DRDO, JNU-এর বিজ্ঞানীরা একটি শক্তিশালী অ্যানথ্র্যাক্স ভ্যাকসিন তৈরী করলেন
নিউক্র্যাড হেলথ বাংলার প্রতিবেদন
একদল ভারতীয় বিজ্ঞানী সম্প্রতি অ্যানথ্রাক্সের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী টিকা আবিষ্কার করেছেন।
প্রচলিত ভ্যাকসিনগুলির চেয়ে এটি অনেক বেশি উন্নত বলে দাবি করা হয়েছে। কারণ এটি অ্যানথ্রাক্সের টক্সিন গুলির সাথে সাথেই, অ্যানথ্রাক্সের স্পোর গুলির বিরুদ্ধেও মানবদেহে ইম্যিউন রেসপন্স তৈরি করে।
অ্যানথ্রাক্স একটি মারাত্মক মানব রোগ যা ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিসের কারণে সৃষ্ট হয়। অ্যানথ্রাক্স ঘোড়া, ভেড়া, গবাদি পশু এবং ছাগলদের মতো প্রাণীকেও সংক্রামিত করে। তবে মানুষের, শূকর এবং কুকুররা তুলনামূলকভাবে কম সংবেদনশীল এবং অত্যধিক বেশি পরিমাণ স্পোরের সংস্পর্শে এলে তবেই এরা সংক্রামিত হয়। 2001 সালে, আমেরিকায় কিছু লোককে অ্যানথ্রাক্স স্পোর সম্বলিত চিঠি পাঠিয়ে ভয় দেখানো হয়; এই স্পোরগুলি জৈব-সন্ত্রাসবাদের এজেন্ট হিসাবে ব্যবহার করা হত। যার ফলে জনমানসে ব্যাপক ভয়ের সঞ্চার ছড়িয়ে পড়ে।
অ্যানথ্রাক্স সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াম গুলি মাটির মধ্যেই উপস্থিত থাকে এবং বছরের পর বছর ধরে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকতে পারে। যাইহোক, অনুকূল পরিবেশে তারা সক্রিয় হয়ে ওঠে ও জার্মিনেট করতে শুরু করে। প্রায়শই, পশুরা চারণভূমিতে এই স্পোরগুলি অন্যান্য খাবারের সাথে খেয়ে ফেলে, এরপর পশুদের পেটের ভেতর গিয়ে জার্মিনেট করে এবং দেহের ভেতর বিষক্রিয়া তৈরি করে।
বাজারে পাওয়া যায় অ্যান্টি-অ্যানথ্র্যাক্স ভ্যাকসিনগুলি সাধারণত ব্যাসিলাস প্রোটিন-রক্ষাকারী অ্যান্টিজেন-এর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা তৈরি করে। ব্যাসিলাস প্রোটিন-রক্ষাকারী অ্যান্টিজেনটি এমন একটি প্রোটিন যা কোষের ভিতরে ব্যাসিলাস টক্সিনগুলি পরিবহনে সহায়তা করে। এর মানে হল যে এই প্রচলিত অনাক্রম্য প্রতিক্রিয়া কেবল তখনই ট্রিগার হয় – যখন অ্যানথ্রাক্সের স্পোর গুলি শরীরের মধ্যে জার্মিনেট করে এবং ব্যাকটেরিয়াল প্রোটিন গুলি উৎপাদন শুরু করে। তাহলে বুঝতেই পারছেন, এই ধরনের ভ্যাকসিন নিলে ব্যাসিলাস স্পোরের উপর কোনও প্রতিরক্ষা প্রতিক্রিয়াই প্রদর্শিত হবে না। শুধুমাত্র স্পোর গুলি জার্মিনেট করে জীবাণু বিষক্রিয়া করতে শুরু করলে টিকাগুলি কাজ করতে শুরু করবে।
এই গবেষণায় দেখা গেছে যে, যখন ভ্যাকসিনের সাথে নিষ্ক্রিয় অ্যানথ্রাক্সের স্পোরগুলি ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে প্রয়োগ করা হয়, তখন ব্যাসিলাসের প্রতি সুরক্ষা অনেক গুন বেড়ে যায়।
ডিফেন্স রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট ল্যাবরেটরি (DRDL), মাইসোর ও জওহরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটির (JNU) গবেষকেরা এমন একটি টীকা তৈরী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা অ্যানথ্রাক্সের টক্সিন এবং এর স্পোর উভয়ের বিরুদ্ধেই কার্যকর হবে। এবং একটি টীকাই একজন ব্যক্তিকে সম্পূর্ণ সুরক্ষা প্রদান করবে।
