ডিসেম্বর 24, 2024

বয়সকালে স্মৃতিভ্রংশ ও সমাজ – অনুভবে সুবীর চৌধুরী

pexels-photo-461049
Reading Time: 6 minutes

কলমে সুবীর চৌধুরী, নিউক্র্যাড হেলথ বাংলা এপ্রিল 21, 2019

বয়স হলে এক এক জন মানুষের এক এক ধরনের রোগ দেখা যায় যেমন চোখে কম দেখা, দাঁতে ব্যথা, কানে কম শোনা ইত্যাদি আর এইসব অসুবিধার দূর কোরতে ডাক্তার বাবুদের দ্বারস্থ হতেই হয় ।
ডাক্তার বাবুদের পরামর্শ আর তাদের দেওয়া ওষুধপত্র কিছুদিন খাওয়ার পর অসুবিধা গুলো আস্তে আস্তে দূর হয়ে যায় আর নিজেদের কাজকর্ম গুলো নিজে নিজেই করা যায় । মুশকিলটা শুরু হয় বয়স্ক মানুষ যদি ভুলে যাওয়া রোগের কবলে পড়েন, মানে কোন মানুষের যদি স্মৃতি শক্তি কম হতে থাকে । এই রোগটা যার প্রথম শুরুহয় তিনি নিজে কিন্তু প্রথমে বুঝতে পারেন না, ব্যাপারটা বাড়ির লোকজনের নজরে প্রথমে আসে, বয়সকালে স্ত্রী সবসময় স্বামীর কাছাকাছি থাকতে চেষ্টা করেন যদি তাঁর শরীর ঠিক থাকে আর তাঁর নজরেই স্বামীর এই ভুলে যাওয়া রোগটা প্রথমে চোখে পড়ে । একই রোগ স্ত্রীদেরও হতে পারে তখন তাঁদের স্বামীদের নজরে আসে, এছাড়া ছেলে মেয়েরা তাদের মা বাবার কাছে থাকলে ছেলমেয়েদের নজরেও আসে । ধরাযাক আপনি রোজ সকালবেলায় জলখাবার খাবার সময় আপনার আর আপনার স্ত্রীর রোজকার খাওয়ার ওষুধগুলো টেবিলে নিয়ে বসেন, একদিন স্ত্রী আপনাকে বললেন আজ সকালবেলায় খাওয়ার ওষুধগুলো নিয়ে বসনি ? উত্তরে আপনি হয়তো বললেন এইরে ভুলে গেছি , মনে করিয়ে দেওয়ার পর ওষুধগুলো আপনি নিয়ে এলেন । একআধ দিন হলে ঠিক আছে , কিন্তু এই রকম ভুল যদি রোজরোজ হতেথাকে তাহলে আপনি বুঝবেন আপনি ভুলে যাওয়া রোগের শিকার হয়েছেন । বাড়ির লোকজন আপনাকে সাবধান করে দেবেন । ডাক্তারবাবুরা এই রোগটাকে ডিমেনশিয়া বোলে থাকেন আর শুদ্ধ বাঙলায় এর নাম স্মৃতিভ্রংশ, এই রোগে আক্রান্ত লোকজনের বুদ্ধি, স্মৃতি ও ব্যক্তিত্ব ধীরে ধীরে লোপ পেতে থাকে । সাধারণত বেশি বয়সের মানুষেরাই এই রোগে আক্রান্ত হন আর হটাত করে একদিন অনেক কিছুই মনে করতে পারেন না এর ফলে তাঁর আচার আচরণে কিছুটা অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা যায় । ডাক্তারবাবুরা বলেন বয়স বাড়ার সঙ্গেসঙ্গে স্বাভাবিক ভাবে মানুষের মস্তিষ্কের কোষের সংখ্যা নির্দিষ্ট হারে কমতে থাকে আর শরীরে নানারকম ব্যাধি মানুষের মস্তিষ্কেরও ক্ষতি করে । ডিমেনশিয়ার সব থেকে প্রচলিত রূপ হল আলজাইমার রোগ আর মানুষের দেহে এই রোগটির বিস্তার খুব ধীরে ধীরে হয় । ভুলে যাওয়ার কারণে রোগী হতাশা, ঘুমের ব্যাঘাত ও অন্যান্য সমস্যায় ভুগতে থাকেন আর ধীরে ধীরে নিজের ওপর আস্থাটা হারিয়ে ফেলেন এবং অপরের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন । বিভিন্ন কারণে এই রোগ হতে পারে তবে ডাক্তারবাবুদের মতে এইডস, অনেকদিন ধরে ধূমপান, শরীরে ভিটামিন বি এর অভাব, অনৈতিক জীবনযাপন, মাথায় কোন রকম চোট পাওয়া এই রোগের মূল কারণ বলে মনে করা হয় । বাড়িতে কারুর এই রোগটি ধরা পড়লে খুব তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু হওয়ার দরকার । এই রোগের স্পেশালিষ্ট ডাক্তারবাবুদের দেখিয়ে তাঁদের পরামর্শ অনুযায়ী জীবন ধারণ আর নিয়মিত ওষুধ খেলে রুগী ভাল থাকেন, ধীরে ধীরে তাঁর নিজের ওপর আস্থা ফিরে আসে । এছাড়া বাড়িতে রোগীকে কোনভাবেই তাচ্ছিল্য করা উচিৎ নয় বরং তাঁকে যথাযথ সন্মান আর সঙ্গ দেওয়া উচিৎ, রোগটি শরীরে জটিল আকার ধারণ করলে রোগীর আর সেরে ওঠার সম্ভাবনা থাকে না । আমাদের সমাজে ডিমেনশিয়া রোগটি নিয়ে সচেনতার খুবই অভাব কারণ আমরা ধরেই নিয়ে থাকি যে মানুষের বয়স হলে তাঁরা ভুলে যাবেন । এখন কিছু কিছু ওষুধ আবিষ্কার হয়েছে যা ডাক্তারবাবুদের পরামর্শ অনুযায়ী খেলে রোগটির তীব্রতা রোধ করা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাই বেশির ভাগ রোগী একেবারে শেষপর্যায়ে ডাক্তারবাবুদের কাছে পৌঁছান যখন আর কিছু করার থাকে না ।

