ডিসেম্বর 23, 2024

পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে পোলিও সংক্রমণ: এক প্রাসঙ্গিক আলোচনা

220px-Polio_sequelle
Reading Time: 5 minutes

ডঃ শুভময় ব্যানার্জী, পিএইচডি, নিউক্র্যাড হেলথ ডেস্কের প্রতিবেদন। সেপ্টেম্বর ১, ২০২০

পোলিওর বিরুদ্ধে লড়াইটা শুরু হয়েছিল ১৯৫০ সালে, যখন আমেরিকায় ইউনিভার্সিটি অফ পিটসবার্গের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ডঃ জোনাস স্যাকের তৈরী প্রথম ইন্যাক্টিভেটেড পোলিও ভ্যাকসিন (IPV) পোলিও রোগ নিয়ন্ত্রণের অনুমতি পায়। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ ৩৮ বছর। পোলিও ভ্যাকসিন গবেষণা ও তার যথোপযুক্ত ব্যবহারে দ্রুত হারে বিশ্বজুড়ে কমেছে পোলিও রোগীর সংখ্যা। নিরাপদ হয়েছে শিশুদের জীবন। ১৯৮৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), গেটস ফাউন্ডেশন, ইউনিসেফ এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের পোলিও নিয়ন্ত্রণ অনুদান তহবিল থেকে তৈরী হয় গ্লোবাল পোলিও ইরাডিকেশান ইনিশিয়েটিভ (GPEI)। পৃথিবীর বুক থেকে পোলিও রোগকে নিশ্চিহ্ন করে দেবার এই উদ্যোগ আজ সফল হয়েছে। ধীরে ধীরে পোলিও ভ্যাকসিন ব্যবহার কর্মসূচী শেষ করার উদ্যোগে শুরু হয়েছে “দ্য এন্ডগেম” স্ট্রাটেজি। পোলিওর বিরুদ্ধে সারা বিশ্বের মানুষের লড়াইয়ের কথা জানার আগে পোলিও রোগসংক্রমণের বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।

পোলিও ভাইরাস সংক্রমণ:

পোলিও ভাইরাস পিকরনাভিরিডি (Picornaviridae) পরিবারের একটি RNA ভাইরাস। এই পরিবারের ভাইরাসের এক বৈশিষ্ট হলো এরা মেরুদন্ডী প্রাণীর শরীরে প্রধানত সংক্রমণ ঘটায়। এদের RNA জিনোম মোট ৭৫০০টি বেস পেয়ার দিয়ে গঠিত। ভাইরাসটির প্রোটিন ক্যাপসিডকে ঘিরে কোন এনভেলপ থাকে না। ক্যাপসিডের জ্যামিতিক গঠন আইকোসাহেড্র্যাল প্রকৃতির এবং চার প্রকার প্রোটিন (VP-1, 2, 3, 4) সংযুক্ত হয়ে এটি তৈরী হয়েছে। পোলিও ভাইরাসের মোট তিনটি সেরোটাইপ পাওয়া যায় কোন একটি নির্দিষ্ট সেরোটাইপের বিরুদ্ধে তৈরি অ্যান্টিবডির অন্য সেরোটাইপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষমতা নেই। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে এই ভাইরাসের বর্ননা পাওয়া যায় প্রায় খ্রীষ্টপূর্ব ১৫০০ শতকে। রোমে একটি প্রাচীন শিলালিপিতে অঙ্কিত এক পুরোহিতের শরীরের একটি পা অস্বাভাবিক রকম সরু ও বাঁকা। ঐতিহাসিক গবেষকরা দেহের এই বৈশিষ্টকে নিশ্চিতভাবে পোলিওর লক্ষণ বলে মনে করেন। পরবর্তীকালে, ১৯০৯ সালে দুই বিজ্ঞানী ল্যান্ডস্টেইনার এবং পোপার প্রথম পোলিও ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করেন। তাঁদের গবেষণায় প্রকাশ পায়, পোলিও ভাইরাস মেরুদন্ডী প্রাণীকে স্থায়ী ভাবে পঙ্গু করে ফেলার ক্ষমতা রাখে। 

