স্কুলে পাঠরত শিশুদের বিষন্নতায় আক্রান্ত হবার ঘটনা বাড়ছে – আমাদের সেই দিকে নজর দরকার
মোনালিসা মোহান্ত । নিউক্র্যাড হেলথ I
আজকাল, আপনি খেয়াল করলেই দেখবেন অনেক বাচ্চা বিনা কারণে বা খুব সহজেই অন্ত্যন্ত বিরক্ত বা ক্ষিপ্র হয়ে উঠেছে। শিশুদের এই সংবেদনশীলতার পিছনে অন্তর্নিহিত কারণ গুরুতর ব্যাপার তো বটেই, এমনকি ভীতিজনক।
সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি 6 জন শিশুর মধ্যে 1 টি মানসিক, আচরণগত, বা বিকাশীয় ব্যাধিতে আক্রান্ত। এই পরিস্থিতি ভারত ও অন্যান্য দেশেও অনুরূপ। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (WHO) জানিয়েছে 13 থেকে 15 বছর বয়সী 4 টি বাচ্চার মধ্যে 1টি বাচ্চা মানসিক বিষন্নতায় (ডিপ্রেশন) ভোগে। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় প্রায় 86 মিলিয়ন শিশু তাদের কিশোর বয়সে আচরণগত সমস্যায় আক্রান্ত।
হিংস্রতা ও সশস্ত্র সংঘাত শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যকে কতটা প্রভাবিত করে?
সিরিয়া, বসনিয়া, ইসরায়েল, প্যালেস্তাইন, ইরাক ও রুয়ান্ডার মতো যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোতে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। যখন শিশুরা হিংস্র পরিবেশে বড় হয়ে থাকে তখনসেই শিশুরা জীবনে এগুলো দীর্ঘমেয়াদী ছাপ বা প্রভাব ফেলে যায়। একটি গবেষণামূলক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে প্যালেস্তাইন এর 23 – 70 শতাংশ শিশুর পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে (PTSD) আক্রান্ত। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী অন্যান্য জায়গায় এই হার ও হতাশাজনক; রুয়ান্ডয় 54 – 62 শতাংশ; ইরাকে 10 – 30 শতাংশ; এবং ইজরায়েল 5 – 8 শতাংশ শিশু PTSD তে আক্রান্ত।
এই ধরনের এক নিকৃষ্ট পরিস্থিতিতে, বিশ্বজুড়ে চিকিৎসক ও মনোস্তত্ববিদরা যথাসম্ভব সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, যাতে স্কুল যাওয়া এই ডিপ্রেশড বাচ্চা, যাতে এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসে; সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করার সুযোগ পায়। তারা কাউন্সেলিংয় ও ঔষধ খাবার পরামর্শ দেন যাতে তারা এই ডিপ্রেশন থেকে বেরিয়ে আসে, তাদের ভবিষ্যত যেন প্রভাবিত না হয়।
শিশুদের বিষন্নতার সাধারণ লক্ষণগুলি কি কি?
