BCG ভ্যাকসিনেই সেরে যাবে নাকি সারবে করোনাভাইরাস, সত্যি কী তাই?
করোনাভাইরাস ফ্যাক্ট চেক – কোন বৈজ্ঞানিক তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি এখনো পর্যন্ত। এখন প্রায় প্রতিদিনই আমরা COVID-19 মহামারীর বিভিন্ন সম্ভাব্য চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য শুনতে পাচ্ছি। বিভিন্ন বিজ্ঞানীদল করোনার লক্ষণগুলি কম করার বা দ্রুত আরোগ্য দিতে সক্ষম এমন বিভিন্ন ওষুধ দাবি করছেন। যদিও এগুলি সব সত্যি নয় এদের মধ্যে কিছু ওষুধ এখনো ক্লিনিকাল ট্রায়ালের পর্যায়ে আছে; কিন্তু অনেক ঔষধের কার্যকারীতা গুজবের ন্যায় ছড়িয়ে পড়ছে। এরকমই একটি সংবাদ হল BCG ভ্যাকসিন (ব্যাসিল ক্যালমেট-গুয়েরিন) নাকি নোবেল করোনভাইরাস প্রতিরোধে সক্ষম। আসুন দেখে নেওয়া যাক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং অন্যান্য নামীদামী ড্রাগ কন্ট্রোল ইউনিটগুলি এ বিষয়ে কি বলছেন।
BCG ভ্যাকসিন কী?
BCG ভ্যাকসিনটি যক্ষা সৃষ্টিকারী জীবাণু মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস এর বিরুদ্ধে কার্যকার। ভ্যাকসিনটি মাইকোব্যাক্টেরিয়াম বোভিস নামক একটি ব্যাকটিরিয়া থেকে তৈরী করা হয়। ফরাসী ব্যাকটিরিওলজিস্ট আলবার্ট ক্যালমেট এবং ক্যামিল গুয়েরিন 1960-1921 সাল পর্যন্ত 13 বছর ধরে লাগাতার প্রচেষ্টায় এই ভ্যাকসিনটি তৈরি করেছিলেন। এই ভ্যাকসিনের নামটি আবিষ্কারকের নাম থেকেই দেওয়া। যক্ষ্মা সংক্রমণের বিরুদ্ধে সুরক্ষাকবচ তৈরী করতে ভারত সহ, এশিয়ার অনেক দেশ সদ্যজাত শিশুর দেহে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে থাকে। তবে ইউরোপ এবং আমেরিকান দেশগুলিতে ম্যাকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস সংক্রমণের হার অনেক কম হওয়ায় ,এই ভ্যাকসিন বাধ্যতামূলক নয়।
BCG ভ্যাকসিন এবং COVID-19 সম্পর্কে WHO কী বলছে?
2020 সালের 12 এপ্রিল প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে WHO, BCG ভ্যাকসিন করোনভাইরাস বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা গড়তে সক্ষম এই দাবী প্রত্যাখ্যান করেছে। WHO-এর তরফ থেকে জানানো হয়েছে করোনা প্রতিরোধে BCG-এর কার্যকারিতা সম্পর্কে কোনো পরীক্ষামূলক প্রমাণ নেই। BCG ভ্যাকসিন নন্-স্পেসিফিক ভাবে, হিউম্যান ইমিউনিটি সিস্টেমর উপর বেশকিছু ইতিবাচক প্রভাব তৈরী করে, বিজ্ঞানীরা সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করেই করোনা প্রতিরোধে সক্ষম এই ধারণা পেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। যেসব দেশে নবজাতকদের BCG টিকা বাধ্যতামূলক সেই দেশে করোনা সংক্রমণের প্রাদুর্ভাবের তথ্যের সাথে, যেসব দেশে জন্মের পরে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হয় না তাদের দেশে করোনা সংক্রমণের হারের তথ্যের তুলনার ভিত্তিতে, বিজ্ঞানীরা এই মতামত পেশ করেছেন। তবে, আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে এই জাতীয় তথ্য অনেকগুলি ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে, যেমন সেখানকার জনঘনত্ব, ডিজিজ বার্ডেন, COVID-19 টেস্টের হার ইত্যাদি। তাই যথাযথ প্রমাণ বা ক্লিনিকাল ট্রায়াল ছাড়া SARS-CoV-2 ভাইরাসের বিরুদ্ধে BCG-ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়।
SARS-CoV-2 প্রতিরোধে BCG-ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা সম্পর্কে কি কোনো পরীক্ষা -নিরীক্ষা চলছে?
সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া (SII), COVID-19 সংক্রমণ প্রতিরোধে BCG ভ্যাকসিনের ক্রিয়া সম্পর্কে একটি পরীক্ষা পরিচালনা করছে। ভারতের ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (DCGI) এই ক্লিনিকাল ট্রায়ালটির অনুমোদন দিয়েছে। এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য 6000 বেশি উচ্চ-ঝুঁকি সম্পন্ন স্বেচ্ছাসেবক প্রার্থীকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই প্রার্থীদের বেশিরভাগই স্বাস্থ্য-সেবাকর্মীদের পরিবারের সদস্য বা করোনা আক্রান্ত রোগীদের খুব কাছের সদস্য। ভারতে প্রায় 40 টি হাসপাতাল এই ক্লিনিকাল ট্রায়ালে অংশগ্রহণ করেছে। পুনের, KEM হাসপাতাল, ভারতী হাসপাতাল এবং সিম্বোসিস হাসপাতালের সাথে এই ট্রায়ালের জন্য ভারতীয় সেরাম ইনস্টিটিউটের সাথে চুক্তি করেছে। SII এর মালিক এবং সিইও আদর পূ্নওয়াল্লা বলেছেন, এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মূল উদ্দেশ্য হল BCG ভ্যাকসিন (VPM1002) আদেও উচ্চ জ্বর, শ্বাসকষ্ট এবং কাশির মতো SARS-CoV-2এর বিভিন্ন উপসর্গগুলি নিরাময়ে কার্যকর কিনা তা খুঁজে বের করা। SARS-CoV-2 সংক্রামিত ব্যাক্তির সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠার টাইম ডিউরেশন এর ক্ষেত্রে এই ভ্যাকসিনের কোনো প্রভাব আছে কীনা, সে বিষয়টি সম্পর্কেও অধ্যয়ন করা হবে। অনুরূপ ক্লিনিকাল ট্রায়াল অন্যান্য COVID-19 আক্রান্ত দেশগুলির পরীক্ষাগারেও চলছে। জার্মানের পল এর্লিচ ইনস্টিটিউট (PEI) -ও BCG ভ্যাকসিনের কার্যকরীতা নিয়ে একটি গবেষণাও শুরু করেছে।
তবে বর্তমানে আমাদের কাছে এই ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলির ফলাফল নেই। সুতরাং, এই মুহুর্তে, যেসব দেশে BCG ভ্যাকসিন বাধ্যতামূলক, সেখানে COVID-19 মহামারী প্রতিরোধ সম্পর্কে আত্মতৃপ্ত হবার কোনো কারণ নেই। বিখ্যাত টিবি গবেষক এবং ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক টিবি সেন্টারের পরিচালক, মধুকর পাই, BCG ভ্যাকসিন সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, “এটি মোটেও করোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে কোনও যাদু বুলেট নয়, তাই যে সব প্রার্থীদের BCG ভ্যাকসিনের টীকা নেওয়া আছে, মহামারী চলাকালীন নিরাপদ থাকার জন্য তাদেরকেও সমস্ত ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
References: