ডিসেম্বর 23, 2024

মডার্নার ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট mRNA-1273 আশাপ্রদ ফল পেলো প্রাথমিক হিউম্যান ট্রায়ালে

person-holding-a-vaccine-4047186 (1)
Reading Time: 3 minutes

ডঃ শুভময় ব্যানার্জী, পিএইচডি, নিউক্র্যাড হেলথ ডেস্ক, জুলাই ২০,২০২০

কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিকে সারা পৃথিবী জুড়ে প্রায় ১৩ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত, দৈনিক মৃত্যুমিছিল অব্যাহত। এই কঠিন পরিস্থিতিতে সর্বাগ্রে দরকার নিরাপদ ও কার্যকরী ভ্যাকসিন। বিশ্বব্যাপী চলতে থাকা ভ্যাকসিন গবেষণার দৌড়ে সামিল হয়েছে বহু সংস্থা। এদের মধ্যে আমেরিকার বায়োফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি মডার্না তাদের তৈরী mRNA ক্যান্ডিডেট ভ্যাকসিন ফেজ-১ হিউম্যান ট্রায়ালে ব্যবহার করে ভালো ফল পেয়েছে। এই বছরের জুলাইয়ের শেষের দিকে তাদের ফেজ-৩ ট্রায়াল শুরু হতে চলেছে।

বহুদিন আগে থেকেই মডার্না কোম্পানি mRNA ভ্যাকসিন গবেষণায় দক্ষতা দেখিয়ে আসছে। ইতিমধ্যে তাদের তৈরী নয়টি প্রোফাইলেক্টিক ভ্যাকসিনের মধ্যে সাতটির ফেজ-১ ট্রায়াল চলছে। এই ট্রায়ালে সবচেয়ে ভালো ফল করা mRNA-1273 ক্যান্ডিডেট ভ্যাকসিনের গবেষণার কাজ বিখ্যাত গবেষণা পত্রিকা “নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন ” এ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। আমেরিকার প্রথম ক্যান্ডিডেট ভ্যাকসিন হিসাবে মডার্নার এই ভ্যাকসিনটি অনুমোদন লাভ করে। আধুনিক mRNA প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ভ্যাকসিনটি তৈরী করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনার আগে mRNA ভ্যাকসিন কি এবং কেনই বা ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট হিসাবে এটি ব্যবহৃত হয়।

সাধারণত কোন সংক্রামক রোগের জীবাণুকে নিষ্ক্রিয় করে বা তার প্রোটিনকে অ্যান্টিজেন হিসাবে শরীরে প্রবেশ করিয়ে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার কাজ করে চিরাচরিত বা ট্রাডিশনাল ভ্যাকসিন। কিন্তু, জীবাণুর নির্দিষ্ট কোন প্রোটিন বা অ্যান্টিজেনকে যদি শরীরের মধ্যেই তৈরী করে ফেলা যায়? হ্যাঁ, ঠিক এই কাজটাই করে mRNA ভ্যাকসিন। আমাদের দেহকোষে ডিএনএ থেকে আরএনএ এবং আরএনএ থেকে প্রোটিন তৈরী হয়। এই ক্ষেত্রে, গবেষণাগারে কৃত্রিম পদ্ধতিতে তৈরী করা হয় মেসেঞ্জার RNA বা mRNA। জীবাণুর অ্যান্টিজেন তৈরী হওয়ার জন্যে দরকারী সিকোয়েন্স এই mRNA তে থাকে। একে শরীরের কোষে প্রবিষ্ট করালে ট্রান্সলেশন পদ্ধতিতে প্রোটিন বা ওই জীবাণুর নির্দিষ্ট অ্যান্টিজেন তৈরী হয়, যা কোষপর্দার উপর সজ্জিত হতে থাকে। এই ঘটনার ফলে ওই কোষের কাছে টি-লিম্ফোসাইট, ডেনড্রাইটিক কোষ, ম্যাক্রোফেজ ইত্যাদি ইমিউন কোষের সমাবেশ ঘটতে থাকে এবং সক্রিয় ইমিউন রেসপন্স তৈরী হয়।

http://www.neucrad.com

অনেক প্রকার mRNA ভ্যাকসিন বর্তমানে তৈরী করা হয়ে থাকে, যেমন-

১. নন রেপ্লিকেটিং mRNA ভ্যাকসিন

২. ইন-ভিভো সেল্ফ রেপ্লিকেটিং mRNA ভ্যাকসিন

৩. ইন-ভিট্রো ডেনড্রাইটিক সেল নন রেপ্লিকেটিং mRNA ভ্যাকসিন

ট্রাডিশনাল ভ্যাকসিনের চেয়ে, mRNA ভ্যাকসিন তৈরী ও প্রয়োগের অনেক সুবিধা আছে, যেমন-

