স্কটল্যান্ডের স্কুলের মেয়েদের রুটিন এইচপিভি টিকা, সার্ভিকাল ক্যান্সার এর প্রকোপ উল্লেখযোগ্য হ্রাস করেছে
নিউক্র্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদন, কলমে- শুভ্রা অধিকারী, অনুবাদ ও অক্ষরদানে-মোনালিসা মহান্ত।
হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস ভ্যাকসিন বিভিন্ন ধরনের সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজের বিরুদ্ধে আপনার দেহে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলে। স্কটল্যান্ডে কিন্তু ইতিমধ্যেই হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য – ভ্যাকসিন পদ্ধতি চালু হয়ে গেছে।
হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস হল এক ধরনের খতরনাক অনুজীব। সিডিসির (CDC) এর তথ্য অনুসারে এই মুহূর্তে ইউরোপের প্রায় 80 মিলিয়ন মানুষ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত। প্রতিবছর প্রায় 14 মিলিয়ন তরুণ-তরুণী প্রতিনিয়ত এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ভারতে প্রায় 132000জন এই ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত। এবং এর ফলে তারা সার্যভিকল্ ক্যান্সারে ভুগছেন এমন 74000 জন মানুষ মারা যাচ্ছে প্রতি বছর।
সাধারণত যদি কোন ব্যক্তি হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় তাহলে দুই বছরের মধ্য নিজে নিজেই কিন্তু এই ভাইরাস ব্যক্তির দেহ থেকে ইর্যাডিকেড হয়ে যায় অর্থাৎ সেরে যায় বা জীবাণু মুক্ত হয়ে যায়। কিন্তু কোন ক্ষেত্রে এটা দু’বছর – তিনবছর বা তারও বেশি সময় ধরে মানুষের দেহে রয়ে যায়, তখনই শুরু হয় না ধরনের রোগের। মেয়েদের ক্ষেত্রে সারভিক্স, ভ্যাজাইনা, ভালভা ইত্যাদি অঞ্চলে ক্যান্সার সৃষ্টি করে। পুরুষদের দেহে পুরুষাঙ্গের ক্যান্সার দেখা যায়। এছাড়াও স্ত্রী পুরুষ নির্বিশেষে গলা-টনসিল এই অংশগুলিতেও প্রাথমিক স্তরে ঘা ও পরে ক্যান্সার সৃষ্টি করে। পায়ুপথে ক্যান্সারেরো প্রধান কারণ এই ভাইরাসটি।
2008 সালে, স্কটল্যান্ড 12-13 বছর বয়সী সমস্ত স্কুলে যাওয়া মেয়েদের জন্য একটি জাতীয় এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচি চালু করেছে। 18 বছর পর্যন্ত মেয়েদের জন্য একটি ক্যাচ-আপ প্রোগ্রাম ও ছিল।
টিম পামারের নেতৃত্বে, এডিনবার্গের ইউনিভার্সিটি থেকে তার দল 2008 থেকে 2016 সাল পর্যন্ত দীর্ঘদিন গবেষণা চালান- অস্বাভাবিকভাবে ক্যান্সার কোষ তৈরি হওয়া এবং সার্ভিক্যাল লেশন (ঘা/ক্ষত) বা সার্ভিক্যাল ইনট্র্যাপিটেলিয়াল নিউোপ্লাসিয়া (CIN) বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য টিকাদান কর্মসূচি কতটা কার্যকর তার উপর। গবেষণায় দেখা গেছে যে স্কুলের মেয়েরা নিয়মিত টিকা নিয়েছে সেখানের মেয়েদের সার্ভিক্যাল বিভিন্ন রোগ আক্রান্ত হবার হার অবিশ্বাস্য রকম কম হয়েছে।
টিকা নিয়েছে এমন মেয়েদের প্রাক-ক্যান্সার কোষ গঠনের পরিমাণ বা হার প্রায় 90 শতাংশ কমে ছিল।
বিজ্ঞানীরদের মতে এই প্রোগ্রামটি “প্রত্যাশার চেয়েও বেশি কার্যকরী”। এই টিকাটি অত্যন্ত কার্যকর, এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সার্ভিকাল ক্যান্সার কমানোর ক্ষেত্রে এটি যাদুকরী প্রভাব দেখাচ্ছে।
হিউম্যান প্যাপিলমা ভাইরাস (HPV) কী?