শৈশব যে সব শিশু বিষন্নতায় আক্রান্ত হয়, তাদের যে কয়েক সাধারণ লক্ষণগুল দেখা যায়; প্রাপ্তবয়স্কদের মতোই। তবে হ্যাঁ প্রতিটি বিষন্নতায় আক্রান্ত রোগী অনন্য এবং এদের প্রত্যেকের মোকাবিলা পদ্ধতি ও আলাদা।
- সাধারণত, শিশুদের ক্ষুধায় ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায়; হয় তারা অত্যধিক খাতে থাকে, অনেক আবার ক্ষুধামন্দায় ভোগে।
- তাদের ঘুমের রুটিনে পরিবর্তন ঘটে;
- হয়তো দেখবেন অসময়ে জেগে আছে,অথচ তারা সকালে কিছুতেই ঘুম থেকে উঠতে পারছে না।
- অনেক বাচ্চা কোন কারণ দাড়াই নিজেকে দুঃখী, বা মূল্যহীন বলে ভাবতে শুরু করে করে, দিয়ে নিজেই অনুশোচনায় দগ্ধ হয়।
- কোনো বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া তাদের কাছে চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে।
- কেও কেও অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে, এমনকি সামাজিক প্রত্যাহারও দেখাতে পারে।
- অনেক শিশুরা পেট ব্যাথা এবং মাথাব্যাথার মতো শারীরিক অসুবিধায় ভুগতে পারে, যা কোনও ঔষধেই হারানো যায় না।
যাইহোক, আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে অনেক বাচ্চারা এই লক্ষণগুলি দেখায় না কিন্তু ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকে। সুতরাং, যদি আপনি যদি দেখেন আপনার সন্তান দীর্ঘ সময়ের জন্য বিনা কারনে বিরক্ত হচ্ছে বা খিটখিটে মেজাজের হয়ে পড়েছে ; তাহলে এটি স্বাভাবিক মানসিক পরিবর্তন হিসাবে অগ্রাহ্য করবেন না। তাদের মনের অবস্থা ধৈর্য্য ধরে জানার চেষ্টা করুন এবং প্রয়োজনে পেশাদার মনস্তত্ত্ববিদের সাহায্য নিন।
কি ভাবে বাচ্চাদের মধ্যে বিষন্নতায আক্রান্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বাড়ে?
গবেষণায় বলা হয়েছে যে, অল্প বয়সে মানসিক বিষন্নতায বিকাশের সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে, যদি পরিবারের কোনো বিষন্নতার আক্রান্ত হবার ইতিহাস থেকে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে, একটি বিশৃঙ্খল পরিবার থেকে আসা বা কিশোর বয়সে মদ বা মাদকদ্রব্যের অপব্যবহারের সম্মুখীন হওয়া শিশুরাও হতাশা ও উদ্বেগে ভোগার সম্ভাবনা খুব বেশি।
কিভাবে ডাক্তাররা শিশুদের মধ্যে এই ডিপ্রেশনের চিকিৎসা করেন?
ডিপ্রেশনের চিকিৎসা কিশোর এবং প্রাপ্তবয়স্কদের অনুরূপ; তবে, কম বয়সের রোগীদের চিকিৎসা করার সময় চিকিৎসকদের আরও যত্নশীল এবং সমবেদনাপূর্ণ হতে হবে। চিকিৎসির প্রথম ধাপ হলো সাইকোথেরাপি বা কাউন্সেলিং। এতে সন্তোষজনক ফলাফল না পাওয়া গেলে, মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা ঔষধ প্রয়োগ করেন। সাধারণত, ডাক্তার ডিপ্রেশনের লক্ষণগুলি কমিয়ে আনতে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস ব্যবহার করার নির্দেশ দেন। যাইহোক, FDA অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ব্যবহারের বিরুদ্ধে একটি সতর্কতা জারি করেছে কারণ এটি বাচ্চাদের আত্মঘাতী প্রবণতা তৈরী করতে পারে।
অবশেষে, আমরা বলতে পারি যে বর্তমান সমাজের হিংসার প্রকোপ ও জটিলতা শিশুদের মধ্যে উদ্বেগ ও মানসিক চাপ সৃষ্টি করেছে। অনেক ক্ষেত্রে, বাবা-মায়ের কাছ থেকে যথেষ্ট সময় না পেয়ে বা বড়োদের দ্বারা অপব্যবহৃত হওয়া এই ক্ষেত্রে অনুঘটক হিসাবে কাজ করতে পারে। সুতরাং, বাচ্চাদের সাথে যতটা সম্ভব সময় কাটানোর চেষ্টা করুন এবং তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে চেষ্টা করুন যথাযথ সময় দিন।
1 thought on “স্কুলে পাঠরত শিশুদের বিষন্নতায় আক্রান্ত হবার ঘটনা বাড়ছে – আমাদের সেই দিকে নজর দরকার”
Comments are closed.