  • mRNA ভ্যাকসিন দেহে স্বাভাবিক ভাইরাস সংক্রমণের পদ্ধতিকে অনুকরণ করে। ভাইরাস যেমন কোষে প্রবেশ করার পর প্রতিলিপিকরণ (Replication) করে ট্রান্সক্রিপশনের সাহায্যে mRNA তৈরী করে এবং ট্রান্সলেশনের মাধ্যমে ভাইরাল প্রোটিন তৈরী করে, ঠিক সেইভাবেই mRNA ভ্যাকসিন প্রোটিন তৈরী করে। এমনকি প্রোটিনের ট্রান্সলেশন পরবর্তী পরিবর্তনও (Post-translational modification) ঘটে। বিজ্ঞানীরা প্রমান পেয়েছেন এই পদ্ধতিতে কোষে ভাইরাল অ্যান্টিজেন তৈরী হলে বি-লিম্ফোসাইট ও টি-লিম্ফোসাইটের সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।
  • একটি mRNA ভ্যাকসিনের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার mRNA সংযুক্ত করা যায়। সেগুলি একাধিক ভাইরাল প্রোটিন তৈরী করে। অনেক সময়ে প্রোটিনগুলি একত্রিত হয়ে মাল্টিমেরিক প্রোটিন যৌগ (Multimeric ) তৈরী করে ফলে ইমিউন রেসপন্স বৃদ্ধি পায়। 
  • শুধুমাত্র ভাইরাসের জিনোম পর্যালোচনা করে ইন সিলিকো (In Silico) অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে তৈরী কিরে যায় সিন্থেটিক mRNA। জীবাণুটিকে গবেষণাগারে বৃদ্ধি করার বা তার অ্যান্টিজেন পরিশুদ্ধির কোন প্রয়োজন নেই। বস্তুতঃ টিসু কালচার ফেসিলিটি, প্রোটিন পিউরিফিকেশন সিস্টেম কোনোটিরই প্রয়োজন হয় না। বেসিক ওয়েট ল্যাবরেটরিতেই কাজ করা সম্ভব। এতে সময় এবং অর্থ দুটোই সাশ্রয় হয়।

মডার্না এর আগে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ (NIH) এর সাথে যৌথ উদ্যোগে MERS-CoV ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা চালিয়েছে। যদিও এই ভাইরাস বর্তমান নভেল করোনা ভাইরাসের চেয়ে আলাদা প্রকৃতির। তারা জানিয়েছে mRNA-1273 ভ্যাকসিন তৈরীতে তারা পূর্ববর্তী গবেষণার জ্ঞানকে কাজে লাগিয়েছে। মডার্না তাদের mRNA ভ্যাকসিনের ফেজ-১ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফল আশাপ্রদ। এই ট্রায়ালে ৪৫ জন অংশগ্রহণকারী প্রতি ১৫ জনকে যথাক্রমে কম ডোজের (২৫ মাইক্রোগ্রাম), মাঝারী ডোজের(১০০ মাইক্রোগ্রাম) এবং বেশী ডোজের (২৫০ মাইক্রোগ্রাম) ভ্যাকসিন শট পর পর দুটি পর্যায়ে দেওয়া হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, ভ্যাকসিন দিয়ে সবার মধ্যেই ইমিউন রেসপন্স তৈরী হয়েছে। ২৫০ মাইক্রোগ্রাম ডোজে সবচেয়ে বেশী প্রভাব দেখা গেছে। কিন্তু, বিজ্ঞানীদের মতে ভ্যাকসিন দেবার ৬৪ দিনের মাথায় ১০০ মাইক্রোগ্রাম ডোজেই যথেষ্ট ভালো অ্যান্টিবডি নিউট্রিলাইজেশান এবং টি-লিম্ফোসাইট রেসপন্স পাওয়া গেছে। মডার্না তাদের আসন্ন ফেজ-৩ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এই ডোজ ব্যবহার করবে। এই mRNA ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই কম বলে জানা গেছে। সামগ্রিক বিচারে, মডার্নার mRNA-1273 ভ্যাকসিন ফেজ-৩ ট্রায়ালে কেমন প্রভাব দেখায় বিজ্ঞানীরা আগ্রহের সাথে তার অপেক্ষায় আছেন। 

তথ্যসূত্রঃ

  1. Jackson LA, Anderson EJ, Rouphael NG, et al. An mRNA Vaccine against SARS-CoV-2 – Preliminary Report [published online ahead of print, 2020 Jul 14]. N Engl J Med. 2020;10.1056/NEJMoa2022483. doi:10.1056/NEJMoa2022483
  2. https://www.modernatx.com/modernas-work-potential-vaccine-against-covid-19
  3. https://www.nih.gov/news-events/news-releases/experimental-covid-19-vaccine-safe-generates-immune-response
  4. Schlake T, Thess A, Fotin-Mleczek M, Kallen KJ. Developing mRNA-vaccine technologies. RNA Biol. 2012;9(11):1319-1330. doi:10.4161/rna.22269
  5. Pardi, N., Hogan, M., Porter, F. et al. mRNA vaccines — a new era in vaccinology. Nat Rev Drug Discov 17, 261–279 (2018). https://doi.org/10.1038/nrd.2017.243