আমরা সকলেই জানি সাধারনত বয়স্ক মানুষরাই ভুলে যাওয়া রোগের শিকার হয়ে থাকেন । কিছুদিন আগে খবর পেলাম আমার এক বছর চল্লিশের ভাগ্নি তাৎক্ষণিক স্মৃতিভ্রংশ রোগের শিকার হয়েছে, NIFT থেকে ফ্যাশান ডিজাইন পাশ করে বছর দশেক মুম্বাইতে কনসালটেনসি করছে । খুবই ব্যাস্ত মহিলা , সেলিব্রিটিদের নিয়ে কাজ, একদিন সকালবেলা তৈরি হয়ে নিজের তিনতলার ফ্ল্যাট থেকে একতলায় নেমে এসে ড্রাইভারের হাতে গাড়ির চাবিটা দিয়ে গাড়ি বার কোরতে বোলে নিজে মোবাইল ফোন থেকে উবের ট্যাক্সি ডেকে অফিস চলে যায় । খবরটা পাওয়ার পর থেকেই আমি ভগ্নির এই ঘটনার কথাটার জন্য চিন্তা করছিলাম এমন কেন হোল, পরেরদিন ভাগ্নিকে ফোনকোরে জানালাম একজন নিউরো মেডিসিনের ডাক্তারবাবুর সঙ্গে পরামর্শ কোরতে আর তাঁকে জিজ্ঞাসা কোরতে কেন এমন হোল আর ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারেকিনা । কিছুদিন হোল ক্যানবেরাতে এসেছি, এখানে ইঞ্জিনিয়ারস অস্ট্রেলিয়ার এক ম্যাগাজিনে পড়ছিলাম অস্ট্রেলিয়াতে বিজ্ঞানীরা রিসার্চকরে পেটস জন্তুজানোয়ার যেমন কুকুর ও বিড়ালের রোবটস ব্যবহার করছেন ডিমেনসিয়ার রোগীদের জন্য যারা Aged Care এ থাকেন । এইসব কুকুর বেড়ালের রোবটসরা রোগীদের সঙ্গে সবসময় পাশে থাকলে এই রোগে আক্রান্ত রোগীরা ভাববেন এরা আমাদের কাছেই আছে তাতে কিছুটা নিঃসঙ্গতা কাটবে তাঁদের আর মনোবল বাড়বে । তবে এই ধরনের রোবটস পেট ব্যবহার করা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ যা আমাদের দেশের রোগীদের পক্ষে সম্ভব নয় , আমাদের দেশে এই রোগে বিশেষ ট্রেনিংপ্রাপ্ত পুরুষ বা মহিলা নার্সরাই সাধারণত ডিমেনসিয়া রোগীদের বাড়িতে গিয়ে রোগীদের পাশে থাকেন ও সেবা যত্ন করে থাকেন । ডিমেনসিয়া রোগটার কোন লক্ষণ আগে থেকে জানা যায় না হটাত কোরে একদিন বয়স্ক লোকেরা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে যান । ক্যানবেরাতে আমাদের বাড়ির সামনে এক অস্ত্রেলিয়ান দম্পতি থাকেন, ভদ্রলোক পুলিশে চাকরি করতেন বছর দুই হোল চাকরি থেকে রিটায়ার করেছেন আর এখন বাড়িতেই থাকেন । স্ত্রীকে প্রায়ই দেখি বাগানের গাছে জল দিচ্ছেন, লন মোয়ার চালাচ্ছেন বা কখনো কখনো একাই গাড়ি চালিয়ে দোকান
বাজার থেকে জিনিসপত্র কিনে আনছেন । ভদ্রলোককে মাঝেসাঝে দেখি ঠাণ্ডা পানীয়র টিন হাতে নিয়ে বাগানে চেয়ারে বসে আছেন, একদিন সকালবেলায় তার স্ত্রীকে দেখলাম তাঁর বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে, দেখে মনে হোল বেশ চিন্তিত । জিজ্ঞাসা করাতে বললেন কিছুক্ষণ আগে থেকে তাঁর স্বামীকে দেখা যাচ্ছেনা, আমি ভাবলাম জলজ্যান্ত মানুষটা গেলো কোথায় ? প্রায় তিন ঘণ্টা খোঁজাখুঁজির পর দেখা গেলো বাড়ির কিছুটা দূরে পার্কের একটা বেঞ্চে তাঁর স্বামী একা বসে আছেন , বাড়ি থেকে বেড়িয়ে ছিলেন কিন্তু নিজের বাড়িটা কোথায় খুঁজে পাননি অথবা বাড়ি ফিরতে হবে এই কথাটাই তাঁর মনে হয়নি । স্ত্রী তাঁর স্বামীকে সঙ্গে করে বাড়িতে নিয়ে আসেন, ডাক্তার দেখান হয়েছে, তিনি ডিমেনসিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, চিকিৎসা চলতে থাকবে আর স্ত্রীকে সবসময় স্বামীকে চোখচোখে রাখতে হবে কারণ ছেলেমেয়েরা তাঁদের সঙ্গে এখানে থাকেনা ।

