প্রাপ্তবয়স্কদের টিকাকরণ – সচেতনা সৃষ্টির জন্য নিউক্র্যাড হেলথ বাংলার একটি প্রয়াস
এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ জুড়ে সমগ্র বিশ্বজুড়ে পালিতো হয়ে গেল বিশ্ব টিকাকরন দিবস ।
নিউক্র্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদন
রোগের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে টিকাকরন কর্মসূচীর কার্যকারিতা সম্পর্কে সাধারণ জনমানসে সচেতনতা বাড়াতে সারা বিশ্বের স্বাস্থ্য কর্মীরা এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে বিশ্ব টিকা দিবস উদযাপন হয়ে গেল।
টিকাদান সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের সকলের জেনে রাখা দরকার যে কারণ কিন্তু শুধুমাত্র শিশুদের জন্য নয়, প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য কিন্তু বিভিন্ন ধরনের টিকাকরণ কর্মসূচি চালু আছে। সমস্ত বয়সের ব্যক্তিই রোগ মুক্ত থাকতে এবং সুস্থ জীবনযাপন সুনিশ্চিত করতে সময়মত টিকাকরন করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। WHO এর মতে, বিশ্বব্যাপী প্রায় 20 মিলিয়ন মানুষ এখনও টীকাকরন করান না।
এই বছর ইমিউনেশন সপ্তাহের থিম হল ‘Protected Together: Vaccines Work!’।
স্বাস্থ্য কর্মীরা রোগ প্রতিরোধের জন্য যে টিকাকরন করানোই সবচেয়ে কার্যকর এবং সফল পরিকল্পনা- সেই বার্তাই সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
কোন কোন রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের টিকাদান করা প্রয়োজন হয় :-
পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই, এমনকি ভারতবর্ষেও টিকাদান সময়সূচীটি/কর্মসূচিকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয় –
১)সদ্যজাত ও শিশুদের জন্য টিকা।
২)কৈশোরের জন্য টিকা।
এবং,
৩) প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য টিকা।
ঘন ঘন ভ্রমণকারী, সামরিক বাহিনীর সাথে যুক্ত ব্যক্তি, স্বাস্থ্যসেবা পেশাদার, সমকামী বা উভকামী মানুষের মতো উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তির জন্য কিছু অন্য ধরনের অনেক টিকাদান করানোর ব্যবস্থা রয়েছে।
আজকে বিষয়বস্তুতে, আমরা প্রাথমিকভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য রোগ প্রতিরোধী কয়েকটি টিকাকরণ নিয়ে আলোচনা করব।
ফ্লু-প্রতিরোধী টিকা :-
প্রতিবছর আমাদের চারপাশে লক্ষ্ লক্ষ্ মানুষ ইনফ্লুয়েঞ্জা তে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এটি অত্যন্ত সাধারন রোগ হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় এটি এতই বেশি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে হসপিটালে পর্যন্ত ভর্তি হতে হয়। আমারা কিন্তু এর থেকে সহজেই মুক্তি পেতে পারি। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষদের প্রতিবছরই একটি করে ফ্লু এর টিকা নেওয়া প্রয়োজন। ৬মাস বয়সের পর থেকেই বছরে একবার ফ্লু-র টিকা নিতে পারেন।
তবে হ্যা কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম আছে —
# যে সমস্ত ব্যক্তিদের কোন ধরনের শারীরিক সমস্যা আছে
# দেহের অনাক্রম্যতন্ত্র দুর্বল
# ইম্যিউন সাব্প্রেসিভ ট্রিটমেন্ট চলছে
#যে সমস্ত ব্যক্তিদের জিলেটিন জাতীয় পদার্থে কোন রকম আল্যার্জি আছে –
তাদের কিন্তু টিকাকরন না করানোই উচিত। এছাড়াও যদি অন্য কোন ধরনের সমস্যা থাকে তবে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে টিকা নেওয়া ভালো।
তবে হ্যাঁ এমনিতে এর কোনরকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। একবার যদি কেউ প্রতিরোধী টিকাকরন করিয়ে নেয় তাহলে দুই মাসের মধ্যেই আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধক কিছু অ্যান্টিবডি তৈরী হয়ে যায়, যা পরবর্তী এক বছরের মধ্যে ফ্লু-প্রতিরোধ করতে পারে।
বর্তমানে ফ্লু প্রতিরোধের জন্য যে সমস্ত টিকাকরণ করা হচ্ছে সেখানে তিন ধরনের ইনফ্লুয়েন্জা রোগ প্রতিরোধ করার অ্যান্টিজেন দেওয়া থাকে – ইনফ্লুয়েন্জা A (H1N1); ইনফ্লুয়েন্জা A (H3N2) এবং ইনফ্লুয়েন্জা B। বর্তমানে তার ধরনের ইনফ্লুয়েন্জা প্রতিরোধী টিকাও বেরিয়েছে।
নিউমোনিয়া প্রতিরোধী টিকা:-
