ডিসেম্বর 23, 2024

প্রতি বছর, ভারতে প্রায় 350,000 জন শিশু নতুনভাবে হাঁপানিতে আক্রান্ত হচ্ছে

inhaler-2520471_1280

Each year, about 350,000 new cases of asthma reported among kids in India Each year, about 350,000 new cases of asthma reported among kids in India

Reading Time: 2 minutes

নিউক্র‍্যাড হেলথ বাংলার প্রতিবেদন । কলমে-পরমানন্দ বর্মন ও স্পূর্থী রমন। অনুবাদ ও অক্ষরদানে-মোনালিসা মহা।ন্ত

ক্রমবর্ধমান যানবাহন এবং যানবাহনের জ্বালানি দহনের ফলে বাতাসের নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলস্বরূপ বেড়ে চলেছে শিশুদের মধ্যে শ্বাসজনিত সমস্যা।এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে সম্প্রতি হয়ে যাওয়া একটি বিশ্বব্যাপী গবেষণায়।
আরো জানতে নিচের নিবন্ধটি পড়তে থাকুন।

হাঁপানি হলো ফুসফুসের সাথে সম্পর্কিত একটি রোগ যাতে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে বাতাস প্রবেশ করার যে পথগুলি আছে, সেই নালীপথে প্রদাহ এবং সংকীর্ণতা সৃষ্টি হয়, ফলস্বরূপ তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা যায়।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী পৃথিবীর 339 মিলিয়ন মানুষ হাঁপানিতে আক্রান্ত, আর শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা কারনে প্রতিদিন প্রায় 1150 জন মানুষ মারা যাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান দূষিত বাতাসই এই রোগের প্রধান কারণ। শিশুদের মধ্যে সবথেকে বেশি থাবা বসিয়েছে শ্বাসজনিত সমস্যা। তবে হ‍্যাঁ এটি কিন্তু সংক্রামক রোগ নয়।

সম্প্রতি একটি নতুন গবেষণায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার গবেষকরা নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইড কীভাবে শ্বাসজনিত সমস্যা বাড়াচ্ছে তার উপর সমীক্ষা চালান। নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড হল যানবাহন থেকে নির্গত প্রধান বায়ুদূষণকারী উপাদান।

নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইড হল নাইট্রোজেন-অক্সাইড প্রতিক্রিয়াশীল (রিয়‍্যাকটিভ) গ্যাসের গ্রুপ গুলির মধ্যে একটি। জ্বালানি দহনের ফলে যে সব গ‍্যাসগুলি হয়, তার মধ্যে নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য,; আর এই গ‍্যাসের কারনেই সারা পৃথিবীতে হাঁপানির মতো সমস‍্যার সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এই গবেষণায়টির ল‍্যান্সেট প্ল‍্যানেটরি হেলথ নামের একটি জার্নালে ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকরা বিশ্বব্যাপী নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড কনসেন্ট্রেশন, শিশুর সংখ্যা এবং হাঁপানির হার নির্নয় করেন, এবং নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইডের কারণে নতুন করে কতজন হাঁপানির উপসর্গ দেখাচ্ছে তার আনুমানিক হিসাব করেন। তারা 194 টি দেশ এবং 125 টি বড় শহরের থেকে 1-18বছর বয়সী শিশুদের উপর সমীক্ষা চালান।

“প্রতি বছর, নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড দূষণের জন্য‌ নূতন করে প্রায় 4 মিলিয়ন শিশুর শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয়!”- গবেষকরা জানিয়েছেন। নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড দূষণের জন্য চীনে প্রতি বছর 760,000 নতুন করে হাঁপানির সমস্যা দেখা দেয়, চীনের অবস্থান শীর্ষে; তার পরই অবস্থান আমাদের ভারতবর্ষের; নূতন হাঁপানির সমস্যা দেখা দেয় 33,000 জনের। অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া এবং ব্রাজিল। শহরগুলির মধ্যে, নাইট্রোজেন-ডাই অক্সাইডের কারনে শুরু হওয়া নতুন হাঁপানির সমস্যার শীর্ষে আছে লিমা (পেরু) 690; তারপর তালিকায় আছে সাংহাই (চীন) ও বগোটা (কলম্বিয়াতে)।

গ্রামগুলি তুলনায় কিন্তু শহরের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার হার অনেক বেশি; কারণ এই অঞ্চল গুলিকে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় তাই অনেক বেশি মানুষ শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় ভোগেন। শহরাঞ্চলে 64% মানুষ শ্বাসকষ্টে ভোগেন। গবেষণায় দেখা গিয়েছিল জাতীয় স্তরে কিন্তু একদম ছোট বয়সে মূলত যারা 1 থেকে 4 বছর বয়সী তাদের শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় ভোগার পরিমাণ সব থেকে বেশি।
তবে হ্যাঁ, একটা সুখবর যে ভারতের মতো দেশ, যেখানে শিশুর সংখ্যা সব থেকে বেশি; সেখানে কিন্তু শিশুদের মধ্যে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার সংখ্যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেকটাই কম ছিল।

ভারতের বেনারস,কানপুর, লখনৌ এবং কলকাতা এই চারটি শহরে এবং নাইজেরিয়ার আরলু নামের শহরের শিশুদের মধ্যে হাঁপানির সমস্যা বেশ কম।

কুয়েতে হাঁপানিতে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা সর্বাধিক। তার পরে আছে আরব আমিরাত, কানাডা, তাইওয়ান এবং কাতার। কানাডা হল একটি উচ্চ-আয়ের দেশগুলি যেখানে শিশু হাঁপানির সমস্যা সর্বোচ্চ। আর দক্ষিণ কোরিয়ায় নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইডের বেশি পরিমাণে জন্য সবথেকে বেশি শিশু শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত।

গবেষণায় সবথেকে আশ্চর্যকর বিষয় যেটা উঠে এসেছে সেটা হচ্ছে যে সমস্ত দেশগুলিতে নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ WHO নির্ধারিত নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইডের সীমার মধ্যে রয়েছে, সেই দেশগুলিতে কিন্তু বর্তমানে শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যার হার অনেক বেশি । অতএব, স্পষ্টতই বোঝা যায় যে WHO এর গাইডলাইন বদল করার সময় হয়েছে অর্থাৎ নতুন করে বিবেচনা করে দেখারদরকার যে নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড এর পরিমাণ কতটা থাকা উচিত।

গবেষকদের মতামত অনুযায়ী যে হারে ক্রমশ যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জ্বালানি দহনের ফলে ক্রমশই বাতাসের নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে আমাদের এখনই নজর দেওয়া উচিত। যাতে নতুন করে শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা আর দেখা না দেয় এবং এর মারন প্রকোপ আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।