“কোভ্যাকসিন”- ক্লিনিকাল ট্রায়াল এর জন্য অনুমোদন পেলো ভারতের প্রথম নভেল করোনা ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট
ডঃ শুভময় ব্যানার্জী, পি.এইচ.ডি, নিউক্র্যাড হেলথ বাংলা জুলাই ২, ২০২০
ভারতের ক্রমবর্ধমান করোনা সংক্রমণে নিয়ন্ত্রণ আনতে, কিছুদিন আগেই হায়দ্রাবাদের ভারত বায়োটেক কোম্পানি, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR) এবং ন্যাশনাল ইন্সিটিউট অফ ভাইরোলজি (NIV) এর সাথে যুগ্মভাবে SARS-CoV-2 এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারের কাজে যুক্ত হয়েছিলো। হায়দ্রাবাদের জিনোম ভ্যালিতে অত্যাধুনিক বিএসএল-৩ ল্যাবরেটরিতে (Biosafety Level-3) গবেষণার কাজ চলেছিল। অবশেষে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক এবং ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনেরাল অফ ইন্ডিয়ার (DCGI) সংস্থা সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইসেশান (CDSCO) এই ভ্যাকসিনের হিউম্যান ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ফেজ-১ এবং ২ এর প্রয়োজনীয় অনুমতি দিয়েছে। গবেষণালব্ধ ভ্যাকসিনটির নাম দেওয়া হয়েছে-‘কোভ্যাকসিন’ (Covaxin)। এই বছরের জুলাই মাসের মধ্যেই ট্রায়াল শুরু হতে চলেছে।
এই কোভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে রীতিমতো আশাবাদী ভারত বায়োটেকের চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডঃ কৃষ্ণ এল্লা। তিনি জানিয়েছেন সম্পূর্ণ ভারতীয় জৈব-প্রযুক্তিতে তৈরী হয়েছে এই ভ্যাকসিন। CDSCO সংস্থার বিজ্ঞানীদের পরামর্শ ও সাহায্য এই ভ্যাকসিন তৈরির গবেষণাকে অনেকটাই ত্বরান্বিত করেছে। একই সাথে তিনি তাঁর কোম্পানির গবেষণা বিভাগের সমস্ত গবেষক ও কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রম করে ভ্যাকসিনটি বার করার জন্যে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। প্রি-ক্লিনিক্যাল গবেষণায় ভ্যাকসিনটির যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক ফলাফল পাওয়া গেছে, যার মধ্যে একটি হলো ইমিউনিটিকে বাড়িয়ে তোলার ক্ষমতা এবং আর একটি হলো ভ্যাকসিনটির নিরাপদ ব্যবহার।
ভারত বায়োটেকের জয়েন্ট ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুচিত্রা এল্লা জানিয়েছেন তাঁদের ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা এর আগেও ইনফ্লুয়েঞ্জা (H1N1) প্যানডেমিকের সময়ে সফল ভ্যাকসিন তৈরী করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর মতে, তাদের ‘কোভ্যাকসিন’ এর সাফল্য ভারতে আগামীদিনে আগত যেকোনো বিশ্ব-মহামারীর সাথে লড়াই করার সাহস ও শক্তি যোগাবে।
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য, সারা বিশ্বে এই মুহূর্তে ১৫০টি ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চলছে, তাঁর মধ্যে ১৭টি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে আছে। এদের মধ্যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ভ্যাকসিন তৈরির কাজে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে (ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ফেজ-৩)। আমাদের দেশে এই সময়ে ভারত বায়োটেক ছাড়াও জাইডাস ক্যালিডা, সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া এবং প্যানাসিয়া বায়োটেক বিভিন্ন ক্যান্ডিডেট ভ্যাকসিন নিয়ে প্রি-ক্লিনিক্যাল গবেষণা চালাচ্ছে।
ভারত বায়োটেক তাদের কোভ্যাকসিনের কাজ ছাড়াও আমেরিকার বিখ্যাত ভ্যাকসিন তৈরীর সংস্থা ফ্লুজেন এবং উইস্কন্সিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরাস বিশেষজ্ঞদের সাথে যৌথ ভাবে গবেষণা চালাচ্ছে একটি নতুন করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী ইন্ট্রান্যাসাল ভ্যাকসিনের উপর। তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘করোফ্লু’। এছাড়াও থমাস জেফারসন ফিলাডেলফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ মাথিয়াস স্কেনেলের সাথে যুগ্মভাবে ভারত বায়োটেক কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরির কাজ করছে। থমাস জেফারসনের ল্যাবরেটরিতে আগেই তৈরী হয়েছিল একটি নিষ্ক্রিয় (Inactivated) রেবিস ভ্যাকসিন। বর্তমান গবেষণায় সেটিকে ভেইক্যাল বা বাহক হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। গবেষকদের অনুমান এই ভ্যাকসিন কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে ইমিউনিটি বৃদ্ধি করতে বিশেষভাবে সাহায্য করবে।