বেশ কয়েক বছর আগে কোলকাতার একটা কাগজে একটা খবর বেড়িয়েছিল বিখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী অশোকতরু বন্দ্যোপাধ্যায় নিখোঁজ হোয়ে গেছেন, বেশ কয়েকদিন পর তাঁর খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল । জানিনা তিনি ডিমনেসিয়া রোগের শিকার হোয়েছিলেন কিনা ? প্রায় সব জায়গাতেই দেখা যায় বয়স্ক লোকজনেরা তাঁদের স্ত্রীদের নিয়ে বাড়িতে থাকেন, ছেলেমেয়েরা দূরে কোথাও চাকরি, বাড়িতে তৃতীয় কোন ব্যক্তি না থাকায় দুজনের কেউ অসুস্থ হোলে তাঁরা খুবই অসুবিধায় পড়েন । বয়স্ক মানুষদের একাএকা থাকার ফলে তাঁদের অধিকাংশ নিঃসঙ্গতায় ভোগেন, ডাক্তারবাবুরা বলেন এই ধরনের মানুষদের কিছু না কিছু হবি থাকা প্রয়োজন । আমি কিছু বয়স্ক মানুষদের জানি তাঁরা নিয়মিত ক্রশওয়ার্ড, সুডোকু সমাধান করে থাকেন, এতে তাঁদের কিছুটা সময় কাটে আর মাথার কাজও
হয়, এটা খুবই ভাল অভ্যাস । অনেকের নানা ধরনের বই পড়া বা গান শোনার শখ, কোলকাতায়
আমাদের বাড়ির কাছে টালাপার্কে দেখি বেশ কিছু বয়স্ক মানুষ সকাল বিকাল শতরঞ্চি ওপর বসে তাস
খেলছেন , তাঁদের কাছে তাস খেলাটা রীতিমত নেশায় দাঁড়িয়েছে, দেখে ভালো লাগে প্রায় একই বয়সের
বন্ধু বান্ধবরা এই ভাবে দিনের কিছুটা সময় কাটাচ্ছেন ।

