পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিঃসন্তান দম্পতিকে বিনা মূল্যে আশার আলো দেখাবে সরকারী টেষ্টটিউব বেবি সেন্টারে
নিউক্র্যাড হেলথ এর নিজস্ব প্রতিবেদন
নিঃসন্তান দম্পতিদের জন্য প্রথমবার পশ্চিমবঙ্গ সরকার সরকারী টেষ্টটিউব বেবি সেন্টার বা IVF কেন্দ্র তৈরী করতে চলেছে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হসপিটালে। সরকারী স্বাস্থ্যদপ্তরের একটি সুত্রে জানানো হয়েছে যে ২০২০ সালের প্রথমের দিক থেকেই এই সুবিধা পেতে চলেছে রাজ্যবাসী। যে সমস্ত দম্পতি সন্তানধারণের অসুবিধার মুখোমুখি হয়ে মনোকষ্টে ভুগছেন তাদের টেষ্টটিউব বেবি বা IVF হল ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেসন পদ্ধতির পরিষেবা একেবারে নিঃখরচায় দেবে রাজ্যসরকার। সরকারের তরফ থেকে ইতিমধ্যে ১ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে প্রজেক্টটির রূপায়নের প্রথম ধাপ হিসাবে, এবং তথ্যানুযায়ী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রায় ৯০% প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির বন্দোবস্ত করে ফেলেছেন ইতিমধ্যে। সেন্টারটি বর্তমানে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের আউটডোর বিল্ডিং এর দুতলায় স্থাপিত হতে চলেছে।
আপাততঃ শেষমূহূর্তের কিছু বিশেষ অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং মোটামুটি আগামী দুইমাসের মধ্যেই তাঁরা NRS হসপিটালে ‘টেষ্টটিউব বেবি সেন্টার’ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের ব্যাপারে আশাবাদী।
টেষ্টটিউব বেবি বা IVF অর্থাৎ ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেসন আসলে কি?
সাধারনত যে সমস্ত মহিলাদের গর্ভধারণের সমস্যা থাকে তাঁরা টেষ্টটিউব বেবি বা IVF এর সাহায্য নিতে পারেন। এই পদ্ধতিতে পুরুষ ও মহিলার শুক্রানু ও ডিম্বানু কে একটি কাঁচের পাত্রে (Vitro) নিষেক ঘটিয়ে মহিলাটির জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হয়। এর থেকেই টেষ্টটিউব কথাটি এসেছে।
সাহায্যকারী প্রজননবিদ্যা হিসাবে IVF এর ব্যবহার
2016 অবধি প্রায় ৬.৫ কোটি বাচ্ছা IVF পদ্ধতির সাহায্যে জন্মগ্রহণ করেছে গোটা পৃথিবীতে। সেন্টার ফর ডিজিসেস্ কন্ট্রোল ও প্রিভেনসন বা CDD এর রিপোর্ট অনুযায়ী আমেরিকায় প্রায় ১.৬% শিশুর জন্ম, সাহায্যকারী প্রজননবিদ্যার দ্বারা। ১৯৭৮ সালের ২৫ শে জুলাই জন্ম নেওয়া লুইস ব্রাউন পৃথিবীর প্রথম টেষ্টটিউব বেবি। ২০১০ সালে IVF নিয়ে অত্যন্ত উপযোগী গবেষণার জন্য রবার্ট এডওর্য়াড চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল প্রাইজ পান।
ডাক্তাররা কখন IVF এর সাহায্য নিতে বলেন?
সাধারণভাবে কোনো মহিলা দীর্ঘ একবছর ধরে চেষ্টা করেও যদি মা হতে না পারেন অর্থাৎ গর্ভবর্তী না হতে পারেন তখন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা IVF এর সাহায্য নিতে বলেন। এই পদ্ধতির দ্বারা ফ্যালোপিয়ান টিউব এ সমস্যা অথবা টিউবটি আটকে গেলে, এন্ডোমিট্রিওসিস, ইউটেরাইন ফাইব্রয়েড, ডিম্বানুর অপ্রতুলতা, চিকিৎসাগত কারণে ফ্যালোপিয়ান টিউবে অস্ত্রোপচার অথবা কারণ না জানা বন্ধ্যাত্ব এইসবের ফলে সন্তানহীনতার চিকিৎসা করা হয়।
কখনও আবার কোনো দম্পতির পুরুষ সঙ্গীটির কারনে সন্তানলাভ করায় অসুবিধা দেখা গেলে IVF পদ্ধতির মাধ্যমে পুরুষটির শুক্রানু ঘাটতি কিংবা কর্মক্ষম বীর্যের অপ্রতুলতার মত সমস্যার সমাধান করা যায়।
IVF এর সফলতার হার
চিকিৎসারত মহিলাদের গর্ভবতী হবার বয়স ও তাদের বন্ধ্যাত্বের কারণ এই দুই বিষয়ের উপর নির্ভর করে IVF পদ্দ্বতির সফলতার হার। এছাড়াও যে ক্লিনিক এ মহিলাটি চিকিৎসাধীন এবং যে ডাক্তারের সহায়তায় চিকিৎসা চলছে তার উপরও নির্ভরশীল।
২০১০ সালে ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যে National Health Service (NHS), হবু মায়েদের বয়স অনুযায়ী IVF পদ্ধতির সফলতার একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। সেই অনুযায়ী
- ৩২.২% ৩৫ বছরের নীচে বয়স যে সমস্ত মহিলাদের
- ২৭.৭% ৩৫ থেকে ৩৭ বয়সের মহিলারা
- ২০.৫% ৩৮ থেকে ৩৯ বছর বয়সের মহিলারা
- ১৩.৬% ৪০ থেকে ৪২ বছর বয়সের মহিলারা
- ৫% ৪৩ থেকে ৪৪ বছরের মহিলাদের
- ১.৯% ৪৪ বছরের বেশী বয়সী মহিলাদের।
IVF পদ্ধতির কিছু ঝুঁকি
সন্তান নিতে ইচ্ছুক অথচ নিজের জননতন্ত্রের নানা অসুবিধার জন্য গর্ভবতী হতে পারছেন না এমন মহিলাদের জীবনে IVF পদ্ধতি আর্শীবাদের মতো হলেও, পদ্ধতিটির কিছু ঝুঁকি সবসময়ই থেকে যায়।
এই পদ্ধতি গ্রহণ করলে গর্ভপাত, একটোপিক গর্ভবস্থা (Ectopic Pregnancy), অপুষ্ট ও কম ওজনের বাচ্ছা, (Low birth weight), অকালপ্রসব (Premature delivery), ওভারিয়ান হাইপারষ্টিমুলেসন সিনড্রোম, জরায়ু থেকে ডিম্বানু পুনরুদ্ধারে জটিলতা (Egg Retrival) মতো কিছু সমস্যা থেকেই যায়। যদিও সঠিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে থাকলে উপরিউক্ত সমস্যাগুলো কে অনেকাংশেই কমিয়ে আনা যায়।
IVF এর মতো একটি যুগান্তকারী পদ্ধতিটি নিয়ে এখানে কিছু বলা হল, যদি আপনার মা হবার কোনো সমস্যা থাকে তাহলে অবশ্যই বিজ্ঞানের এই বিস্ময়কর আবিষ্কারের সাহায্য নিন।