পোলিও ভাইরাস সংক্রমণে মানুষের স্পাইনাল কর্ড ও ব্রেন স্টেম আক্রান্ত হয়। স্পাইনাল কর্ডের সম্মুখবর্তী শৃঙ্গের (Anterior Horn) গ্রেম্যাটার অঞ্চল ভাইরাস সংক্রমণে ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এই অঞ্চলের মোটর নার্ভগুলি অকেজো হয়ে পড়ে এবং কঙ্কালপেশীর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে পেশীগুলি অপরিনত থাকে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে রোগীর পক্ষাঘাত হয় (প্যারালাইটিক পলিওমায়েলেটিস)। বিশেষ করে, শিশুদের ক্ষেত্রে পোলিও রোগের প্রাধান্য দেখা যায়। উনিশ শতকের বহু আগে থেকেই এই রোগে পৃথিবীর উন্নতিশীল দেশগুলির (Developing Countries) শিশুরা আক্রান্ত হতে থাকে। বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন, শিশুর ৮ মাস বয়স পর্যন্ত পোলিও হবার সম্ভাবনা নেই। কারন, সেই সময়ে মায়ের দুধে অবস্থিত অ্যান্টিবডি শিশুকে পোলিও ভাইরাস সংক্রমণ থেকে প্রতিরোধ করে। একে পোলিওর বিরুদ্ধে ‘প্যাসিভ ইমিউনিটি’ বলে। এই ইমিউনিটির কার্যক্ষমতা কিছুদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। পোলিও সংক্রমিত রোগীর মলে ভাইরাসের উপস্থিতি দেখা যায়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বা বর্জ্যপদার্থ সমন্বিত জলের সাথে পানীয় জল মিশে দুষিত হয়ে পড়লে, এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে। শরীরের পৌষ্টিকতন্ত্রে পোলিও ভাইরাস বাসা বাঁধে। সেখান থেকে ভাইরাস ‘মিউকোসাল ব্যারিয়ার’ ভেদ করে রক্তসংবহনে প্রবেশ করে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে (Central Nervous System) আক্রমন করে। 

নিউক্র্যাড হেলথ নিয়ে আসছে নিউক্র্যাড হেলথ হাব – বাংলায় এক নতুন স্টার্ট আপ এক বাঙালি বিজ্ঞানীর হাত ধরে।

পোলিও ভ্যাকসিন আবিষ্কার ও তার প্রকারভেদ:

পোলিও ভাইরাসের দুই প্রকার অ্যান্টিজেনের বিরুদ্ধে (C ও D অ্যান্টিজেন) শরীরে নিউট্রিলাইজিং অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। এদের মধ্যে C অ্যান্টিজেন  হচ্ছে ভাইরাসের নিউক্লিক অ্যাসিড বিহীন প্রোটিন ক্যাপ্সিড এবং D অ্যান্টিজেন হোল প্রোটিন ক্যাপ্সিড ও নিউক্লিক অ্যাসিড সমন্বিত সংক্রমণযোগ্য ভাইরাস কনিকা। পোলিও ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে প্রধানত দুই প্রকার ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে। যেমন-

ইনঅ্যাক্টিভেটেড পোলিও ভ্যাকসিন (IPV):

১৯৫০ সালে ডঃ জোনাস এডওয়ার্ড স্যাক পোলিও ভাইরাসকে রাসায়নিক পদ্ধতিতে নিষ্ক্রিয় করে তৈরি করেন ইনঅ্যাক্টিভেটেড পোলিও ভ্যাকসিন। কিন্তু, কিছু ক্ষেত্রে এই ভ্যাকসিন পোলিওর বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ ইমিউনিটি গড়ে তুলতে সক্ষম হয় না যদিও প্রাথমিক পর্যায়ের পোলিও দূরীকরণ কর্মসূচীতে এই ভ্যাকসিন যথেষ্ট ভালো ফল করেছিল। 

লাইভ অ্যাটিন্যুয়েটেড পোলিও ভ্যাকসিন (OPV):  

