পঙ্গপাল এর সমন্ধে কিছু কথা – প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে ভারত?
যখন গোটা বিশ্ব COVID-19 মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে ব্যাস্ত, ঠিক সেই সময় ভারতবর্ষ আরেক সমস্যার সম্মুখীন। ভারতেবর্ষের বেশ কিছু এলাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে হাজার হাজার পঙ্গপালের ঝাঁক ঢুকে পড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কীটনাশক স্প্রে টিম ড্রোন, ট্র্যাক্টরের ইত্যাদির সাহায্যে কীটনাশক স্প্রে কররার পদক্ষেপ নিয়েছে। সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, ইতিমধ্যেই এই পঙ্গপাল 50,000 হেক্টরেরও (123,5000 একর) বেশি জমির ফসল খেয়ে ফেলেছে। তারা রাজস্থানের কাছে পাকিস্তান সীমান্ত পেরিয়ে ভারতবর্ষে প্রবেশ করেছে।
পঙ্গপালের ঝাঁক বর্তমানে গুজরাট, মহারাষ্ট্র, মধ্য প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ এবং পাঞ্জাবে সক্রিয়ভাবে রয়েছে। 1962 থেকে, ভারতকে কোনোদিন কোনও পঙ্গপালের আক্রমণের সম্মুখীন হয়নি। 1978 এবং 1993 সালে, সরকার এই ধরনের পতঙ্গের অভ্যুত্থান নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। তবে, 2020 সালের ব্যাপারটি আলাদা, কারণ করনার প্রাদুর্ভাবের কারনে ভারতের অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থা। যদি ভারতীয় পঙ্গপাল সম্পর্কে সতর্কতা প্রদানকারী সংস্থা এই মাইগ্রেটরি কীটপতঙ্গদের নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম হয়, তবে শীঘ্রই ভারতে খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হতে হবে।
পঙ্গপাল কি?
পঙ্গপাল হল ক্রান্তীয় অঞ্চলে পাওয়া যায় এমন এক ধরনের বড় ঘাসফড়িং,যারা অ্যাক্রিডি ফ্যামিলির অন্তর্গত। এরা সাধারণত আলাদা আলাদা ভাবেই জীবনযাপন করে। তবে কিছু পরিস্থিতিতে এরা খাদ্যাভ্যাস এবং সামাজিক অভ্যাস পরিবর্তন করে, আর তখনই তারা একসাথে দলবদ্ধভাবে পঙ্গপালের আকার নেয়। ট্যাক্সোনমিস্টরা ঘাসফড়িং এবং পঙ্গপালের মধ্যে নামকরণের কোনও পার্থক্য রাখেনি । পঙ্গপালের জীবনচক্রের বেশ কয়েকটি পর্যায় রয়েছে। ডিম থেকে ফড়িং, তার থেকে অপরিপক্ক প্রাপ্তবয়স্ক এবং তারপর সম্পূর্ণ প্রাপ্তবয়স্ক। এই কয়েকটি পর্যায়ের মধ্য তৃতীয় পর্যায়ের, গোলাপী বর্ণ যুক্ত, অত্যন্ত সক্রিয় এই পতঙ্গরাই ফসলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে।
পঙ্গপালের ঝাঁকগুলি অতি দ্রুততার সাথে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে ঘুরে বেড়ায় এবং একএকটি ঝাঁকে প্রতি বর্গকিলোমিটার প্রায় 80 মিলিয়ন পতঙ্গ থাকে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন 40 মিলিয়লের একটি পঙ্গপালের ঝাঁক 35,000 লোকের খাবারের সমপরিমাণ ফসল গ্রাস করতে পারে। বর্তমানে ভারতের উত্তর-পশ্চিম রাজ্যে এই জাতীয় 10 টি পঙ্গপালের ঝাঁক উড়ছে। যদি তারা এইভাবে আক্রমণ চালিয়ে যায় তাহলে কিছুদিনের মধ্যই সমগ্র দেশকে খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হতে হবে।
ফসলের উপর পঙ্গপালের প্রভাব:-
ভারতবর্ষে এই মুহূর্তে শীতকালীন যে রবিশস্য লাগানো এখন থেকেই শুরু হয়ে গেছে। তাই এই মুহূর্তে ভারতে পঙ্গপালের দল গম, সরিষা ও বিভিন্ন ডালজাতীয় শস্য ক্ষেতের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে।
তবে এই পঙ্গপালের ঝাঁক নাগপুরে কমলা চাষ; উত্তর প্রদেশের কোমল বাজরা এবং মুগ ডাল; এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে তুলাচাষ ও শাকসব্জিকে ব্যাপকভাবে ধ্বংস করেছে। ভারতের পঙ্গপাল সম্পর্কে সতর্কতা প্রদানকারী সংস্থা এবং ভারতীয় কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (ICAR) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন তারা বর্ষার (1,জুন) আগমনের পূর্বেই এই পঙ্গপাল আক্রমণের হার যতটা সম্ভব দমন করা যায় তার সর্বশ্রেষ্ঠ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কারন বর্ষাকালে বাতাসে আর্দ্রতার হার যখন বেশি হয় তখন পঙ্গপাল গুলি পরিপক্ক হয়ে ওঠে এবং আরো সংখ্যা বৃদ্ধি করে। যা খরিফ (বর্ষা) ফসলের ক্ষতি করতে পারে।
কীভাবে পঙ্গপালের আক্রমণ রোধ করার চেষ্টা করছে ভারত?
পঙ্গপালের ঝাঁকগলি নিয়ন্ত্রণ করতে ভারত সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে, কৃষি মন্ত্রকের অধীনস্থ পঙ্গপাল সম্পর্কে সতর্কতা প্রদানকারী সংস্থা (LWO) কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য নোডাল এজেন্সি হিসাবে কাজ করছে। তারা যুক্তরাজ্যের মাইক্রন নামক একটি কোম্পানির থেকে 60 টি স্প্রে মেশিনের অর্ডার দিয়েছে।
ইতিমধ্যে পোকার আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য 810 ট্র্যাক্টর লাগানো স্প্রেয়ার, 120 টি সার্ভে গাড়ি, 89 ফায়ার ব্রিগেড এবং 47 নিয়ন্ত্রক গাড়ি দিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে।
পাশাপাশি তারা কীটনাশক স্প্রে করার জন্য ড্রোন ব্যবহার করারও প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
LWO রাজস্থানের আজমির, চিত্তোরগড় এবং দৌসায় অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ শিবির গড়ে তুলেছে। উত্তর প্রদেশের ঝাঁসিতে; এবং মধ্যপ্রদেশের মন্দাসৌর, উজ্জয়িনী ও শিবপুরিতেও একই রকম শিবির তৈরি করা হয়েছে।
যদিও পঙ্গপালের আক্রমণ নতুন কিছু নয় তবে এ বছর পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। একেই সমগ্র বিশ্ব COVID-19 মহামারীতে ভুগছে। এই অবস্থায় খাদ্য সংকট কিছুটা হতে পারে।