এই পাড়াতেই কিছু সিনিয়র সিটিজেনের দেখি সকালবেলা আর বিকালবেলায় দলবেঁধে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন আর হাঁটাশেষে চায়ের দোকানে বসে চা খেতেখেতে খবরের কাগজে চোখ বোলাচ্ছেন । গত বছর টালাপার্কে এনাদের নববর্ষ আর রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন কোরতেও দেখেছি, এইধরনের বয়স্ক লোকজনদের দলে যারা আছেন আপদে বিপদে তাঁরা একজন অপরের পাশে থাকেন, একই পাড়ায় তাঁরা থাকেন বলে এটা সম্ভব । তাছাড়া এই ধরনের কাজকর্মে যে সমস্ত বয়স্ক লোকজনেরা যোগদান করেন তাঁদের নিজেদের মধ্যে একটা দলগড়ে ওঠে যা তাঁদের নিঃসঙ্গতা কাটাতে যথেষ্ট সাহায্য করে আর ভুলে যাওয়া রোগটা দূরে রাখতে সাহায্য করে । কিছুদিন ধরেই ফেসবুকে একটা খবর দেখছি কয়েকজন সিনিয়ার সিটিজেন মিলে চেষ্টা করছেন কোলকাতায় বয়স্ক লোকজনেরা যারা একা বা স্বামী স্ত্রী দুজনে বাড়িতে থাকেন তাঁদের নিয়ে একটা গ্রুপ তৈরি কোরতে । বয়স্ক মানুষদের ছেলেমেয়েরা মা বাবার সঙ্গে থাকে না কারণ তাঁরা দূর দেশে চাকরি করেন, তাই বয়স্ক মানুষেরা কখনো অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁদের সাহায্য কোরতে এই গ্রুপের অন্য সদস্যরা এগিয়ে আসবেন । এটা খুবই ভাল প্রয়াস, আশাকরি অনেক বয়স্ক মানুষজন এই গ্রুপের দ্বারা উপকৃত হবেন । রিটায়ার করার পর অনেক বয়স্কমানুষ রোটারি, লায়ন্সক্লাব আর মহিলারা ইনার হুইল বা অন্যান্য গ্রুপে যোগদান করে প্রায় সারাবছর ধরে কিছুকিছু সেবামূলক কাজে নিজেদের নিযুক্ত করেন, যখনই কোন মিটিং, আউটিং বা সেবামূলক কাজে কোথাও যান দলবেঁধে যান যার ফলে একে অপরকে দেখার সুযোগ মেলে । আমার শ্যালক ঝাড়খণ্ডের কোডারমাতে থাকেন, বার বছর হল চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সন্মেলন, কোডারমা শাখার সক্রিয় সদস্য, এই সমিতি প্রায় সারাবছর ধরেই ভারতবর্ষের নানা জায়গায় সাহিত্য সম্মেলন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বার্ষিক সভা করে থাকেন । এইভাবে সদস্যরা দেশের নানান রাজ্যে ঘোরাফেরা , সেখানকার লোকজনেদের সাথে মেলা মেশার সুযোগ পান আর বয়স্ক মানুষেরা কিছুটা ভাল সময় কাটানোর সুযোগ পান । এছাড়া তিনি লায়ন্সক্লাব, ঝুমরি তিলাইয়ার সদস্য আর ২০০৩ সালে পর পর দুবারের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, এই ক্লাবও সারা বছর ধরে স্থানীয় স্কুলগুলির উন্নয়নের কাজ আর অন্যান্য সেবা মূলক করে থাকেন । এই ভাবে তিনি নিজেকে নানান ধরনের কার্যকলাপে সক্রিয়ভাবে যুক্ত রেখেছেন যা তাঁর নিঃসঙ্গতা দূর কোরতে সাহায্য করছে ।