ষাটের দশকের শুরুতে, পোলিশ-আমেরিকান বিজ্ঞানী ডঃ অ্যালবার্ট বি. সেবিন সিনসিনাটির চিলড্রেন হসপিটাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন থেকে গবেষণা করে আবিষ্কার করলেন পোলিওর লাইভ অ্যাটিন্যুয়েটেড ভ্যাকসিন। এই ভ্যাকসিনে রোগসংক্রমণ ক্ষমতাবিহীন সক্রিয় পোলিও ভাইরাস ব্যবহার করা হয়। আশ্চর্যের ব্যাপার এতে IPV এর থেকে অনেক ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে, এই ভ্যাকসিন ব্যবহারের অসুবিধা হলো পৃথিবীর কর্কটক্রান্তি রেখার আশপাশের ‘ট্রপিক্যাল ক্লাইমেট’ অধ্যুষিত দেশগুলিতে বছরে গড় উষ্ণতা বেশী থাকায় লাইভ অ্যাটিন্যুয়েটেড পোলিও ভ্যাকসিনের যথাযত পরিবহন ও রক্ষনাবেক্ষন করা যায় না। অর্থাৎ ‘কোল্ড চেন’ বজায় রাখার সমস্যা হয়। 

পৃথিবীব্যাপী পোলিও ইমিউনাইজেশান প্রোগ্রাম:

IPV এবং OPV আবিষ্কারের পর সারা পৃথিবীজুড়ে পোলিও নিশ্চিহ্ন করার সক্রিয় অভিযান চালানো হয়। প্রাক-পোলিও ভ্যাকসিন যুগে পোলিওর প্রাদুর্ভাব ইউরোপ, আমেরিকা, রাশিয়া ইত্যাদি পশ্চিমের দেশগুলির চেয়ে আফ্রিকা, এশিয়ার দক্ষিনাংশ, ভারতীয় উপমহাদেশ সংলগ্ন অঞ্চলে অনেক বেশী ছিল। ভ্যাকসিন ব্যবহারে বিশ্বব্যাপী পোলিও সংক্রমণমাত্রা সমীক্ষা অনুযায়ী প্রায় হাজার গুন হ্রাস পায়! ১৯৮৮ সালে গ্লোবাল পোলিও ইরাডিকেশান ইনিশিয়েটিভ যে কর্মসূচী গ্রহণ করে তাতে বলা হয়, ২০০০ সালের মধ্যে বিশ্বকে পোলিওমুক্ত করা সম্ভব হবে। এরপরে দেশে বিদেশে, আন্তর্জাতিক স্তরে বিভিন্ন ধাপে পোলিও দূরীকরনের সক্রিয় কর্মসূচী নেওয়া হয় এবং বাস্তবে ২০০৩ সালে কেবলমাত্র পাকিস্তান, ভারত, আফগানিস্তান ও নাইজেরিয়া ছাড়া পৃথিবীর সব দেশকে পোলিওমুক্ত ঘোষণা করা হয়। বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা যায় পোলিও সেরোটাইপ ২ ও ৩ এর সংক্রমণ সম্পূর্ণ দূরীভূত হয়। শুধুমাত্র সক্রিয় অবস্থায় পাওয়া যায় সেরোটাইপ ১। বর্তমানে অতি সামান্য  কিছু পোলিও সংক্রমণ তথ্য গবেষকদের হাতে আছে। এই অবস্থায় পৃথিব্যাপী চলতে থাকা পোলিও দূরীকরণ কর্মসূচী সুচিন্তিত ভাবে কমিয়ে আনতে গ্রহণ করা হয় “দ্য এন্ডগেম স্ট্রাটেজি”।

দ্য এন্ডগেম স্ট্রাটেজি:

২০১৪ সালেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে “পোলিও মুক্ত” অঞ্চল বলে ঘোষণা করা হয় (তার মধ্যে ভারত আছে) এবং ২০২০ সালে নাইজেরিয়া থেকেও পোলিও দূরীভূত হলো। বর্তমানে শুধুমাত্র আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে পোলিও সংক্রমণের তথ্য নথিভুক্ত করা হয়েছে। আশার কথা, বহুদিন থেকেই পোলিও সেরোটাইপ-২ ও ৩ এর সংক্রমণের নতুন তথ্য পাওয়া যায় নি। এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে OPV ব্যবহারে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন নেওয়া শিশুর শরীর থেকে ভ্যাকসিন রেচনপদার্থের সাথে বার হয়ে যায় এবং নতুন করে তা সুস্থ শিশুর শরীরে প্রবেশ করে “সার্কুলেটিং ভ্যাকসিন ডিরাইভড পোলিও ভাইরাস (cVDPV)” সংক্রমণ তৈরী করে। পৃথিবীর বেশ কিছু উন্নতিশীল দেশে এই পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে এবং তার মোকাবেলায় উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ফলে পোলিও দূরীকরণের শেষ পর্যায়ে পোলিও সেরোটাইপ-১ সংক্রমণ তথ্যের সাথে cVDPV সংক্রমণের তথ্য সংগৃহীত হচ্ছে। পোলিও এন্ড গেম স্ট্রাটেজির মূল উদ্দেশ্য হলো সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নিয়মিত তথ্য পর্যবেক্ষনের ভিত্তিতে, যে সমস্ত অঞ্চলে পোলিও সংক্রমণের খবর নেই, সেখানে পোলিও ভ্যাকসিন দেবার কাজ ধীরে ধীরে বন্ধ করা। এই কাজের জন্যে প্রয়োজন নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, নমুনা পরীক্ষা ও সমীক্ষা। পোলিও এন্ডগেম স্ট্রাটেজি সেই অর্থে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বর্তমান পোলিও এন্ডগেম স্ট্রাটেজি ২০১৯-২০২৩ উদ্যোগ প্রধানত তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল।

