কিছু কথা

Reading Time: 3 minutes

নিউক্র্যাড হেলথ বাংলা এপ্রিল ১২, ২০২০

বর্তমান বিশ্বকে জোঁকের মতো চেপে ধরেছে কোভিড 19। গত ইংরাজী বছরের শেষের দিকে বেশ কতকগুলো নিউমোনিয়ার সংক্রমণ জনিত ঘটনায় ডাক্তারদের দ্বারা প্রথম চিহ্নিত হয়েছিল, করোনা ভাইরাস। তখন থেকেই এটা স্পষ্ট হয়, এটা একটি শ্বাসযন্ত্রের রোগ, যা সরাসরী আক্রান্ত করে ফুসফুসকে। হালকা থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে সংকটপূর্ণ হয় শ্বাসক্রিয়ার সমস‍্যা করোনার আঘাতে। বয়সজনিত কারণে বা অন‍্যকোনো সমস‍্যার সম্মুখীন হয়ে, যারা ইতিমধ্যেই ভুগছেন হৃদরোগ, ক‍্যান্সার বা ডায়াবেটিসে তাদের ক্ষেত্রে আর‌ও গুরুতর আকার নেই এর ভাইরাসের ক্ষতিকর লক্ষণ।

গবেষকদের মতে, SARS-CoV-2 এর মতোই করোনা ভাইরাস পরিবারের অন্তর্গত কোভিড 19-ও। ভাইরাসটি মনুষ‍্য শরীরে প্রবেশের পর এটি প্রথমেই শ্লেষ্মীক ঝিল্লীর সংস্পর্শে আসে যা নাক, মুখ ও চোখের অন্তর্গত। ভাইরাসটি তারপর তার জিনগত পদার্থটি (এক্ষেত্রে RNA) একটি সুস্থ কোষের মধ‍্যে ঢুকিয়ে দেয়, যা থেকে শুরু নতুন ভাইরাস তৈরির পদ্ধতি। দ্রুতগতিতে এটি সংখ‍্যায় বাড়তে থাকে, এবং নতুন ভাইরাসগুলি পার্শ্ববর্তী কোষগুলোকে ধীরে ধীরে সংক্রমিত করতে শুরু করে।
সহজ ভাবনায়, যদি ফুসফুস সহ শ্বাসনালীটিকে একটি উল্টানো গাছের ন‍্যায় ধরা যায়, তাহলে গাছের কান্ডটি হল শ্বাসনালী যা ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে শাখা প্রশাখায় বিভক্ত হয়েছে ফুসফুসের ভিতরে গিয়ে। প্রত‍্যেকটি শাখার প্রশাখার প্রান্তে থাকে একটি ছোটো থলি, যাকে বলে অ্যালভিওলাই। এখানেই মূলত, অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের আদান প্রদান ঘটে।

নতুন এই কোরোনা ভাইরাসটি শ্বাসনালী বা সমগ্র শ্বাসযন্ত্রের উপর ও নিম্ন ভাগ, দুটি অংশকেই সংক্রমিত করতে পারে। শ্বাসনালী পথে এটি ক্রমে ফুসফুসের দিকে যায়, এবং শ্বাসনালীতে চুলকানী ও জ্বলনের সৃষ্টি করে, যার ফলে গলা ব‍্যথা হয়। এবং বেশ কিছু ঘটনায় এটি অ্যালভিওলাই প‍র্যন্ত‌ও পৌঁছায়।

কোভিড 19 নিয়ে প্রতিদিনের গবেষণায়, ফুসফুসের সংক্রমণ সংক্রান্ত, নতুন নতুন তথ‍্য প্রতিদিনই আসছে বিঞ্জানীদের হাতে। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস অন‍্য দুই কোরোনা ভাইরাস জনিত রোগ অর্থ‍্যাৎ SARS এবং MERS এর মতোই, এক‌ই রকমের‌ই ক্ষতিকারক প্রভাব দেখা যায় কোভিড 19 এর সংক্রমণে।

সংক্রমণকে বিস্তারিত ভাবে বুঝতে আমরা সংক্রমণকে তিনটে পর্যায়ে ভাগ করতে পারি, পর্যায়গুলি নিম্নরূপ :

