নভেম্বর 23, 2024

সিঙ্গাপুরে মাঙ্কিপক্সের জীবাণুর বয়ে আনলেন একজন নাইজেরিয়ান ব‍্যক্তি!

An image of the rash of monkeypox. Illustration purpose only. Source: Public Domain

Reading Time: 3 minutes

নিউক্র‍্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদন

সিঙ্গাপুরে 38 বছর বয়সী একজন নাইজেরিয়ান ব্যক্তির দেহে মাঙ্কিপক্স ধরা পড়ল।‌ চিকিৎসা জগতে প্রথম, 8ই মে এই ইনফেকশন নিশ্চিত করল মিনিস্ট্রি অফ হেলথ (MOH)। ঐ ব্যক্তি একটি ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করার জন্য সিঙ্গাপুরের লায়ন সিটিতে এসে উঠেছিলেন।

যাই হোক তার রোগ ধরা পড়ার সাথে সাথে তাকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইনফেকশিয়াস ডিজিজ কন্ট্রোলের যে আইসোলেশন রুম আছে সেখানে তাকে ভর্তি করে নেওয়া হয়। এখন তার শারীরিক অবস্থা ঠিকঠাক আছে। যদিও এই রোগের ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশ কম তবুও হেলথ অফিশিয়ালসরা কোন রকম কোন রিস্ক নেননি, তারা অর্কিড 81 হোটেলের যে রুমে এই নাইজেরিয়ান ব্যক্তিটি ছিলেন সেই রুমটি পুরোপুরি ভাবে ডিসইনফেক্টেড করেছেন। যে 22 মানুষ এই ব্যক্তির কাছাকাছি এসেছিলেন তারা যাতে দ্বারা আক্রান্ত না হয় তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তথ্যসূত্র অনুযায়ী জানা গেছে যে এই নাইজেরিয়ান আগন্তুক নাইজেরিয়া ডেল্টা নামক শহরে কাজের সূত্রে থাকেন। তিনি সিঙ্গাপুর আসার আগে নাইজেরিয়ার ইবোনাই নামক রাজ‍্যের একটি গ্রামে একটি বিয়েবাড়িতে গিয়েছিলেন। এই বিয়ের আসরে তিনি ওখানের ‘বাশ মিট’ (খাদ্য হিসাবে আফ্রিকানরা বিভিন্ন বন্য প্রাণী মাংস থেকে এই ডিশ‌ বানান) নামক কিছু ডিশ খান, মনে করা হচ্ছে সেই খাবার থেকেই এই ইনফেকশনের উৎপত্তি।

মাঙ্কিপক্স কি?
মাঙ্কিপক্স হল মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের একটি গুরুতর সংক্রমণ। এই ভাইরাসটি পক্সভিরিডি ফ‍্যামিলির আর্থোপক্সভাইরাস নামক জেনাসের অন্তর্গত ভাইরাস। এটি ভাইরাসটিও স্মলপক্স এবং কাউপক্সের জন্য যেই ফ্যামিলির ভাইরাস দায়ী সেই ফ্যামিলির অন্তর্গত। এই মারাত্মক ভাইরাসগুলির দুটি নির্দিষ্ট জেনেটিক গোষ্ঠী রয়েছে- মধ্য আফ্রিকান ও পশ্চিম আফ্রিকান মাঙ্কি-ভাইরাস। প্রথম গ্রুপটির দ্বারা সৃষ্ট উপসর্গগুলি পরবর্তীটির তুলনায় আরও গুরুতর, এছাড়া মধ্য আফ্রিকান মাঙ্কিপক্স ভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। 1958 সালে এই রোগটি সম্পর্কে সর্বপ্রথম জানা যায় যখন গবেষণার কার্যক্রমের জন্য কিছু বানর এনে পরীক্ষাগারে রাখা হয়, এবং সেখানে মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে পড়ে।
তখন থেকে এই পক্সের নাম ‘মাঙ্কিপক্স’।

