ক্রমশ বাড়ছে কিশোর কিশোরীদের সংখ্যা, সাথেই বিভিন্ন সামাজিক সমস্যাও
নিউক্র্যাড হেলথ বাংলার ছোট্ট প্রয়াস। অনুবাদে-মোনালিসা মহান্ত
এই মুহূর্তে সারা বিশ্বজুড়ে 10 থেকে 24 বছরের মধ্যে বেশি কিশোর-কিশোরী সংখ্যা সব থেকে বেশি, যা এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে ইতিহাসে রেকর্ড। 1.8 বিলিয়ন শিশুর মধ্যে তিনভাগ অর্থাৎ প্রায় 618 মিলিয়ন ভারতবর্ষ এবং চিনের অধিবাসী। এই বিপুল সংখ্যক কিশোর কিশোরীদের জন্য কিশোর-কিশোরীরাই আমাদেযর ভবিষ্যতের নাগরিক। আমরা কী এদের জন্য যথাযথ সুযোগ-সুবিধা, লালন পালন ও যত্ন নেয়ার ব্যবস্থা করেছি? তাদের প্রয়োজন পূরণের যথাযোগ্য ব্যবস্থা? নাহ্, কিশোর স্বাস্থ্য ও সুস্থতার ওপর বিশ্বব্যাপী এক সমীক্ষায় এমন তথ্যই পাওয়া গেছে। এই সমীক্ষার ফলাফল দ্য ল্যান্সেট নামের একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণায় “বিশ্বব্যাপী কিশোর স্বাস্থ্যের ব্যাপক পরিবর্তনের উপর হওয়া একটি সুসংহত সমীক্ষা, যা 195 টি দেশ ও অঞ্চলের উন্নয়নের স্বার্থে ব্যবহার করা হবে”। অস্ট্রেলিয়ান গবেষকরা এই সমীক্ষাটি করেন। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এই সমীক্ষার সমস্ত ভার বহন করেছে।
গবেষণায় বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন রোগাক্রান্তদের উপর যে তথ্য তৈরী হয় তা ব্যবহার করে এবং 1990 থেক 2016 সাল পর্যন্ত, 195টি দেশের কিশোর স্বাস্থ্যের ওপর সমীক্ষা চালায়। তাঁরা 1২ টি সূচক নিয়ে তার উপর গবেষণা চালান। এই সূচকগুলি মূলত ছিল- ধূমপান, স্থূলতা এবং সমাজের অন্যান্য বিষয় যেমন, বাল্য বিবাহ এবং প্রথমিক শিক্ষার হার ইত্যাদি। গবেষণায় দেখা গেছে যে বিশ্বের বেশিরভাগ কিশোর-কিশোরী, এমন দেশগুলিতে বসবাস করে, সেখানে রোগের, হিংসা ও বৈষম্যের প্রভাব খুব বেশি।
বিপজ্জনক ফলাফলগুলির মধ্যে একটি ছিল ভারতে কিশোরী মেয়েদের 54% রক্তাল্পতায় আক্রান্ত। যা বিশ্বব্যাপী গড়ে রক্তাল্পতায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ। বিশ্বব্যাপী, প্রতি চারজন কিশোর মধ্যে একজন রক্তাল্পতায় আক্রান্ত, এই হার 1990 সাল থেকে আরো ২0% বৃদ্ধি পেয়েছে। যার প্রায় 45%, বা 194 মিলিয়ন, ভারত ও চীনের কিশোর-কিশোরী। বাকি মেয়েদের অর্ধেকেরও বেশি ছিল ভুটান, ইয়েমেন ও বুর্কিনা ফাসো দেশের বাসিন্দা। তামাকের ব্যবহার, মদ্যপান, মাদক দ্রব্যের ব্যবহার ছাড়াও ভারত 1990 থেকে ২013 সাল পর্যন্ত ধূমপায়ীর সংখ্যা ক্রমশ বেড়েছে। মেয়েদের মধ্যে ধূমপান করার প্রবণতা বার্ষিক 5% হারে বেড়েছে; যেখানে বালকদের মধ্যে এই বৃদ্ধির হার 0.4%। অন্যদিকে, মদ্যপানের প্রাদুর্ভাব তুলনামূলক ভাবে কম মেয়েদের জন্য 1% এবং ছেলেদের 3%। “ভারতে মদ্যপানের প্রবৃত্তি 1990-2016 এর মধ্যে খুব একটা পরিবর্তিত হয়নি। কিশোর-কিশোরী মিলিয়ে মদ্যপানের অভ্যাস এতগুলো বছরে 1% এর থেকেও কম বৃদ্ধি পেয়েছে।”
ভারতে এবং চীনের কিশোরদের জন্য আরেকটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা হল স্থূলতা। উভয় দেশেই ওজন বৃদ্ধির প্রাদুর্ভাবের ছেলেদের মধ্যে বার্ষিক 6.2% হারে বেড়ছে। মেয়েদের ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধিমাত্রা চীনে 4.8% এবং ভারতে 8.5%। যা ইঙ্গিত দেয় যে ভারতে স্থূলত্ব বৃদ্ধি, কিশোরী মেয়েদের একটি উদ্বেগের বিষয়।
মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষা সমাপ্তির হার ও উল্লেখযোগ্য ছিল, বিশেষত মেয়েদের মধ্যে। এমনকি, বিশ্বের সমগ্র কিশোর-কিশোরী মধ্যে অর্ধেকেরও কম জনের মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। ভারতে 3.5% ছেলেরা শিক্ষার অভাবে জন্য কর্মসংস্থান বা প্রশিক্ষণ নিতে পায়নি। যেখানে মেয়েদের মধ্যে এই হার 53.3%।
চীন 1990 সাল থেকে কৈশোর জনসংখ্যার 20% হ্রাস ঘটিয়েছে। আজকেও একমাত্র দুঃখের বিষয় ধূমপান, মদ্যপান, ওজন ও স্থূলতা বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলো। অন্যদিকে, ভারতের কিশোর সংখ্যা 40% বৃদ্ধি পায়, সাথে দ্রুত ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য ঝুঁকি, সামাজিক সমস্যা, বিভিন্ন রোগ এবং লিঙ্গ বৈষম্যমূলক সমস্যাগুলি তো রয়েছেই।