ডিপ্রেশনের শিকার কৃতিকা – যে সব পিতা-মাতারা এখনো শিশুদের ডিপ্রেশন ব্যাপারটায় আমল দেননি, এবার তাদের ভাবার সময় এসেছে।
নিউক্র্যাড হেলথ বাংলার প্রতিবেদন
কয়েক দিন আগেই আমরা শিশুদের মধ্যে বিষণ্নতা/ডিপ্রেশন কীভাবে থাবা বসিয়েছে সে সম্পর্কে একটি নিবন্ধ লিখেছিলাম; তখন কী আমরা একবারও বুঝতে পেরেছিলাম যে একমাস ও যায়নি অথচ এই ভয়াবহ পরিস্থিতি নিঃশব্দে কেড়ে নেবে একটি ফুটফুটে কিশোরীকে ! প্রমাণ দিয়ে যাবে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির !
কিছুদিন আগেই কলকাতায় বিখ্যাত জি.ডি বিড়লা সেন্টার অফ এডুকেশনের, চৌদ্দ বছর বয়সী এক কৃতি ছাত্রী স্কুলের ওয়াশরুমেই আত্মহত্যা করেছে। কৃতিকা পাল তার কব্জি ব্লেড দিয়ে ছিন্ন-ভিন্ন করার সাথে সাথেই প্লাস্টিকের মধ্য মাথা মুড়িয়ে যন্ত্রণাদায়ক ভাবে শেষ করে দিয়েছে নিজেকে।
কৃতিকা দীর্ঘদিন ধরে বিষণ্নতা থেকে ভুগছিল। মৃত্যুর আগে সে যে তিন পৃষ্ঠার সুইসাইডাল নোট লিখে গেছে; তার প্রথম দুটি পৃষ্ঠা পড়লেই স্পষ্টতই বোঝাযায় যে সে দীর্ঘদিন ধরে তার মৃত্যুর পরিকল্পনা করেছিল। সে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে গেছে; সে দীর্ঘদিন নিদ্রাহীন যন্ত্রণাদায়ক রাত কাটিয়েছে, এমনকি সে নাকি প্রথম শ্রেণীতে পড়াকালীন সময় থেকেই মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করেছে। কৃতিকা দশম শ্রেণীর পরীক্ষায় শীর্ষস্থানীয়া, একজন অত্যন্ত উজ্জ্বল ছাত্রী এবং অষ্টম শ্রেণী থেকেই প্রাক-আঞ্চলিক গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কৃতিকা তার স্কুলের গণ্ডি পার হয়েই ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিকাল ইনস্টিটিউটে এ অধ্যয়ন করতে খুব আগ্রহী ছিল; এমনকি তার প্রস্তুতির জন্য কলকাতা শহরতলিতে বারানগরেই একটি কোচিং ইনস্টিটিউটে সে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছিল। যাইহোক, খুব কম বয়সেই এই উজ্বল প্রতিভা বিষণ্নতার শিকার হয়ে নিজের প্রানটাই বিসর্জন দিতে হল।
আমরা ভারতীয় বাবা-মায়ের কাছে অনুরোধ করছি তাদের সন্তানের বিষণ্নতার বিষয়টির দিকে এবার গুরুত্ব দেন। এবং শিশুর মধ্যে মানসিক যন্ত্রণা, বিষন্নতা বা কোনো রকম পরিবর্তন দেখলে দেরী বা অবহেলা না করে, দ্রুত কাউন্সেলিং করানোর ব্যবস্থা করুন।
বিশেষজ্ঞরা শিশুদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিষণ্নতা সম্পর্কে কি বলছেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতীয় বাবা-মা, বিশ্বের সবচেয়ে নিবেদিতপ্রান অভিভাবকরা হওয়া সত্ত্বেও, প্রায়শই তাদের সন্তানদের মানসিক বিষণ্নতা চোখ বন্ধ করে উপেক্ষা করেন। কখনও কখনও, তাদের এই এই অবহেলার জন্য অচিরেই অতিরিক্ত মূল্য দিতে হতে হয় তাদেরকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) এর সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতবর্ষে তেরো-পনেরো বছর বয়সী, প্রত্যেক চারজন পাঠরত কিশোর কিশোরী মধ্যে একজন মানসিক বিষণ্নতায় আক্রান্ত। সচেতনার সময় এসেছে ।
কৈশোরে বিষণ্নতা/ডিপ্রেশনের লক্ষণগুলি কী?