এত আলোচনার ও গবেষণা যে ভাইরাসের উপর সেটি সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরা যাক।এটি অধুনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এমন একটি ভাইরাস। HPV মানুষের মধ্যে যৌন সংক্রমণ সৃষ্টি করে। এখনো পর্যন্ত প্রায় 100 টি আলাদা আলাদা প্রজাতির HPV দেখা গেছে। যার মধ্যে প্রায় 30 টিরও বেশি প্রজাতির ধরনের স্ত্রী ও পুরুষদের যৌন অঙ্গগুলিতে; যেমন – ভালভা,যোনি,ভ্যাজাইনা, পেনিস্, মলাশয় এবং পায়ুপথে আক্রমণ করে।। 14 টি প্রজাতিকে ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে; এই প্রজাতিগুলি সারভ্যিক্যাল ক্যান্সার তৈরি করে। গবেষকরা জানিয়েছেন যে সব পুরুষ ও মহিলা যথেচ্ছ যৌনাজীবন কাটান; তাঁরাই মূলত জীবনের যে কোন পর্যায়ে HPV ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হন।
এটি সাধারণত যোনিপথে, মুখ বা পায়ূপথে বিকৃতভাবে যৌনমিলনের সময় এক ব্যক্তি থেকে আরেকজনের দেহে সংক্রামিত হয়।
এখনো পর্যন্ত HPV সংক্রমিত ব্যক্তির জন্য কোন চিকিৎসা পদ্ধতি নেই। যেহেতু এর কোনো প্রতিকার নেই, প্রাথমিকভাবে কৈশোরকালে টীকাকরন করিয়ে নেয়াই এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য নিরাপদ ও কার্যকরী পদক্ষেপ।
কিভাবে HPV সার্ভারিক্যাল ক্যান্সার তৈরী করে?
HPV এর কয়েকটি স্ট্রেন সার্ভারিক্যাল ডিসপ্লেসিয়া তৈরী কর; যা পরবর্তী পর্যায়ে সার্ভিক্যাল ক্যান্সারের আকার ধারণ করে । তবে হ্যাঁ, HPV ইনফেকশন আছে এমন প্রত্যেক মহিলারি যে নিশ্চিত সার্ভিক্যাল ক্যান্সার হবেই তা নয়; এটা আমাদের প্রত্যেকের জেনে রাখা দরকার। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ মনে রাখবার মতো বিষয় হলো, একধরনের প্যাপ (PAP) টেস্ট আছে; যার সাহায্যে মেয়েদের গর্ভাশয়ে কি পরিবর্তন হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে ম্যালিগনেন্সির সম্ভাবনা আছে কিনা সে সম্পর্কে আগাম কিছু জানা সম্ভব হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, যদি একদম প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে তাহলে কিন্তু সার্ভিক্যাল ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
HPV ভাইরাসের আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কখন বেশি হয় ?
কিছু বিষয় যা HPV সংক্রমের সম্ভাবনা বা রিস্ক ফ্যাক্টর বৃদ্ধি করে। যেমন যেসব ব্যক্তির একাধিক যৌনসম্পর্ক আছে; বা এমন করো সাথে শারীরিক-সম্পর্ক রয়েছে যার একাধিক যৌনসম্পর্ক আছে; বা হয়তো HIV র মতো সংক্রমণের কারণে ইমিউনিটি সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়েছে; বা ত্বক বা কুঁচকির দিকে ক্ষত বা ঘা থেকে থাকলে- HPV সংক্রমের সম্ভাবনা খুবই বেশি থাকে।
তবে কোন বয়সে HPV টিকাকরন করাবেন?
HPV টিকা নেওয়ার জন্য আদর্শ বয়স 11 থেকে 12 বছর। এবং যিনি টিকা নিচ্ছেন তার কিন্তু অবশ্যই 6 থেকে 12 মাসের ব্যবধানে ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ নেওয়া আবশ্যক। যদি কোনও কিশোরীকে পাঁচ মাস আগেই দ্বিতীয় ডোজটি দেওয়া হয়, তাখন ডাক্তাররা তাদেরকে তৃতীয় ডোজ নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেন; এতে HPV সংক্রমণ প্রতিরোধী ক্ষমতা বৃদ্ধি। 14 বছরেরও বেশি বয়সী যে সব মেয়েদের টীকাকরন করানো হয় তাদের জন্যরা ভ্যাকসিনের তিনটি ডোজ প্রয়োজন হয়।
নিঊক্র্যাড হেলথ বাংলা সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করে। সুস্থ থাকুন, সাথে থাকুন।