পুণের গবেষকরা প্লাষ্টিক ধ্বংসকারী ছত্রাকের সন্ধান পেয়েছেন
অঙ্কিতা তা । নিউক্র্যাড হেলথ বাংলার প্রতিবেদন
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও প্লাস্টিকের ব্যাগ সর্বত্র বিরাজমান। মোট প্লাস্টিকের প্রায় ৩৫ শতাংশ শুধুমাত্র পলিথিন যা প্যাকেজিং-এর জন্য ব্যবহৃত হয়, আর এর জন্যই পলিথিনের উৎপত্তি বাড়ছে। ফলে প্রায় ৬৪ শতাংশ প্লাস্টিকের বর্জ্য তৈরী হয়, যা আমাদের জমি ও মহাসাগরকে দূষিত করে, বিভিন্ন জলাশয়গুলি বুজিয়ে দেয় ও অনেক প্রাণীর মৃত্যু ঘটায়। সাবিত্রীবাঈ ফুলে পুণে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল প্লাস্টিকজাত এই সমস্যার সমাধান ঘটাতে পারে। গবেষকরা এক ধরণের ছত্রাককে চিহ্নিত করেছেন যা প্লাস্টিকের সবথেকে সাধারণ আকার – পলিথিন – কে ভাঙতে পারে।
অনেক দিন ধরেই বিভিন্ন উপায়ে প্লাস্টিককে ভাঙার প্রচেষ্টা করা হয়েছে, যেমন গামা রশ্মি ব্যবহার করে বিকিরণের মাধ্যমে বা বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াশীল রাসায়নিকের সাহায্যে। কিন্তু এই বিক্রিয়ার ফলে আরও বিষাক্ত পদার্থ তৈরী হয় যা পরিবেশের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করতে পারে, ফলে সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। জৈববিয়োজন (biodegradation) বা অণুজীবের সাহায্যে বিয়োজনের মাধ্যমে প্লাষ্টিক নিয়ন্ত্রণ অনেক বেশি পরিবেশ-বান্ধব। বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীরা কিছু ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের সন্ধান করে’ চলেছেন যা পলিথিনকে ভাঙতে পারে, যেগুলি জৈব এবং অজৈব যৌগ থেকে গঠিত।
বর্তমানে গবেষকরা গবেষণা করে দুই ধরণের ছত্রাক পেয়েছেন। Aspergillus terreus ও Aspergillus sydowii যারা পলিথিনকে গবেষণাগারের পরিবেশে ধ্বংস করতে পারে। এই গবেষণামূলক ফলাফল বৈজ্ঞানিক পত্রিকার প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছিল। ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্টস্ কমিশন (UGC) ও সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ বোর্ড (SERB) এই গবেষনায় আংশিক অনুদান দিয়েছে।
গবেষকরা প্রায় ১০৯ ধরণের ছত্রাক খুঁজে বার করেছেন, যা ভারতের পশ্চিম উপকূলে ১২ টি বিভিন্ন ভৌগোলিক অবস্থান থেকে, ম্যাংগ্রোভ মৃত্তিকায় প্লাস্টিকের স্তূপ থেকে পাওয়া গেছে। তারা সম্ভাব্য কার্যকর ছত্রাকগুলি শনাক্ত করতে চেষ্টা করেছেন যেগুলি প্লাষ্টিক ধ্বংস করতে পারে। তাদের মধ্যে Aspergillus terreus ও Aspergillus sydowii হ’লো সবথেকে কার্যক্ষম। যখন গবেষকরা এই গবেষণাগারে পলিথিনের টুকরোগুলির উপর দুইটি ছত্রাক বৃদ্ধি করান, তখন তাঁরা পলিথিনের ওজন, সম্প্রসারণ শক্তি (tensile strength) ও পলিথিনের বৃদ্ধির প্রকৃতির (elongation nature) হ্রাস লক্ষ্য করেন, যা পলিথিনের ক্ষয়ের ইঙ্গিত দেয়। একটি ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে এগুলিকে পর্যবেক্ষণ করে’ ছত্রাকগুলির কাজ নিশ্চিত করা হয়।
ডঃ অবিনাশ আদে, পেশায় একজন গবেষক, যিনি বলেন, “যেসব পলিথিন, ম্যাংগ্রোভ রাইজো়স্ফিয়ার থেকে সংগৃহীত ছত্রাক দ্বারা প্রভাবিত করা হয়েছিল, তাদের সম্প্রসারণ শক্তি তুলনা করে’, পলিথিনের ক্ষয় পরিমাপ করা হয়। আমরা ৯৪ শতাংশ সম্প্রসারণ শক্তির হ্রাস লক্ষ্য করেছি। এই প্রথমবার ছত্রাক ব্যবহার করে’ পলিথিনের সম্প্রসারণ শক্তির এতটা হ্রাস লক্ষ্য করা গেছে।”
পলিথিনকে ভাঙার স্বাভাবিক দক্ষতার পাশাপাশি, যে মিডিয়াতে তারা বৃদ্ধি পায়, তার pH ও তাপমাত্রাও তাদের কর্মদক্ষতা বাড়াতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমান গবেষণায়, এই শর্তগুলি নিখুঁত ভাবে ব্যবহার করে’, গবেষকরা পলিথিনের টুকরোগুলির মোট ওজনের প্রায় ৫০ শতাংশ হ্রাস লক্ষ্য করেছেন।
গবেষকরা বলেছেন যে, যেহেতু এই ছত্রাকগুলিকে গবেষণাগারের পরিস্থিতিতে বৃদ্ধি করা হয়, তাই তাদের পলিথিন স্তূপাকৃত স্থানলিতেও ব্যবহার করা যাবে। ডঃ আদে বলেন, “পরবর্তী ধাপ হিসাবে, আমরা পলিথিন ও অন্যান্য পলিমারকে ধ্বংস করার জন্য দায়ী এই ছত্রাকগুলি থেকে উৎসেচক (enzyme) নিষ্কাশন এবং বিচ্ছিন্ন করার কাজ করছি।”
বিশ্বজুড়ে প্রতি বছরে ৯২ কোটি টন প্লাষ্টিক তৈরী হয়, যার মধ্যে ৬৯ কোটি টন প্লাস্টিক বর্জ্য হিসাবে জমা হয়, এরকম পরিস্থিতিতে এমন আবিষ্কার, যা আশার আলো এনে দিয়েছে, সত্যিই খুব প্রয়োজন ছিল।
উৎস: Potential of fungi isolated from the dumping sites mangrove rhizosphere soil to degrade polythene
খবর ও ছবির কৃতিত্ব: Research Matters (By Nagaraj Soundararajan, June 24, 2019)