নিউমোনিয়া হল এমন এক ধরনের ফুসফুসের ইনফেকশন, এটি বিভিন্ন ধরনের জীবাণুরা আক্রমনে ঘটতে পারে; যেমন – ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক, মাইকোপ্লাজমা ইত্যাদির আক্রমনের কারণে হয়ে থাকে। নিউমোনিয়ার ইনফেকশন সাথে ইনফ্লুয়েন্জা বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে প্রতিবছর। কিন্তু এই রোগের হাত থেকে আমরা সহজেই মুক্তি পেতে পারি! এর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ দিয়েছেন 19 বছরের উপরে যে কোন ধরনের ব্যক্তির কিন্তু বছরে একবার করে নিউমোনিয়ার টিকা করন করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় নিউমোনিয়ার জীবাণু রক্তের সাথে মিশে গেছে একে বলা হয় ব্যাকটেরিমিয়া, এক্ষেত্রে মানুষের মৃত্যু নিশ্চিত। আবার অনেক সময় নিউমোনিয়া থেকে আমাদের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র অর্থাৎ মস্তিষ্ক এবং সুষুম্নাকাণ্ড আক্রান্ত হয়ে পড়ে; এর ফলে মানুষ অনেক সময় পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে পড়ে, অনেক সময় মৃত্যু পর্যন্ত ঘনিয়ে আসে এই রোগের নাম হল মেনিনজাইটি। এসমস্ত মরন রোগের হাত থেকে কিন্তু আমরা খুব সহজেই মাত্র 1 বার টিকাকরণ করিয়ে নিয়ে আমাদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে পারি চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী 65 বছর বয়সের উপরের যে কোন ব্যক্তি কিন্তু বছরে একবার করে টিকাকরণ করানো অত্যন্ত জরুরী।
65 বছর ধরে মানুষকে এই টিকাটি গ্রহণ করা উচিত। বর্তমানে দুই ধরনের নিউমোনিয়া ভ্যাকসিন PCV13 (Pneumococcal Conjugate Vaccine) এবং PPSV23 (Pnemococcal plyssachardea Vaccine) রয়েছে। নিউমোনিয়া ছাড়াও, এই টিকা উভয়ই মেনেনজাইটিস্ এবং ব্যাকটেরিমিয়ার বিরুদ্ধে আমাদের দেহে প্রতিরক্ষা গড়ে তোলে।
হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন:-
হেপাটাইটিস-বি হল আরো একটি খতরনাক জীবাণু যা লিভার টিস্যুগুলো নষ্ট করে দেয়, লিভার ফেইলিওর, এমনকি লিভার ক্যান্সারের অন্যতম কারণই হল হেপাটাইটিস-বি ইনফেকশন।
এর অন্যতম প্রাথমিক লক্ষণগুলি হল জন্ডিস, জ্বর, পাতলা পায়খানা, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব এবং পেট ব্যথা। WHO এবং CDC 18 বছরের নীচে সকলকে এই টিকা নেওয়ার সুপারিশ করেন।
যদি প্রাপ্তবয়স্কদের তাদের ভ্যাকসিন না পেয়ে থাকেন তবে তাদের হেপাটাইটিস বি টিকা তিনটি ডোজ নিয়ে নিতে পারেন। নভেম্বর 2017 এফডিএ অনুমোদন করেছে Heplisav- B (Dynavax) – যেটির মাত্র দুটি ডোজ নিলেই হবে।
সার্ভ্যিকাল ক্যান্সাসের টিকা:-
বর্তমান দিনে সারভিকাল ক্যান্সার এর প্রকোপ দিনে দিনে বেড়েই চলেছে এর পিছনে মূল দায়ী হলো হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের আক্রমণ। ফলে সমগ্র বিশ্বব্যাপী হাজার মহিলা প্রতি বছর ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে, তবে সমীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে, যদি হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস টিকাকরন করিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে কিন্তু মেয়েদের মধ্যে এই ক্যানসারের সম্ভাবনা আশ্চর্যজনকভাবে কম হয়। সেন্ট্রাল কন্ট্রোল কাউন্সিল এবং ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গ্যানাইজেশনের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন 16 থেকে 26 বছর বয়সী প্রতিটি মেয়েরই উচিত হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের টিকা নিয়ে নেওয়া। যে সমস্ত মহিলারা এই বয়সের সীমানা পেরিয়ে গেছে তাদের জন্যে বাজারে এখন নতুন টিকা এসে গেছে। 26 থেকে 49 বছর বয়সী মহিলা এবং পুরুষ যে কেউই কিন্তু এই ভাইরাসের টিকা করন করিয়ে নিয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেন। তবে হ্যাঁ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে যে সমস্ত ব্যক্তিরা সুস্থ যৌন জীবন পালন করেন তাদের চোখে এই ভ্যাকসিন বেশি কার্যকরী।
আজকের এই নিবন্ধটি এতোটুকুই। তাহলে আজকে আমরা জানলাম যে শুধুমাত্র ছোটদের জন্যই নয় বড়দের জন্য কিন্তু টিকাকরণের ব্যবস্থা আছে। যে সমস্ত টিকাকরণ করানো প্রয়োজন আপনার নিকটবর্তী চিকিৎসা বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করে টিকাকরণ করিয়ে নিন এবং সুস্থ থাকুন।