মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্যবিধি – গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু অবহেলিত! আর সেখান থেকেই শুরু নানান স্বাস্থ্যসমস্যা
নিউক্র্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদন, কলমে শুভ্রা অধিকারী, অনুবাদ ও অক্ষরদানে-মোনালিসা মহান্ত।
যদিও মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্যবিধি শরীরের সাধারণ সুস্থতার একটি মাপকাঠি, তবুও প্রায়শই আমরা সবাই কমবেশি এটাকে অবহেলা করি। যতক্ষণ না পর্যন্ত কোনো গুরুতর চিকিৎসাগত সমস্যা হচ্ছে ততক্ষণ আমারা এটাকে কোনো গুরুত্ব দিই না। শিশুদের দাঁত বা মাড়িতে ব্যাথা বা অন্য কোন সমস্যা দেখা না দিলে দাঁতের চেক-আপ পর্যন্ত করানো হয় না। কিন্তু আমাদের মুখ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক ক্ষেত্রেই, আপনি দেখতে পাবেন যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক সমস্যার প্রথম বহিঃপ্রকাশ হিসেবে মুখের ক্ষত এবং অন্যান্য সমস্যাগুলি আগে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
দাঁত এবং অন্যান্য চিকিৎসকরা তাদের মৌখিক স্বাস্থ্য, বিশেষ করে দাঁত এবং মাড়ির যত্ন নেওয়ার জন্য মানুষকে পরামর্শ দেন। এটাই সারাজীবন কোনও দাঁতের সমস্যা ছাড়াই আপনার সুন্দর, সবল দাঁত ধরে রাখতে সহায়তা করবে। দাঁতের স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বছরে অন্তত দুবার জন্য নিয়মিত দাঁতের চেকআপ করা প্রয়োজন। এ ছাড়াও, প্রত্যেকের দিনে অন্তত দুবার করে তাদের ব্রাশ করতে হবে এবং নিয়মিত নির্দিষ্ট সময়ের অন্তরে মাউথওয়াশ দিয়ে কুলকুচি করে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
এখানে মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য বিষয়ক কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো, নিবন্ধটি পড়তে থাকুন।
মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য এবং শরীরের সামগ্রিক কল্যাণের মধ্যে সম্পর্ক কী?
আমাদের মুখ একগুচ্ছ ব্যাকটেরিয়ার বাসগৃহ, এরা বেশিরভাগই ক্ষতিকর নয়। নিয়মিত ব্রাশকরা ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলে মুখগহ্বরের স্বাস্থ্যবিধি নিয়ন্ত্রণে থাকে। যাইহোক, ডায়াবেটিস এবং এইচআইভি/এইডস মত কিছু ক্ষেত্রে, আক্রান্ত ব্যক্তির দেহের প্রতিরক্ষা কমে যায় এবং এদের ক্ষেত্রে মুখে সংক্রমণ হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। তাছাড়া, কিছু ঔষধ যেমন ডিকন্জাস্টান্টস্, অ্যান্টিহিস্টামাইনস, অ্যানালজেসিক, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস, এবং ডাইইউরেটিক্স; ইত্যাদি মুখের লালার ক্ষরন কম করে দেয়। মুখের লালাক্ষরন মুখের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। লালারসে উপস্থিত উৎসেচক বিভিন্ন জীবানুর আক্রমন থেকে মুখকে প্রতিরক্ষা দেয়। এবং খাদ্যদ্রব্য ভেঙে ছোট ছোট কনায় পরিনত হবার সময় অ্যাসিডের মাত্রা হ্রাস করতে লালারস উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। অতএব বোঝাই যাচ্ছে লালাক্ষরনের পরিমাণ কমে গেলে মৌখিক সংক্রমণজনিত ঝুঁকি বৃদ্ধি হয়।
সাধারণত মুখের কী কী ধরনের সংক্রমন দেখা যায়?
মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা বিশেষ মাথা না ঘামালেও, মুখ কিন্তু নানা রকম সমস্যা দেখা যায়।
যেমন ভেন্টাল ক্যারিস (দাঁতের ক্ষয়), গিংভিটিস (মাড়ির রোগ), পেরিওডনটিস (মাড়ির একপ্রকার গুরুতর সমস্যা, এক্ষেত্রে মাড়িতে এতটাই ক্ষতি হয় যে অনেক সময় দাঁত ঝরে যায়) এছাড়াও আছে দাঁতের ক্ষয়, দাঁতের সংবেদনশীলতা এবং মুখের ক্ষত ইত্যাদি।
ডেন্টাল ক্যারিস এর উপসর্গ গুলি কী?
এর এর সাধারণ উপসর্গগুলি হল অসহ্য ব্যথা। দাঁতের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি অর্থাৎ যখনই কোন মিষ্টি, ঠান্ডা বা গরম জাতীয় খাবার খাওয়া হয় মাড়ির শিরশিরানি। দাঁতের উপর কালো বা খয়েরী রঙের ছোপ, দাঁতে ফুঁটো, ব্রাশ করার সময় রক্তাপাত ও ব্যাথা।
কিভাবে আপনি দাঁতের ক্ষয় বা সমস্যার প্রতিরোধ করতে পারেন?
ফ্লুরাইড-ভিত্তিক টুথপাস্ট ব্যবহার করে আপনি সহজেই দাঁতের ক্ষয় এড়াতে পারেন। সাথে নিয়মিত খাবার পর মাউথওয়াশ দিয়ে আপনার মুখ ধুয়ে ফেলুন। চিনিযুক্ত খাবারগুলি এড়িয়ে যান। ঘন ঘন স্যন্কস খাওয়া থেকে দূরে থাকুন এবং অতিরিক্ত ফ্লুরাইড যুক্ত ট্যাপের জল পান করা ছাড়ুন।
এর চিকিৎসা কী?
ডেন্টাল ক্যারিজ বা দন্তক্ষযয়ের চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ভর করে দাঁতের কতটা ক্ষতি হয়েছে তার পরিমাণের উপর। যদি ক্ষয় শুরুর প্রারম্ভে চিকিৎসা শুরু হয়, তাহলে চিকিৎসকেরা দাঁতের ক্ষয়রোধে ফ্লুরাইড ট্রিটমেন্ট করতে পরামর্শ দেন। বা অনেক সময় ফিলিং করার প্রয়োজন পড়ে। দাঁত ক্ষয় অতিরিক্ত হলে রুট ক্যানাল, ক্রাউন ফরমেশন বা টুথ এক্সট্রাকশন করানোর জন্য সুপারিশ করেন।
দাঁতের চিকিৎসা করার ক্ষেত্রে রুট ক্যানেল কি তা একটু্ জেনে নেয়া যাক:-
গুরুতর ক্ষয়প্রাপ্ত দাঁত সংরক্ষণ এবং মেরামত করার জন্য রুট ক্যানেল বা RCT করা হয়। এখানে হয় কি, ডাক্তার দাঁত এবং স্নায়ুগুলো প্রথমে অপসারণ করে দেন। তারপর অবশেষে, একটি নকল দাঁত সেখানে লাগিয়ে দেন।
এবার থেকে নিজের ও বাড়ির বাচ্চাদের দাঁতের নিয়মিত যত্ন নিন। সুস্থ থাকুন।