মাঙ্কিপক্স ইনফেকশনের ঘটনা প্রথম কখন মানুষের মধ্যে দেখা যায়?
1970 সালে কঙ্গোর ডেমোক্রেটিক রিপাবলিকে, সর্বপ্রথম মানবদেহে এই ভাইরাসের সংক্রমণ রেকর্ড করা হয়েছিল। পরে কেন্দ্রীয় ও পশ্চিমা আফ্রিকান দেশগুলিতে মানুষের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হবার বেশকয়েকটি ঘটনা ঘটে। যাইহোক, 2003 সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের 47 জনের দেহে এই সংক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছিল এবং US এ 3 জন আক্রান্ত হয়। তারপরে, 2018 সালে ইসরাইলে একজনের দেহে এই সংক্রমণ নিশ্চিত করা হয়েছিল। যদিও প্রাণীদের থেকে মানুষের দেহে এই ভাইরাস ট্রান্সমিশনের সঠিক পদ্ধতি এখনও বিজ্ঞানীদের কাছে স্পষ্ট নয়, তবুও সাম্প্রতিক গবেষণায় আফ্রিকান রেন্ডার প্রজাতির এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এই রোগের লক্ষণগুলি কী কী?
মাঙ্কিপক্স যে হয়েছে সেই সমস্ত লক্ষণ এর বহিঃপ্রকাশ মোটামুটি এই ভাইরাস সংক্রামণের 5 থেকে 21 দিনের মধ্যে প্রকাশিত হয়। এই বহিঃপ্রকাশের ধরন অনুযায়ী এটিকে দুটি স্তরে ভাগ করা যায়।
প্রথম 0-5 থেকে দিনের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের লক্ষনের বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে যেমন- জ্বর, মাথা যন্ত্রণা,ব্যাক পেইন মাসল স্টিফ হয়ে যাওয়া বমি বমি ভাব ইত্যাদি।

মাঙ্কিপক্সের দ্বিতীয় পর্যায়টি ইরাপশন ফেজ হিসাবে পরিচিত, যা জ্বরের 1-3 দিন পরে ঘটে। চিকেনপক্সের মতোই মুখ, হাত, এবং পায়ের তলগুলি সহ সমস্ত শরীর জুড়ে জলভরা ফুসকুড়ি ওঠে। সংক্রমণ সম্পূর্ণ প্রতিকারের জন্য সাধারণত তিন সপ্তাহ সময় লাগে। রোগীদের অবিলম্বে চিকিৎসা না করালে মৃত্যুর হার বৃদ্ধির পরিমাণ অনেক বেশি হয়।

কীভাবে মানুষ এর দ্বারা সংক্রমিত হয়?
কোনো প্রাণীর কামড় বা সংক্রমিত প্রাণীদের দেহ তরল মাধ্যমে সরাসরি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সংক্রামন হয়েছে এমন মানুষের সংস্পর্শে এলে সংক্রামিত মানুষের থেকে সুস্থ ব‍্যক্তির দেহে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। এছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যক্তিগত জিনিসপত্র, শয়নকক্ষ, পাত্র এবং জামাকাপড় থেকেও ছড়িয়ে পড়ে।

এই সংক্রমণ আপনি প্রতিরোধ কীভাবে করবেন?
এখনো অব্ধি এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো রকমের টিকা আবিষ্কার হয়নি, এই জন্য ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন:-
এটি প্রতিরোধ করার একমাত্র উপায় এখন হল সাবধানে থাকা। যদি কোন ব্যক্তি কোন কারণে সংক্রামিত হয়ে পড়ে তাহলে, তার কোন জিনিস ব্যবহার না করা, তার কাছাকাছি না আসা, তাকে এমন ভাবে রাখা যাতে কোনোভাবেই এটা ছড়িয়ে না পড়ে। এছাড়াও যে সমস্ত প্রায় বা পশুর কামড়ের ফলে বা মাংস খাওয়ার ফলে এই রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে, সেগুলোকে এড়িয়ে চলা।
আবার যে সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা এই ধরনের রোগীদের চিকিৎসা করছেন তারা অবশ্যই চিকিৎসা করার সময় যথাযথ প্রটেকশন নেবেন অ‍্যাপ্রন, গ্লাভস, মাস্ক, টুপি ইত্যাদি। এছাড়াও, যখন মাংস খাওয়া হবে তা যে কোনো প্রাণীর মাংসই হোক, সেটাকে খুব ভালো করে সিদ্ধ করে তবেই খেতে হবে।

এছাড়া এই মুহূর্তে মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধ করার কোন উপায় আমাদের কাছে নেই, তাই সাবধানতা অবলম্বন করাই আমাদের একমাত্র উপায়।

যাইহোক সর্বোপরি মূল কথা হলো মাঙ্কিপক্স কিন্তু চিকেন পক্স এর মত অতটা ও বেশি সংক্রামক নয়। তাই যদি কখনো আপনার আশেপাশের কোন মানুষের দেহে এর কোন ধরনের বহিঃপ্রকাশ ঘটে, তাহলে কোন ধরনের প্যানিক ছড়াবেন না তার বদলে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যান চিকিৎসা করান সুস্থ থাকুন।