এপ্রিল 25, 2024

পাকস্থলীর জীবাণুর বিরুদ্ধে টিকাকরণের মাধ্যমে শিশুদের টাইপ ১ ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা করা যায়

Reading Time: 3 minutes

নিউক্র‍্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদন

টাইপ ১ ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যা নিরাময় করা সম্ভব নয়। বর্তমানে এই রোগ প্রতিরোধের কোনো টিকাও নেই  কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, যেসব শিশুদের জন্মের প্রথম মাসে রোটাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিষেধক টিকা দেওয়া হয়, পরবর্তীকালে তাদের টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, কোনো ব্যাক্তি জন্মের পর ২-৪ মাসের মধ্যে রোটাভাইরাসের টিকা সম্পূর্ণ গ্রহণ করে থাকলে ডায়াবেটিস টাইপ ১ এর ঝুঁকি প্রায় ৩৩ শতাংশ কমে যায়। বিজ্ঞানীরা এই গবেষণার ফলাফল বৈজ্ঞানিক পত্রিকায় প্রকাশ করেছেন।

রোটাভাইরাস টিকার কাজ কী?

দ্য সেন্টারস্ ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC), প্রতিটি শিশুকে জন্মের ২-৪ মাসের মধ্যে রোটাভাইরাসের টিকা গ্রহণের পরামর্শ দেয়। এই জীবাণুটি শিশুদের মধ্যে উদরাময়, পেট ব্যাথা, বমি, ক্লান্তি, ক্ষুধামান্দ্যভাব প্রভৃতি রোগ-লক্ষণ সৃষ্টি করে। বমি ও মলের মাধ্যমে ক্রমাগত জল বেরিয়ে যাওয়ায় শিশুদের শরীরে জলের পরিমান কমে যায়। তৎক্ষণাত দেহে পুণরায় জল প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা না করা গেলে, এটি মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে। CDC মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুই ধরনের মৌখিক রোটাভাইরাসের টিকা সমর্থন করে যার মধ্যে একটি হল রোটাট্যাক® (RV5) যা ২ ,৪ ও ৬ মাসের বাচ্ছাদের ৩টি ডোজ়ে  ও অপরটি হল রোটারিক্স® (RV1) যা ২ ও ৪ মাসের বাচ্ছাদের দেওয়া হয়। বাচ্ছাদের রোটাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ় দেওয়া উচিত ১৫ সপ্তাহের আগে ও ৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই সবকটি ডোজ় সম্পন্ন করা উচিত। এই  টিকাটি তরল অবস্থায় মৌখিকভাবে (oral administrtion) দেওয়া হয় যাতে শিশুরা সহজেই সেটি গিলে নিতে পারে।

রোটাভাইরাসের টিকা ও টাইপ ১ ডায়াবেটিসের ঝুঁকির মধ্যে সম্পর্ক কী?

বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন যে রোটাভাইরাসের টিকাকরণের মাধ্যমে উদরাময়ের কারণে শিশুদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হার ৯৪ শতাংশ কমে যায়। এটাও দেখা গেছে যে ইঞ্জেকশন দেওয়ার দুমাসের মধ্যে যেকোনো কারণে শিশুদের হাসপাতালে ভর্তির হার প্রায় ৩১ শতাংশ কমে যায়। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডঃ মেরি রজার্স, এই গবেষনাটির যথার্থতা যাচাই করে বলেন যে রোটাভাইরাসের টিকা গ্রহনকারী শিশুদের মধ্যে টাইপ ১ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়। যদিও তিনি একথাও বলেন যে এই মূহুর্তে এক্ষেত্রে আরও গবেষণা ও পরীক্ষার প্রয়োজন আছে কারণ বৃহৎ জনসংখ্যার মধ্যে পরীক্ষা না করা পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়না। অন্য একদল বিজ্ঞানী অস্ট্রেলিয়ান শিশুদের মধ্যে এই গবেষণা চালায়। তারাও রোটাভাইরাসের টিকা গ্রহণের পর শিশুদের মধ্যে টাইপ ১ ডায়াবেটিসের ১৪ শতাংশ হ্রাস লক্ষ্য করেছেন।

গবেষণামূলক পরীক্ষাগুলি থেকে রোটাভাইরাস সংক্রমণ টাইপ ১ ডায়াবেটিসের মধ্যে সম্পর্ক সম্বন্ধে কী জানা যায়?

পরীক্ষাগারে গবেষণা থেকে  জানা যায় যে রোটাভাইরাস ও ডায়াবেটিস উভয়ই ইনসুলিন উৎপন্নকারী প্যানক্রিয়াসের বীটা কোশগুলিকে আক্রমণ করে। রোটাভাইরাসের সংক্রমণের ফলে এই কোশগুলির মৃত্যু ঘটলে প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন তৈরী বন্ধ হয়ে যায়, ফলে টাইপ ১ ডায়াবেটিস দেখা দেয়।  এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের সারাজীবন ইনসুলিন ইঞ্জেকশনের ওপর ভরসা করে থাকতে হয়। তাদের চোখ, হৃদয়, কিডনি এবং স্নায়ুর জটিলতা দেখা যায়।

কীভাবে মিশিগানের গবেষকরা গবেষণা পরিচালনা করেছিল?

মিশিগান ইউনিভার্সিটির গবেষকরা, সরকার কর্তৃক রোটাভাইরাসের টিকা চালু করার পর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১৫ লক্ষ বাচ্ছা যারা ২০০৬ সালের আগে ও পরে জন্মগ্রহণ করেছিল তাদের অপ্রকাশিতনামা জীবনবীমার তথ্য সংগ্রহ করে। এই তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায় যে ৫,৪০,০০০ শিশু ২০০৬ সালের পর জন্মগ্রহণ করেছিল ও টিকাটির সম্পূর্ণ সেট পেয়েছিলো। ১৪১,০০০ জন শিশু রোটাভাইরাসের টিকার কেবলমাত্র ১ টি ডোজ পেয়েছিলো ও ২,৪৬,০০০ জন শিশু রোটাভাইরাসের টিকার কোনো ডোজ়ই পায়নি। ডঃ রজার্স পরামর্শ দেন যে প্রতি বছর টাইপ ১ ডায়াবেটিসের সংখ্যা কমছে, প্রায় প্রতি ১,০০,০০০ জন শিশুর মধ্যে ৮ জন। শিশুদের মধ্যে ডায়াবেটিস তুলনামূলকভাবে কম দেখা যায় তাই বিজ্ঞানীদের পক্ষে বৃহৎ জনসংখ্যার তথ্য বিশ্লেষণ করা সুবিধাজনক। ডঃ রজার্স এও বলেছেন যে আগামী ৫ বছরের মধ্যে তারা এই বিষয়ে আরও ব্যাপক তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।