COVID-19 মহামারী চলাকালীন গর্ভবতী মহিলাদের কীভাবে নিজের যত্ন নেওয়া উচিত?
নিউক্র্যাড হেলথ বাংলা মে 15, 2020
গর্ভাবস্থা মহিলাদের জীবনে এটি একটি অসাধারণ ও আনন্দের সময়। কিন্তু COVID-19-এর মহামারীর ত্রাস, গর্ভবতী মায়েদের এই আনন্দের দিনগুলিতে, ভীতি ও মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে। মহিলারা SARS-CoV-2 ভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে কুঁকড়ে রয়েছে, এবং গর্ভস্থ শিশুটিকে করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR) -এর তথ্যানুযায়ী জানা গেছে যে গর্ভবতী মহিলারা যদি SARS-CoV-2 দ্বারা সংক্রামিত হন, তবে ভাইরাসের উল্লম্ব সংক্রমণ (অর্থাৎ, মা থেকে শিশুর দেহে সংক্রমণ) সম্ভব। তাই মায়েদের (বিশেষত যাদের কার্ডিয়াক সমস্যা আছে) কড়া নিরাপত্তার মধ্যে থাকার ও সামাজিক দূরত্ব অনুশীলন করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মহামারীকালীন সন্তানসম্ভবা নারীরা কীভাবে নিজেদের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন, তা নিম্নে আলোচনা করা হল।
সংক্রামিত মা থেকে ভ্রূণে SARS-CoV-2 সংক্রমণ কী সম্ভব?
আপাত গর্ভস্থ মায়ের দেহ থেকে সন্তানের দেহে থেকে SARS-CoV-2 ভাইরাসের উল্লম্ব সংক্রমণ সম্পর্কিত সীমিতসংখ্যক তথ্য রয়েছে। 2020 সালের মার্চ মাসে হুই জেং এবং তার গবেষকদল দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে করোনা আক্রান্ত গর্ভবতী মহিলাদের সন্তানের দেহে COVID-19 অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। যা পরোক্ষে এটাই প্রমাণ করে, যে ভ্রূণটি জরায়ুর ভিতরে থাকাকালীনই SARS-CoV-2 এর সংস্পর্শে আসে, ফলে তাদের দেহে অ্যান্টিবডিগুলির বিকাশ ঘটে। তবে বিজ্ঞানীরা নাভিরজ্জু (umbilical cord) রক্তে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি সনাক্ত করতে পারেননি। 2020 সালের ফেব্রুয়ারিতে ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণার উল্লেখ করা হয়েছে, যে করোনা আক্রান্ত মায়ের গর্ভ থেকে জন্মগ্রহণকারী ছয় শিশুর অ্যামনিয়োটিক ফ্লুইড এবং নাভিরজ্জু (umbilical cord) রক্ত পরীক্ষা করেও SARS-CoV-2 ভাইরাসের উপস্থিতির কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে যাইহোক এই ক্ষেত্রে কোন সিদ্ধান্ত না নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে হবে। আর গর্ভবতী মহিলারা যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলে, এবং পাশাপাশি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে যে সমস্ত নির্দেশিকাগুলি বলা হয়েছে,তা মেনে চলাই উচিৎ বলে মনে করছেন চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী মহল। বিশ্বের বহু জায়গায় দু-তিন দিনের শিশুর দেহে ও করোনাভাইরাস উপস্থিতি ধরা পড়েছে; বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে এই সংক্রমণ তাদের পরিবারের নিকটস্থ কোনো ব্যক্তির দেহে থেকে এসেছে।
করোনা পজেটিভ গর্ভবতী মহিলাদের কি গর্ভস্থ ভ্রূণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা রয়েছে?
বিভিন্ন গবেষণার তথ্য অনুযায়ী এটা প্রমাণিত যে, 2002-2003 সালে যে সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (SARS) দেখা দিয়েছিল, তাতে অনেক মহিলার গর্ভস্থ-ভ্রূণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার খুব ঝুঁকি ছিল। তবে 2019 সালের করোনাভাইরাস এর ক্ষেত্রে এখনও সেই ধরনের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে হ্যাঁ, শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা বা ইনফুয়েঞ্জার মতো ভাইরাস ঘটিত সংক্রমণে আক্রান্ত গর্ভবতী মহিলারা খুব কম ওজনের শিশুর জন্ম দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে অনেক সময়ে বাচ্চা প্রসবের সম্ভাবনা রয়েছে। কোনো ভাইরাস ঘটিত সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে ভ্রূণের বিকলাঙ্গতা খুব কম ক্ষেত্রেই দেখা যায়। সুতরাং, এই নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তার কোনো কারণ নেই।
এই মহামারী সময় গর্ভবতী মায়েরা কিভাবে চিকিত্সকের কাছে যাবেন বা পরামর্শ নেবেন?
সাধারণভাবে গর্ভবতী থাকাকালীন অবস্থায় একজন মহিলার অনেকবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন। বর্তমান দিনে বেশিরভাগ গাইনোকোলজিস্ট টেলিমেডিসিনের সাহায্যে পরামর্শদান করে থাকেন যদি না খুব একটা বাড়াবাড়ি কোনরকম সমস্যা দেখা দেয়। ব্লাড সুগার, ব্লাড প্রেসার ইত্যাদির ছোটখাটো বিষয়ে তারা ইমেল, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে রিপোর্ট চিকিৎসকের কাছে পাঠিয়ে সে বিষয়ে পরামর্শ নিতে পারে। এছাড়া অন্যান্য কোন ধরনের পরামর্শ নেয়ার জন্য ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। যদি এই সমস্ত ক্ষেত্রে চিকিৎসক যদি অতিরিক্ত-রকম কোনো শারীরিক সমস্যা দেখেন, বা রোগীর যদি প্রয়োজন হয়, তাহলেই সামনাসামনি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে থাকেন। তবে হ্যাঁ টেলিমেডিসিনের সাহায্য নিলে, সামনাসামনি স্বাস্থ্য পরীক্ষা সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে করোনা সংক্রমনের ঝুঁকি অনেকটা কমে যাবে ।
আমাদেরকে মনে রাখতে হবে আমাদের এই পরিস্থিতি ক্ষণস্থায়ী, তাই গর্ভবতী মহিলারা যতটা সম্ভব মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকতে হবে থাকার চেষ্টা করুন বা থাকার চেষ্টা করতে হবে । সামাজিক দুরত্ব মেনে চলুন এবং এই সময়ে বাড়ির বাইরে যতটা সম্ভব কম বেরোনোর চেষ্টা করুন। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।