১. প্যারালাইটিক পোলিও নির্মূল করতে পৃথিবীর প্রতিটি শিশুর কাছে পোলিও ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়া। সেই সাথে নিশ্চিত হওয়া যে কোথাও কোন ওয়াইল্ড টাইপ পোলিও ভাইরাস (WPV) এবং ভ্যাকসিন ডিরাইভড পোলিও ভাইরাস (cVDPV) সংক্রমণ নেই।

২. প্রতিটি দেশে নির্দিষ্ট সংস্থার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত ভ্যাকসিন ব্যবহার, নিয়মিত সমীক্ষা, তথ্য নথিভুক্তিকরণ ও তথ্য বিশ্লেষনের ব্যবস্থা করা।

৩. পর্যালোচনার পর, পোলিও সংক্রমণশূন্য দেশকে “সার্টিফাইড পোলিও ফ্রী কান্ট্রি” ঘোষণা করা।

পৃথিবীর সমস্ত দেশের পরিচলন ব্যবস্থার এবং প্রতিটি সাধারণ মানুষের সমষ্টিগত লড়াইয়ের ফল আজ প্রায় পোলিওমুক্ত বিশ্ব। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও গ্লোবাল পোলিও ইরাডিকেশান ইনিশিয়েটিভ এর তরফ থেকে তাই ঘোষণা করা হয়েছে- “The achievement of polio eradication will be a milestone for global health“.

বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন [email protected]

তথ্যসূত্রঃ 

  1. https://www.who.int/health-topics/poliomyelitis#tab=tab_1
  2. http://polioeradication.org/
  3. Khan F, Datta SD, Quddus A, et al. Progress Toward Polio Eradication – Worldwide, January 2016-March 2018. MMWR Morb Mortal Wkly Rep. 2018;67(18):524-528. Published 2018 May 11. doi:10.15585/mmwr.mm6718a4
  4. Kalkowska DA, Duintjer Tebbens RJ, Thompson KM. Another look at silent circulation of poliovirus in small populations. Infect Dis Model. 2018;3:107-117. Published 2018 Jun 9. doi:10.1016/j.idm.2018.06.001
  5. Aylward B, Tangermann R. The global polio eradication initiative: lessons learned and prospects for success. Vaccine. 2011;29 Suppl 4:D80-D85. doi:10.1016/j.vaccine.2011.10.005
  6. Baicus A. History of polio vaccination. World J Virol. 2012;1(4):108-114. doi:10.5501/wjv.v1.i4.108
  7. Institute of Medicine (US) Vaccine Safety Forum; Howe CJ, Johnston RB, editors. Options for Poliomyelitis Vaccination in the United States: Workshop Summary. Washington (DC): National Academies Press (US); 1996. History and Current Status. Available from: https://www.ncbi.nlm.nih.gov/books/NBK231547/
  8. Bandyopadhyay AS, Garon J, Seib K, Orenstein WA. Polio vaccination: past, present and future. Future Microbiol. 2015;10(5):791-808. doi:10.2217/fmb.15.19
  9. Centers for Disease Control and Prevention (CDC). Progress toward interruption of wild poliovirus transmission–worldwide, January 2010-March 2011. MMWR Morb Mortal Wkly Rep. 2011;60(18):582-586.
  10. Chatterjee A, Vidyant S, Dhole TN. Polio eradication in India: progress, but environmental surveillance and vigilance still needed. Vaccine. 2013;31(9):1268-1275. doi:10.1016/j.vaccine.2012.12.060