শ্বাসনালীতে সংক্রমণ শুরুর সাথে সাথেই দেহের ইমিউন সিস্টেম তার সাথে লড়াই-এ ঝাপিয়ে পড়ে। যার ফলে, ফুসফুস ও বায়ুনালী স্ফীত হয়ে যায়, এবং জ্বলন দেখা দায়। এটি প্রথমে ফুসফুসের একটি ছোটো অংশে শুরু হয় তারপর তা ছড়িয়ে পড়ে । এটিকে সর্বাপেক্ষা কম সংক্রমণ বা মধ‍্যবর্তী পর্যায়ের সংক্রমণ বলা যায়। কোরোনায় আক্রান্ত প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ মধ‍্যে এই ধরনের লক্ষণ দৃশ‍্যনীয়। এক্ষেত্রে মূলত, শুকনো কাশির সাথে, গলা ব‍্যথা অনুভব হয় তবে কিছু মানুষের মধ‍্যে ফুসফুসের অ্যালভিওলাই-এর জ্বলন ‌ও নিউমোনিয়া দেখা যায়। এই জ্বলন বুকের এক্স রে বা সি.টি.স্ক্যান মেশিনে পরীক্ষা করে নির্নয় ক‍রা হয়। বুকের সি.টি.স্ক্যান টি করবার সময় সে ছবি ডাক্তারেরা দেখতে পান, তা খানিকটা “একটা কুয়াশাচ্ছন্ন ধরাস্নানের (shower bath) কাচের দরজা”-র মতো হয়, ডাক্তারদের ভাষায় তারা এটিকে বলেন, “গ্রাউন্ড-গ্লাস ওপাসিটি“।

অতিরিক্ত স্ফীতি হলে, ফুসফুস দুটি তরলে ভর্তি হয়ে যায়, এবং ফুসফুসের দুই প্রকোষ্ট‌তেই বাজে রকমের সংক্রমণ দেখা যায়, কোভিড 19 আক্রান্ত প্রায় ১৪ শতাংশ মানুষের মধ‍্যে ফুসফুসের এই রকম সংক্রমণ দেখা যায়। এটিকে তীব্র পর্যায়ের সংক্রমণ বলা হয়। এক্ষেত্রে তীব্র রকমের নিউমোনিয়া দেখতে পাওয়া যায়। বায়ুথলিগুলি কফ, তরল দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে, যারফলে অক্সিজেন নিতে কষ্ট হয়। এবং শ্বাসকষ্ট দেখা যায় বা দ্রুত শ্বাস নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় রোগীর দেহে। দেহের অন‍্যান‍্য কোষগুলিও এই সংক্রমণের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত থাকে। এক্ষেত্রে বুকের সি.টি.স্ক‍্যানে ফুসফুসের উপর অস্পষ্ট কিছু গোল গোল অংশ দেখা যায়। পরবর্তীতে এগুলো একে অপরের সাথে জুড়ে যায়।

কোভিড 19 আক্রান্ত প্রায় ৫% রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায়, সংক্রমণ হেতু তাদের ফুসফুস এবং মধ‍্যেকার বায়ুথলীর খুব‌ই খারাপ অবস্থা, শরীরের অনাক্রমতা দরুণ এই করুণ অবস্থার সাথে লড়াইয়ে ফুসফুসে আর‌ও জ্বলন শুরু হয়, এবং তরল জমে যায়। ফলস্বরূপ, অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের আদানপ্রদান বিঘ্নিত হয়। যার ফলে রোগীর শরীরে তীব্র নিউমোনিয়া বা অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেশ সিন্ড্রোম (ARDS) দেখা যায়। স্বাভাবিক শ্বাসকার্য বজায় রাখতে রোগীকে ভেন্টিলেটরের সাহায‍্য দিতে হয়। এটি সংকটপূর্ণ পর্যায় ভুক্ত সংক্রমণ।

সুস্থ হ‌ওয়ার পর‌ও ঠিক কতটা নিস্তার পাওয়া যায় সংক্রমণ থেকে? গবেষণা বলছে কোভিড 19 এর কিছু জটিলতা, সুস্থতার‌ পর‌ও থেকেই যায় রোগীর শরীরে। কোভিড 19-এর ফলে ঘটিত নিউমোনিয়া থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর‌ও দুর্বলতা তখন‌ও রোগীকে গ্রাস করে থাকে, ফলে স্বাভাবিক হতে লেগে যায় অনেকখানি সময়। স্বাভাবিক যোগ ব‍্যায়ামেও শরীর সায় দেয় না। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে কাশি থেকে যায় অনেকটা সময়। কারুর কারুর ক্ষেত্রে ফুসফুসে ক্ষতচিহ্ন‌ও দেখা যায়। ডাক্তার মহলে প্রশ্ন তখন একটাই, রোগীর দেহে এইরূপ প্রভাব চিরস্থায়ী নাকি সময়ের সাথে ক্ষণস্থায়ী! চলছে গবেষণা। উত্তর ভবিষ্যৎগামী এবং তা আশাপূর্ণ হোক এই কামনা র‌ইল। তাই সুস্থ থাকতে চেষ্ঠা করুন এবং লকডাউনে বাড়িতে থাকুন।

House, Corona, Coronavirus, Virus