আল্ট্রাসাউন্ড নয় এবার থেকে রক্ত পরীক্ষা করেই গর্ভকালীন দীর্ঘতা পরিমাপ করা সম্ভব হবে
কলমে-পরমানন্দ বর্মন। অনুবাদ ও অক্ষরদানে-মোনালিসা মহান্ত। নিউক্র্যাড হেলথ বাংলার প্রতিবেদন মার্চ 31, 2019
মানুষের সাধারণ ভাবে সুস্থ গর্ভাবস্থা প্রায় 40 সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তবে পৃথিবীর প্রায় 15 মিলিয়ন শিশুই, 37 সপ্তাহের আগে জন্মগ্রহণ করে। সময়ের আগেই যে সমস্ত শিশু জন্মগ্রহণ করে তাদের মধ্যে প্রায় এক মিলিয়ন শিশুর মৃত্যু হয়। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ আগে জন্ম।
ভারতে প্রায় 3.5 মিলিয়ন শিশুই নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম নেয়। গর্ভাবস্থায় শিশুর বিকাশ নির্ধারক উন্নত আল্ট্রাসাউন্ড ডিভাইসগুলির অভাবের কারণে, অনেক সময়ই নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম নেওয়া ব্যাপারটি বা যে সমস্ত সমস্যার কারণে এরকম হয় তা নির্ণয় ও প্রতিরোধ করা সম্ভব হয় না।
বর্তমানে কানাডা,বাংলাদেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা গর্ভবস্থার দীর্ঘতা নির্নয় করতে সহজ, অল্প-ব্যায়ের রক্ত পরীক্ষা পদ্ধতির হদিশ দিয়েছেন। গবেষণাবিদরা বলছেন, আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া দেশগুলির ক্ষেত্রে, এই পদ্ধতি ভীষণ ভাবে সাহায্য করতে পারে। বাংলাদেশের নবজাতকদের উপর করা সমীক্ষা গুলি সফল হয়েছে। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এই সমীক্ষার সমস্ত ব্যায়ভার বহন করেছে। এই গবেষণাযটি সম্প্রতি, ই-লাইফ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
একটি নবজাতক শিশু তার মায়ের গর্ভে কতদিন বেড়ে উঠছে তার উপর ভিত্তি করে নবজাতকের রক্তে অনেক রাসায়নিক এবং বিপাকীয় পদার্থ উপস্থিত থাকে। বর্তমান গবেষণায় গবেষকরা এই রাসায়নিকগুলির উপস্থিত থেকে গর্ভস্থ ভ্রূণের বয়স নির্ধারণ করার একটি গাণিতিক সূত্র তৈরী করেছেন। কানাডার প্রাথমিক প্রয়াসের পর, তারা বাংলাদেশের, মাতলব নামের একটি গ্রামীণ এলাকা থেকে 1069 জন নবজাতকের রক্তের নমুনা ব্যবহার করে বয়স নির্ধারণ করার চেষ্টা করেছিলেন। তারা গবেষণার জন্য 1036টি শিশুর অ্যাম্বিলিকাল কর্ড এবং 487 জনের হিল প্রিক্স থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। তারা রক্ত পরীক্ষা থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই করার জন্য মায়েদের আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যানের রিপোর্ট সংগ্রহ করে তার সাথে তুলনা করেন।
গবেষকরা দেখেছেন যে তাদের প্রস্তাবিত পদ্ধতিটি আল্ট্রাসাউন্ডের মতোই, গর্ভাবস্থার দীর্ঘতা সঠিকভাবে অনুমান করতে পারে। যদিও উভয় হিল প্রিক্স এবং অ্যাম্বিলিকাল কর্ড, দুই থেকে সংগৃহীত রক্তের নমুনাগুলিই সঠিক ফলাফল দেয়, তবুও হিল প্রিক্স নমুনার থেকে প্রাপ্ত আরো বেশি নির্ভুল।
গবেষকরা এই পর্যবেক্ষণটিকে হিল প্রিক নমুনার উপর ভিত্তি করে গড়ে তোলেন এবং প্রকাশ করেন। যদিও মাতাপিতারা চান যে তাদের অ্যাম্বিলিকাল কর্ড থেকে রক্ত দিয়ে পরীক্ষা করতে পছন্দ করেন, কারণ তারা তাদের বাচ্চাদের উপর হিল প্রিক্ট করতে চায় না।
গবেষণার সীমাবদ্ধতাগুলির মধ্যে একটি ছিল যে সমস্ত সময়ের অনেক আগেই জন্মগ্রহণ করেছেন তাদের বাবা মায়েরা অতটুকু বাচ্চার দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে দিতে চান নি, কারণ তারা জানে তাদের অতটুকু বাচ্চার কোনো রকম কোনো কষ্ট হোক। ফলে, এই গবেষণার জন্য বেশিরভাগ রক্তের নমুনা সঠিক সময়ে জন্মগ্রহণ করা শিশুর দেহ থেকে এসেছে। নির্দিষ্ট সময়ের আগে, অর্থাৎ 24- 32 সপ্তাহের আগে জন্ম নেয়া বাচ্চাদের রক্তের খুব কম ছিল এবং সময়ের অনেক আগে, অর্থাৎ 28 সপ্তাহ আগে জন্ম নেওয়া শিশুদের থেকে প্রাপ্ত রক্তের নমুনা আরো কম ছিল।যা, তাদের কাজ কতটা সফল হয়েছে তা যাচাই করার ক্ষেত্রে একটি বাধার সৃষ্টি করেছে।
ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলিতে শিশুর জন্মের সময় নির্ণয় করার জন্য এই ধরনের সল্প-ব্যয়ের পরীক্ষা পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকরী। এ সমস্ত দেশ গুলিতে শিশুর জন্মের সময় নির্ধারণ করার জন্য আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান করার সুযোগ কিন্তু অনেক সীমিত। সঠিকভাবে গর্ভাবস্থার বয়স অনুমান, সময়ের আগে শিশুর জন্মদান রোখবার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এতে শিশুর মৃত্যু অনেক কম করা যাবে।