গমের রোগ সৃষ্টিকারী ছত্রাকের জিন গঠনকারী প্রোটিনের খোঁজ পেলেন ভারতীয় বিজ্ঞানীদল! আশার আলো দেখছেন গম চাষিরা
কলমে- সুন্দররাজন পদ্মনাভন, অনুবাদে- মোনালিসা মহান্ত ফেব্রুয়ারী 26, 2019
বহু গবেষনার পর অবশেষে ভারতীয় গবেষকরা বুঝতে পেরেছেন, কিভাবে গমের “কর্ণাল বান্ট” রোগ সৃষ্টিকারী ‘তিল্লেটিয়া ইন্ডিকা’ নামের ছত্রাকটি ছড়িয়ে পড়ে। অতঃপর কৃষকদের এই সমস্যার হাত থেকে মুক্তির সম্ভাব্য সমাধান খুঁজে বের করতে পারবেন বলেই আশা রাখছেন তেনারা।
জি.বি.পান্ত কৃষি ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পান্তনগর) ও রানী লক্ষ্মী বাই সেন্ট্রাল এগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটির (ঝাঁসি) গবেষকরা; ফসলের নষ্টকারী এই ছত্রাকের জিন গঠনকারী বেশ কিছু প্রোটিনকে চিহ্নিত করেছেন। “কর্ণাল বান্ট নামটি এসেছে কর্নাল নামক একটি জায়গার (ভারতে অবস্থিত) নাম থেকে। 1931 সালে সর্বপ্রথম এই রোগটি কথা জানা যায়। তবে এই রোগটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা, নেপাল, ইরাক, ইরান, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানেও দেখা যায়। তিল্লেটিয়া ইন্ডিকা শুধুমাত্র ফলনের পরিমাণই হ্রাস করে না। শস্যের গুণমানকেও কমিয়ে দেয়, আর ফসলের দানায় অত্যন্ত কটূ গন্ধ এবং স্বাদ তৈরী করে। যা মানুষের ব্যবহারের জন্য অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। বর্তমানে, এই রোগে আক্রান্ত গমে ফেনসিডাইডস স্প্রে করে নিয়ন্ত্রণ করা হয় কিন্তু ফলাফল খুব একটা কার্যকর নয়।
রোগ প্রতিরোধী গমচাষির সংখ্যা বাড়ানোর জন্য, আমাদের সবার প্রথম ভালো করে বুঝতে হবে ছত্রাকটি রোগ সৃষ্টির সময় গমের সাথে বা গম গাছের সাথে কী ধরনের আণবিক বন্ধন তৈরি করে। উচ্চ থেরাপিউট প্রোটোমিক এবং জিনোমিক বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করে, গবেষকরা মোট 44 টি প্রোটিন সনাক্ত করেছেন যা রোগের বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। এই ছত্রাকটি আশ্রয়দানকারী ফসলের অনাক্রম্যতা তন্ত্রটিকে দূর্বল বা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়, এছাড়াও উদ্ভিদ কোষের কোষপ্রাচীর কেও নষ্ট করে দেয়।
ফসলের সাথে ছত্রাকটির সংযুক্তিকরণ এর সময়, যখন গমগাছটি কি ছত্রাক থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ডিটক্সিফিকেশন পদ্ধতি গ্রহণ করে তখন বেশ কিছু বিক্রিয়াকারী অক্সিজেন অনু উৎপন্ন হয়।
সনাক্ত করা প্রোটিনগুলির মধ্যে একটি হল ম্যালেট ডিহাইড্রোজেনেজ। এটি অক্সালো-অ্যসিসেটেট উৎপাদন করে, যা থেকে অক্সালিক অ্যাসিড তৈরি হয়। এই অক্সালো-অ্যসিসেটেট, তিল্লেটিয়া ইন্ডিকার মত ফাইটোপ্যাথোজেনিক ছত্রাকের রোগ সৃষ্টিকারী ক্ষমতার একটি মূল উপাদান। এই গবেষণার নেতৃত্ব প্রদানকারী ডক্টর অনিল কুমার জানিয়েছেন- তাঁদের গবেষণা রোগ সৃষ্টিকারী ছত্রাকের সম্পর্কের আনবিক দৃষ্টিভঙ্গি দেবে।যা আণবিক অনুসন্ধানের মাধ্যমে এই ধরনের ছত্রাক ঘটিত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কার্যকরী পথ খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।
গবেষণায় যুক্ত আরো কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি হলেন বিশাখা পান্ডে, দীনেশ পান্ডে, মনোজ সিং এবং অতুল গুপ্ত। এই গবেষণার ফলাফল একটি বৈজ্ঞানিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।