আমার মামা কোলকাতায় শ্যামপুকুর ষ্ট্রীটে সমাজপতি স্মৃতি সমিতি লাইব্রেরীতে অবৈতনিক লাইব্রেরিয়ান হিসাবে সন্ধ্যা বেলায় কাজ করতেন চাকরি থেকে রিটায়ার করার পর , তিনি প্রায় তাঁর আশি বছর বয়স অবধি এই কাজে নিযুক্ত থেকে নিজেকে শারীরিক ভাবে সক্রিয় রেখেছিলেন ।
আমার ছোড়দা হাওড়ার বাউরিয়াতে Fort Gloster কেবল ফ্যাক্টরির চাকরি থেকে রিটায়ার করার পর শ্রীরামপুরের বাড়িতে অবসর জীবন কাটাচ্ছেন । তিনি নিজেকে শারীরিক ভাবে সুস্থ রাখতে নানান জায়গায় ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন , দাদার বয়স এখন ৮৭ আর বৌদি ৭৯ । গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে এ বছরের মার্চ মাস অবধি এই পাঁচ মাসে তাঁর ঘোরাঘুরির মোটামুটি একটা হিসাব দিলে বোঝা যাবে তিনি শারীরিক আর মানসিক ভাবে কতটা সক্রিয় । দাদা , বৌদিকে সঙ্গে নিয়ে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে চলেগেলেন দিল্লিতে তাঁদের নাতনির বাড়ি, তিনদিন থেকে চলেগেলেন উত্তরাখণ্ডের এই ঠাণ্ডায় রুদ্রপ্রয়াগে, সেখানে সাতদিন আশেপাশের ধর্মীয় স্থানগুলো দেখে নিজেদের বাড়ি শ্রীরামপুরে ফিরে এসেছিলেন । ডিসেম্বর মাসের প্রথমসপ্তাহে আমার ছোটভাইকে সঙ্গেনিয়ে চারদিনের জন্য হাজারিবাগ ও কোডারমায় বেড়িয়ে এলেন । বাড়ি ফিরে দিন সাতেক বিশ্রাম নিয়ে নিজের বড় ভাগ্নে আর পাড়ার এক শুভাকাঙ্ক্ষীকে সঙ্গে নিয়ে সকালবেলা গাড়ি চেপে বেড়িয়ে পড়লেন রূপনারায়ণ নদীর ধারে দেউলটিতে । কাছেই পানিত্রাস গ্রামে কথাশিল্পী শরৎ চট্টোপাধ্যায় বাড়িটাও দেখেনিলেন , এই বাড়িতে বসেই শরৎবাবু রামেরসুমতি লিখেছিলেন । জানুয়ারি মাসে চার দিনের জন্য ঘুরেতে গিয়েছিলেন বিহারের সোনপুরে , ভারতবর্ষের বৃহত্তম পশুমেলা দেখতে । ফেব্রুয়ারি মাসে নিজেদের পৈতৃক বাড়ি বেগমপুরে সপরিবারে গিয়েছিলেন বার্ষিক রক্ষাকালী পুজা দেখতে, সেখানে দিনতিনেক আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে কাটিয়ে এসেছিলেন । মার্চমাসের একুশ তারিখ দোলের আগে বাড়ির সবাইকে নিয়ে গাড়ি নিয়ে তিন দিনের জন্য ঘুরতে গেলেন দিঘা আর মন্দার মণিপুর । দাদার এইসব কাণ্ডকারখানা দেখে আমি একবার দাদাকে বলেছিলাম, ছোড়দা তোমার দুটোপায়ে কি চাকা লাগানো আছে ? উপরের ঘটনাগুলো পাঠকদের জানানোর আমার একটাই উদ্দেশ্য বয়স্ক মানুষেরা নিজেদের কতো রকম ভাবে নিযুক্ত রাখতে পারেন তাঁদের একাতিত্ব কাটানো, শারীরিক আর মানসিক ভাবে সুস্থ থাকার জন্য ।

লেখক পরিচিতি

সুবীর চৌধুরী, বয়স 71,

একজন অবসরপ্রাপ্ত সিভিল ইঞ্জিনিয়ার । তিনি ভ্র্মন করতে ভালোবাসেন । ইতিমধ্যে বহুদেশ যেমন অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিলান্ড ভ্র্মন করেছেন ।
তিনি বর্তমানে ব্লগ লেখেন (subirsblog889792471.wordpress.কম)