তাদের এই ভাবনা সফল করতে গিয়েই – তারা দুটি জিনের অংশকে একসাথে জুড়ে দেন। এই জিন দুটি হল – প্রতিরক্ষা দানকারী অ্যান্টিজেন প্রোটিনের জিন এবং স্পোরের বহিঃআবরনে উপস্থিত প্রোটিনের জিন। এইভাবে সংযুক্ত জিনদুটি থেকে উৎপন্ন প্রোটিনটি দুটি প্রোটিনের মিশ্রণ ছিল; এই মিশ্রিত ও নতুন প্রোটিনটি তাঁরা ইঁদুরের দেহে ইনজেক্ট করেন। কয়েকদিন পর, বিজ্ঞানীরা দেখেন যে ইঁদুরের দেহে ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল তার রক্তে ঐ মিশ্রিত প্রোটিনটির বিরুদ্ধে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবডিগুলির তৈরী হয়েছে, যা ইনজেক্টেড প্রোটিনটির বিরুদ্ধে ইমিউ্যন রেসপন্স দেখায়।
সাথে সাথেই এও পাওয়া গেছে যে এই অ্যান্টিবডিগুলি পৃথকভাবেও প্রতিরক্ষামূলক অ্যান্টিজেন এবং স্পোরের বহিঃআবরনে উপস্থিত প্রোটিন উভয়ের বিরুদ্ধেই আলাদা আলাদা ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম।গবেষকদের তৈরি এই নতুন ভ্যাকসিনটি কিন্তু অ্যানথ্রাক্সের স্পোরে এবং অ্যানথ্রাক্সের তৈরি টক্সিন উভয়ের বিরুদ্ধে মানবদেহে সক্রিয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম।
DRDL এর এই গবেষণায় যুক্ত এক গবেষক জোসেফ কিংস্টন জানিয়েছেন যে, “তাদের তৈরী এই নতুন ভ্যাকসিনটি যেহেতু এবং টক্সিন দুইয়ের এর বিরুদ্ধেই একসাথে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম; তাই এটি বাজারে প্রচলিত অন্যান্য যে কোন অ্যানথ্রাক্সের ভ্যাক্সিনের এর থেকেই যে অনেক উন্নত এ বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।”
যদিও অ্যানথ্রাক্সেরর জন্য বাজারে অনেক অ্যান্টিবায়োটিক ও প্রচলিত আছে। কিন্তু একবার অ্যানথ্রাক্স হবার দুই-তিনদিনের মধ্যেই মানুষ বিষক্রিয়ায় মারা যায় তাই আগে থেকেই দেহে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য এই ভ্যাকসিন এর কোনো জুড়ি নেই। কারন এক্ষেত্রে বিষক্রিয়া শুরুর পর চিকিৎসা করার সেরকম আর কোনো সুযোগ পাওয়া যায় না।
ভবিষ্যৎ নির্দেশনা নিয়ে আলোচনা করার সময়, গবেষণা এবং সহকারী অধ্যাপক রাকেশ ভাতনগর, জেএনইউর একজন অধ্যাপক ড।, বলেন, “আমরা উচ্চ রক্তচাপের মডেলগুলিতে বসিলেস স্পোরস এবং বিষাক্ত বিষাদের বিরুদ্ধে এই ভ্যাকসিনের সুরক্ষা কার্যকারিতা অধ্যয়ন করতে চাই।”
ভবিষ্যৎ নির্দেশনা নিয়ে আলোচনা করার সময়, JNU-এর গবেষক এবং সহকারী অধ্যাপক রাকেশ ভাটনগর বললেন, “এবার আমরা উচ্চতর প্রাণী গুলিতে এই ভ্যাকসিন এর প্রয়োগ কতটা সফল ভাবে করা যায় তার ওপর অধ্যায়ন চালাবো।”
এই গবেষণা দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন DRDL-এর সৌগত মজুমদার, শ্রেয়া দাস, শিবকিরণ এস. মাকাম এবং JNU-এর বিকাশ কুমার কুমার সোমনি।এই গবেষণাটি র ফলাফল ফ্রন্টিয়ার্স ইন ইমিউনোলজি (Frontiers in Immunology) তে প্রকাশিত হয়েছে।
নিউক্র্যাড স্বাস্থ্য কথা – সুস্থ পরিবার, সুস্থ সমাজ । নিউক্র্যাড হেলথ নিয়ে এলো বিশ্বের প্রথম স্বাস্থ্য বিজ্ঞান সংবাদ মাধ্যম আমাদের মাতৃভাষা বাংলা তে । নিউক্র্যাড হেলথ পড়ুন আর স্বাস্থ্য বিজ্ঞান তথ্য সংগ্রহ তে এগিয়ে থাকুন ! শেয়ার করে আমাদের সমাজের সচেনতা বাড়াতে সহযোগিতা করুন । আপনারা পেজ টি লাইক করুন ।
ধন্যবাদান্তে,
ড: বিশ্বরূপ ঘোষ, গবেষক, আমেরিকায় কর্মরত