ইবোলা ভ্যাকসিন – ইরভিবো অনুমোদিত হল
নিউক্র্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদন
দুদশকব্যাপী গবেষণা ও যত্নশীল মেহনতীর পর প্রকৃত সাফল্যলাভের গন্ডী পেরিয়ে, পৃথিবীবাসীর কাছে উন্মোচিত হল “ইবোলা-ভাইরাস” প্রতিরোধের যথার্ত উপায়। দিনটি, ১১ই নভেম্বর ২০১৯, ইউরোপীয়ান কমিশন দ্বারা অবশেষে অনুমোদিত হল ইবোলা ভ্যাকসিন – ইরভিবো । যার গঠনকারী সংস্থা, মার্ক। বর্তমানে এই ভ্যাকসিনকে কঙ্গোপ্রদেশের বিশেষঞ্জ ও ডাক্তারমন্ডলীরা রোগশয্যাসম্পর্কীত পরীক্ষা হিসাবে ব্যবহার করলেও, মার্কের এই আবিস্কারকে স্বাগত জানিয়ে তা থেকে ইবোলামুক্তীর পথ দেখছেন বিশ্বজুড়ে সমগ্র বিঞ্জানীগণ ও ডাক্তারমন্ডলী। জানা গেছে, মাসখানেকের মধ্যেই ইউরোপীয়ান মেডিসিন এজেন্সী – এর শিল্পত্বের অনুমতিও পাবে ভ্যাকসিন ইরভিবো। মার্কের চেয়ারম্যান ও চিফ্ এক্সিকিউটিভ অভিসার ক্যেন্ ফ্রেয়িজারের মতে, “ইউরোপীয় কমিশনের ইরভিবো-র বাজারী অনুমোদন, এক অভূতপূর্ব সহযোগিতার পথদর্শায়, যা গোটা বিশ্বের কাছে গর্বের”। তিনি আরও বলেন, ইবোলা প্রতিরোধক ‘ইরভিবো’-এর উন্নয়ন, মনুষ্যজাতির ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক ধারাবাহিক ক্রম। বর্তমানে মার্কের মূল লক্ষ্য দূষ্পাপ্য এই ভ্যাকসিনের পরওয়ানা পাওয়া, যার উদ্দেশ্যে মার্ক, যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এন্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন(FDA)-এর সহায়তায় তৎপর। মার্কের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায়, তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর সাথে কাজ করে এই ভ্যাকসিনের অপরিহার্যতা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দিতেও উৎসাহী শীল। এই পদক্ষেপের দ্বারা মানুষের মনে এই ভ্যাকসিনের প্রতি আস্থাস্থাপন এবং ভ্যাকসিনের প্রতি ভয় দূরীকরণ সম্ভব।
মারণ ভাইরাস ইবোলার প্রাদুর্ভাব, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ডেকে এনেছে মৃত্যুমিছিল। ১৯৭৬ সালে প্রথম ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞদের নজরে আসে এই ভাইরাস, সুদানে এবং কঙ্গোপ্রদেশে। ২০১৪-১৬ সালের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে প্রায় ২৮ হাজার রোগীর দেহে, যার মধ্যে মারা যান ১১ হাজারেরও বেশী মানুষ। ইহা ইবোলা ভাইরাসের দলিল রচনার সবচেয়ে অন্ধকার পাতা। তাই ইবোলা প্রতিরোধক ভ্যাকসিনের পরওয়ানায় উদ্গ্রীব ইউরোপীয় কমিশন্। যদিও FDA এর কাছে এই ভ্যাকসিনের পুরোপরি ব্যবহারের শংসাপত্র দেওয়ার সময় আগামী ইংরাজী বছরের মার্চমাস পর্যন্ত।
ফাইলোভীরিডেই পরিবারের অন্তর্গত মারণ ভাইরাস ইবোলার উৎপত্তির রহস্য আফ্রিকার “ফ্রুট ব্যাট”-দের মধ্যে। যা পরবর্তীতে মানুষের দেহেও প্রেরিত হয়। সাধারণত ছয় ধরনের ইবোলা দেখতে পাওয়া যায় – Bundibugyo, Reston, Sudan, Taï Forest, Zaire, এবং Bombadil virus. যদিও এই ছয় ধরনের মাত্র চার ধরনের ভাইরাসই মানুষদের দেহে আটক করে – Ebola, Sudan, Taï Forest, and Bundibugyo । Reston ভাইরাস রোগ-সংক্রমণ ঘটায় মূলত শূকরদের দেহে। Bombadil শেষ শনাক্তকারী উপপ্রকার যা প্রাথমিকভাবে বাদূরদের দেহে উপস্থিত থাকে। ইবোলা এমনই এক জুনোটিক সংক্রমণ যা মূলত জীবজন্তুর শরীর থেকে মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়। যার বাহক হিসাবে কাজ করে শিম্পাঞ্জি, বুনো হরিণ, সজারু, বাদর ও গরিলা ইত্যাদি প্রাণীরা। প্রাণীরক্ষকদেরও এক অংশ এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে, যদি তারা সংক্রমিত প্রাণীদের রক্ত বা দৈহিক তরলের সংস্পর্শে আসে।
বিঃদ্রঃ – ডিজিজ কনট্রোল এন্ড প্রিভেনশন কেন্দ্রের মতে, ইবোলা জার্মের সংক্রমণের ৮-১০ দিন পরে কিছু লক্ষণ দেখা যায়। লক্ষণগুলি নিম্নরূপ : ডাইরিয়া, জ্বর, মাথার যন্ত্রণা, জয়েন্ট ও পেশিতে ব্যথা, র্যাশ, লালবর্ণের চোখ, শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, দুর্বলতা, বুকে ব্যথা, গলা ব্যথা, হঠাৎ ওজন হ্রাস, আভ্যন্তরীণ যুগ্ধপীড়ন, আঘাত বিবর্ণ হওয়া, এমনকি চোখ দিয়ে রক্ত পড়া। রোগের প্রবণতা বাড়ার সাথে সাথে কান, নাক এমনকি মলদ্বার দ্বারাও রক্তক্ষরণ হয়।