সর্পাঘাত! একটি অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যা!প্রতিবছর আক্রান্তের সংখ্যা 24 লক্ষ! মৃত 50000!!
কলমে-দিনেশ শর্মা; অনুবাদে-মোনালিসা মহান্ত; নিউক্র্যাড হেলথ ডেস্ক মার্চ 8, 2019
কয়েক দশক আগেও ভারতকে সাপের যাদুকর দেশ আখ্যা দেওয়া হতো, কিন্তু খুব কম জনই এর অন্ধকার দিকটার সম্পর্কে অবগত। প্রতিবছর প্রায় ২8 লাখ ভারতীয় শুধু সাপের কামড়েই আক্রান্ত হয় এবং প্রায় 50,000 জন ভারতীয় প্রতি বছর মারা যায়। তবুও এই সমস্যাটি আমাদের সমাজে এখনও অবহেলিতই রয়ে গেছে।
স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এই বিঘ্ন প্রতিরোধে, পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি যদি বিষাক্ত সাপের কামড়ে আক্রান্তদের চিকিৎসা করার সুবিধাগুলির উন্নতিতে পদক্ষেপ নেয়, তবে এই অযাচিত মৃত্যুর থাবা এড়ানো যেতে পারে। ম্যালেরিয়া এবং টিউবারকিউলোসিসের মতো অন্যান্য জনস্বাস্থ্য সমস্যাগুলির জন্য যেমন সার্বিক প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে, সাপের কামড়ে আক্রান্ত নিয়েও এই ধরনের প্রকল্প প্রয়োজন।
গ্রামীণ এলাকায় স্বাস্থ্য প্রকল্পগুলো খুবই অনুন্নত মানের, এর ফলেই সাপে আক্রান্তরা সঠিক চিকিৎসা পায় না। প্রথমত, সঠিক পরিবহনব্যবস্থার অভাবের কারণে মানুষ সঠিক সময়ে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র বা হাসপাতালে গিয়ে পৌঁছাতে পারে না। দ্বিতীয়ত, অনেক সময় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সঠিক সময়ে গিয়ে পৌঁছালেও, স্বাস্থ্যসেবা কর্মকর্তাদের ‘স্নেকবাইট ম্যানেজমেন্টের’ অপর্যাপ্ত জ্ঞান এবং কার্যকরী অ্যান্টিভেনমের অভাবে সেই মৃত্যুই ঘনিয়ে আসে। এমনই তথ্য তুলে এনেছে একটি মেডিকেল জার্নাল, BMJ।
বৈঠকের ফলাফল উপস্থাপনকালে, গবেষক দলেরই এক সদস্য ডাঃ রবিকার রালফ বলেছেন –“বেশিরভাগ সর্পাঘাতে আক্রান্ত ব্যক্তিই স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যাওয়ার বদলে, প্রথমেই ওঝা, ঠাকুর দেবতা ইত্যাদির কাছে ঝাড়ফুঁক করতে নিয়ে চলে যায়। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের অ্যান্টিভেনম্ গুলির নিম্নমান তো আরেকটি সমস্যা।” ডাঃ রালফ হলেন ভেলোরের ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজের এক চিকিৎসক।
ভারতে শুধুমাত্র চারটি প্রধান সাপ প্রজাতির বিরুদ্ধেই অ্যান্টিভেনম তৈরী করা হয়। কিন্তু এই অ্যান্টিভেনমগুলি, অন্যান্য অঞ্চলের সর্পপ্রজাতির ক্ষেত্রে কার্যকর নয়। এটিও দেখা গেছে যে, চারটি প্রধান প্রজাতির মধ্যে আন্তঃপ্রজাতি গত বৈচিত্র্য রয়েছে। উপরন্তু, অ্যান্টিভেনমগুলির নিষ্ক্রিয়করন কার্যকারিতা এবং ক্লিনিক্যাল কার্যকারিতা পরিবর্তিত হয়। তরল অ্যান্টিভেনমের গুণগত মান অনেক সময় পরিবর্তিত হয়ে যায়। এগুলো সবসময় 2°- 8°C এর মধ্যে সংরক্ষণ করা উচিত। বেশিরভাগ জায়গাতেই গ্রামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে সঠিক সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে নিয়ে যাওয়ার সময় পরিবহনকালে এই তাপমাত্রার মধ্যে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না।
দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন লক্ষ্য কাঠামোর অধীনে অবহেলিত গ্রীষ্মমন্ডলীয় রোগমুক্তি (NTD) ঘটনোর জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, এরা সর্পাঘাতে আক্রান্ত হয়ে হওয়ার এই সমস্যাটিকে লক্ষ্য করেছে।
এই অবহেলিত জনস্বাস্থ্য সমস্যাই গবেষণার সুযোগ হয়ে উঠতে পারে বলে, জানানো হয়েছে।
মেডিক্যাল জার্নালটির একটি বিশেষ সংখ্যায় বিভিন্ন উপেক্ষিত রোগুলি তুলে ধরা হয়েছে, যেমন গোদ, স্ফীত প্লীহা, কালাজ্বর, নবজাতকের মৃত্যু এবং বিভিন্ন ঔষধে প্রতিরোধী সৃষ্টিকারী অভ্যন্তরীণ জ্বর ইত্যাদি। এটি ড্রাগস ফর ও নেগেলেক্টড ডিজিজেস উদ্যোগ (DNDi) দ্বারা সমর্থিত ছিল।
“এটি দক্ষিণ এশিয়ার অবহেলিত রোগগুলির নিয়ন্ত্রণ ও অপসারণের জন্য প্রয়োজনীয় জনস্বাস্থ্য কর্মসূচিগুলির উল্লেখযোগ্য সাফল্য তুলে ধরে। সাথেই এই কর্মসূচি বা পরিকল্পনাগুলি রক্ষার জন্য যে সব গবেষণা ও সহায়তা নীতির প্রয়োজন হয় সেগুলি চিহ্নিত করে,” বললেন ভারতের DNDi এর প্রধান, সুমন রিজাল।
এই গবেষণা দলের সাথে যারা যুক্ত ছিলেন তারা হল রবিকার রালফ (CMC, ভেলোর); সঞ্জীব কুমার শর্মা (বি পি কৈরালা ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্সেস, কাঠমান্ডু); মোহাম্মদ আবুল ফয়েজ (দেব্ কেয়ার ফাউন্ডেশন, ঢাকা); ইসাবেলা রিবেরো এবং সুমন রিজাল (DNDi); ফ্রাঙ্কোস চ্যাপুইস (জেনেভা ইউনিভার্সিটি হসপিটালস) এবং উলরিচ কুচ (গোয়েথ ইউনিভার্সিটি, জার্মান)।