পলিসিস্টিক ওভারীতে ভুগছে বর্তমান নারীসমাজ
নিউক্র্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদন
এই শত ব্যস্ত কর্মসূচির জীবনে, জীবন যখন পিছিয়ে থাকতে চায় না, তখন নারীজাতিরা পিছিয়ে থাকবে কেন! তবু যুগান্তরের ক্রমবর্ধমান ধারাসূচিকে মাথায় রেখে নারীদের জীবনে এসেছে বহু প্রতিবন্ধকতা। বর্তমান জীবনে এমনই এক প্রতিবন্ধকতার নাম পলি সিসটিক ওভারি সিন্ড্রোম বা POCS। যদিও তা প্রতিবন্ধকতা কতটা তা জানবো নিম্নের লেখা থেকে। পর্যবেক্ষণীয় সমীক্ষা বলছে সারা পৃথিবীর প্রায় ৮-২০ শতাংশ মহিলা তাদের প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থাতেই হয়ে পড়েন এই রোগের ভুক্তভোগী। কিন্তু এরচেয়েও ভয়ঙ্কর বিষয়, বহু মহিলা এটা জানেনই না; যে তারা POCS কে বহন করে চলেছেন তাদের শরীরে। ফলস্বরূপ গর্ভধারণ ক্ষমতা তাদের কাছে ছুঁড়ে দেয় এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। যদিও চিকিৎসাবিদ্যার অভূতপূর্ব উন্নতির ফলে, ওজনহ্রাস থেরাপির দ্বারা, PCOS এবং তার বিভিন্ন জটিলতাকে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব, যদি প্রাথমিক অবস্থাতে এই রোগ নির্নয় করা যায়।
স্টেইন-ল্যেভেলথ্যাল সিন্ড্রোম বা PCOS, শরীরের হরমোনগুলির অরাজক অবস্থার ফলে সৃষ্ট হওয়া এমন এক ব্যাধি যা সাধারণত দেখা যায়, ১৫ থেকে ৪৪ বছরের মহিলাদের মধ্যে। ওভারীতে জলপূর্ণ গুটিকা হওয়া থেকে শুরু করে এই রোগের সৃষ্ট হওয়ার মূল কারণ, মহিলার দেহের থেকে প্রয়োজনের বেশী মাত্রায় পুং-হরমোন বা অ্যান্ডোজেনের ক্ষরণ । সিস্টটি একটি অপরিণত ডিম্ব যা কখনই পরিণত হয় না, যার ফলে শরীরের অন্যান্য হরমোনগুলো যেমন- ইসট্রোজেন, প্রজেস্টেরন, FSH এবং LH এর মাত্রারও অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। সিস্টগুলির ক্ষতিকারক প্রভাব বেশী না থাকলেও, এ থেকে সৃষ্ট হতে পারে নানান প্রতিবন্ধকতা। ম্যানস্ট্রুয়াল সাইকেলকে বিঘ্নিত করা থেকে শুরু করে, পিরিয়ড্ মিস পর্যন্ত ঘটাতে পারে PCOS। ডিম্বোস্ফোটন প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত থাকার ফলে, মহিলাদের গর্ভধারণেও সমস্যা তৈরি করে PCOS। অনেকক্ষেত্রে এর প্রভাবে মুখের এবং শরীরের নানান স্থানে বেশীমাত্রায় লোমের(চুলের) আবির্ভাব, মেদবৃদ্ধি, ব্রণ, কেশশুন্যতাও (টাক হয়ে যাওয়া) দেখা যায়। PCOS হৃদপিণ্ড জনিত রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, এবং ডায়াবেটিস এর কারণও হয়ে দাঁড়ায় মাঝেমধ্যে!
৭০ শতাংশ মহিলারা যারা PCOS দ্বারা আক্রান্ত, তাদের শরীরে ইনসুলিন প্রতিরোধের এক অদ্ভুত আচরণ দেখতে পাওয়া যায়, যা ব্লাড-সুগারের বৃদ্ধি ঘটায় এবং অ্যান্ডোজেনের ক্ষরণ বাড়ায়। এছাড়া বংশানুক্রমে দিদা বা মায়ের শরীরে যদি PCOS এর উপসর্গ থেকে থাকে, তাহলে পরিবর্তী প্রজন্ম অর্থাৎ মেয়ের শরীর, PCOS-এর প্রকাশক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী।
PCOS এর কিছু কিছু লক্ষণ :
১.অনিয়মিত মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল বা ঋতুচক্র।
২. অ্যান্ডোজেনের অতিরিক্ত মাত্রা
৩. উচ্চ রক্তচাপ
৪. নিদ্রাহীনতা
৫. ঋতুচক্রের সময় অত্যাধিক পরিমাণে রক্ত ক্ষরণ
৬. বন্ধ্যাত্ব
৭. ব্রণ
৮. খুশকি
৯. লোমের বা চুলের বৃদ্ধি
১০. স্থূলতা
১১. টাক পড়া বা মাথার চুল পাতলা হয়ে যাওয়া
১২. বিষন্নত এবং দুশ্চিন্তা
তাহলে এর থেকে মুক্তির উপায়, কি?
ডাক্তারদের মতানুসারে, জীবনশৈলীর পরিবর্তন বা ওজনহ্রাসের দ্বারা অবস্থার খানিক উন্নতি সম্ভব, এমনকি ৫ শতাংশ ওজনহ্রাসও কার্যকরী। যদি তা দিয়ে কোনো ফল না পাওয়া যায়, তাহলে গাইনোকোলজিস্ট ডাক্তার ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন মিশ্রিত জন্মনিয়ন্ত্রিত একধরনের পিল্ বা ট্যাবলেট প্রেসক্রাইব করেন যা অ্যান্ডোজেনের ক্ষরণ কমায়। বহুক্ষেত্রে মেট্ফরমিন্ এবং ক্লোমিফেনও PCOS কমাতে সাহায্য করে। লোমের অত্যাধিক বৃদ্ধিকে কমাতে রোগী যেকোনো ক্রীম ব্যবহার করতে পারেন। যদি এই সমস্তদিক ব্যবহার করেও রোগের সূরাহা না পাওয়া যায় তখন ডাক্তারবাবু সার্জারির পথ অবলম্বন করে রোগমুক্তি করার চেষ্টা করেন।