নীচের বিশদভাবে বিষণ্নতার কিছু সাধারণ লক্ষণ এবং উপসর্গ তুলে ধরা হল:-
১) ছোটখাটো বিষয়ে বিরক্ত হওয়া ও রাগে যাওয়া।
২)দীর্ঘ সময়ের জন্য হতাশাগ্রস্ত থাকা, এবং দুঃখ অনুভব করা।
৩) সামাজিক বৃত্ত থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া।
৪) অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা।
৫) ক্ষুধামন্দা এবং ঘুমের রুটিনে পরিবর্তন ( খুব কম বা খুব বেশী ঘুম যা হোক হতে পারে।)
৬) কোনো কিছুতে মনোনিবেশ করতে অসুবিধা।
৭) দৈনন্দিন কাজগুলি করতে অক্ষম থাকার সময় বিরক্ত হওয়া।
৮) পেট ব্যথা বা মাথা ব্যাথা মতো অস্বস্তি। যা ঔষধ প্রয়োগ করেও কম হয় না।
৯) মৃত্যু বা আত্মহত্যা সম্পর্কে কথা বলা
প্রত্যেক বিষণ্ণ শিশুরাই যে এই সমস্ত উপসর্গগুলি প্রকাশ করবে তা কিন্তু জরুরী নয়। কখনও কখনও, বাচ্চারা যখন সামাজিক মিথস্ক্রিয়া করে তখন স্বাভাবিকভাবেই কাজ করতে পারে, এবং একই সময়ে বাড়ীতে থাকলে উল্টো প্রতিক্রিয়া দেখায়। অনেক ক্ষেত্রেই শিশু স্বাভাবিক আচরণ করলেও, মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করতে থাকে।
কিভাবে বাচ্চাদের বিষণ্নতার মোকাবেলা করা উচিত?
প্রথম এবং সর্বাগ্রে যা প্রয়োজন তাই হলো বাবা-মা ও বাচ্চাদের সাথে অনেকটা সময় ব্যয় করতে হবে।
তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশতে হবে, যাতে শিশুদের মনের অবস্থা সহজেই জানতে পারে।
তাদের সাথে কথা বলার সময়, তাদের কোনো ইচ্ছাকেই অবহেলা করা উচিত নয়। অন্য ভাইবোন বা বন্ধুদের সঙ্গে তাদের তুলনা করা থেকে বিরত থাকা উচিত; কারন এতে তাদের মধ্যে অসঙ্গতি বা নিরর্থক একটি ধারনা সৃষ্টি করতে পারে। বাবা-মায়ের উচিৎ বাচ্চাদের বিভিন্ন এক্সট্রা কারিক্যুলার এক্টিভিটিতে যোগদান করতে উৎসাহিত করা যাতে তারা অন্য শিশুদের সাথে একত্রিত হওয়ার এবং ইতিবাচক চিন্তাভাবনায় সময় ও শক্তি ব্যয় করার সুযোগ পায়। পরিশেষে, নীতিমালাটি এমন হওয়া উচিত যে শিশুরা যা কিছু করে যেন তার মধ্যে সুখ খুঁজে পায়। যে কোনো সময়ে, নেতিবাচক অনুভূতি তাদের মন যেন দখল করতে না পারে, বোঝা হয়ে না দাঁড়ায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে ।
নিউক্র্যাড স্বাস্থ্য কথা – সুস্থ পরিবার, সুস্থ সমাজ । নিউক্র্যাড হেলথ নিয়ে এলো বিশ্বের প্রথম স্বাস্থ্য বিজ্ঞান সংবাদ মাধ্যম আমাদের মাতৃভাষা বাংলা তে । নিউক্র্যাড হেলথ পড়ুন আর স্বাস্থ্য বিজ্ঞান তথ্য সংগ্রহ তে এগিয়ে থাকুন ! শেয়ার করে আমাদের সমাজের সচেনতা বাড়াতে সহযোগিতা করুন । আপনারা পেজ টি লাইক করুন ।
ধন্যবাদান্তে,
ড: বিশ্বরূপ ঘোষ, গবেষক, আমেরিকায় কর্মরত