দ্বিতীয় পর্যায়ে করোনা ভাইরাসের আক্রমন কি তীব্রতর হবে ?
বর্তমান পৃথিবী করোনা ত্রাসে কম্পমান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খ্যাতনামা বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাসের দ্বিতীয় তরঙ্গের প্রবলতা সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে আগাম সতর্কবার্তা জারি করেছেন। তাঁদের আশঙ্কা এই দ্বিতীয় বা তৃতীয় তরঙ্গ বর্তমান পরিস্থিতির থেকে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে যা বিশ্বের আরও ক্ষতি থেকে আনতে সক্ষম।
আমরা ইতিহাস ঘেটে যা বুজলাম তাতে ৫০% চান্স আছে অন্যভাবে ভাবার – হয়তো বিজ্ঞানীরা যা ভাবছেন তা নাও হতে পারে। এখন যখন প্রথম পর্যাযে আমরা লড়াই করছি তখন বিজ্ঞানীদের প্রতিদিন নতুন নতুন ভবিষৎবাণী থেকে দূরে থাকায় ভালো। এমতাবস্থায় আরও দুঃসহ পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য জনসাধারণকে সচেতন এবং তৈরী থাকতে হবে। অযথা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে মানসিক অবসাদগ্ৰস্ত হয়ে পড়লে সামগ্ৰিকভাবে সমাজ মুষড়ে পড়বে। এমনকি পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলেও মানুষ তাদের স্বাভাবিক আত্মবিশ্বাস হারিয়ে নতুন উদ্যমে কাজ করার, পড়ন্ত অর্থনীতিকে তুলে ধরার মানসিকতা ত্যাগ করবে সহজেই। এবার দেখে নেওয়া যাক করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত পূর্বঘটিত প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের মহামারী গুলি।
SARS (Severe Acute Respiratory Syndrome) সংক্রমণের সময়ের ঘটনাবলী :
SARS রোগটির সংক্রমণ প্রথম চিহ্নিত হয় ২০০২ সালের ১৬ই নভেম্বর চিনের গুয়াংডং প্রদেশের ফোসান এ। SARS-CoV-1 ভাইরাসটি এই সংক্রমণের মূল হোতা। এই ভাইরাস টি করোনা ভাইরাস প্রজাতিভুক্ত হলেও এর রোগ সংক্রমণ ক্ষমতা SARS-CoV-2 ভাইরাসের থেকে কম। এটি মূলত প্রাণীবাহিত ভাইরাস এবং বাদুড় ও ভাম বিড়াল এর প্রাথমিক ও দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত বাহক। একবার মানব শরীরে প্রবেশ করলে তা অতিদ্রুত একজন থেকে অপর জনের দেহে সংক্রমিত হয়ে ২৬ টি দেশের মধ্যে ভয়াবহ মহামারীর আকার ধারণ করে।
এই ভাইরাস এর সংক্রমণের লক্ষণ গুলি হল – ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণ, দৈহিক ক্লান্তি, কাঁপুনি, মাথা যন্ত্রণা, এবং পেটে ব্যথা। কিছু ক্ষেত্রে লক্ষণ গুলি সংক্রমণের দ্বিতীয় সপ্তাহে তীব্র রূপ নেয় যা শ্বাসকষ্টের সাথে অত্যধিক কাশি তে পরিবর্তিত হয়। এই সময় রোগী কে ICU তে ভর্তি করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ২০০২ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২০০৪ সালের মে মাস পর্যন্ত ৮০৯৬ জন মানুষ SARS সংক্রমণের শিকার হয়, যাদের মধ্যে ৮১০ জনেরই (মৃত্যু হার – ৯.৬ %) মৃত্যু ঘটে। New York Times পত্রিকার খবর অনুসারে ২০০৪ সালের মে মাসের পর চীন বা পৃথিবীর অন্য কোন দেশে নতুন করে SARS সংক্রমণ বা কোনো দ্বিতীয় বা তৃতীয় তরঙ্গ সূচিত হয়নি।
MERS (Middle East Respiratory Syndrome) সংক্রমণের সময়ের ঘটনাবলী :
২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সৌদি আরবে প্রথম MERS-CoV নামক এক মারণাত্মক ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে। মধ্য প্রাচ্যের সংলগ্ন দেশগুলিতে এই ভাইরাসের সংক্রমণ মূলত গন্ডিবদ্ধ থাকায় বিজ্ঞানীরা এইরূপ নামকরণ করেন। ২০২০ সালের জানুয়ারী মাস পর্যন্ত বিশ্বের মোট ২৭ টি দেশ এই ভাইরাসের কবলে পড়ে এবং ২৪৯৪ টি ল্যাবরেটরি তে পরীক্ষামূলক ভাবে দেখা যায় যে ৮৫৮ জন এই ভাইরাস এর কবলে পড়ে প্রাণ হারান। ২০১৫ সালের জুন মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৮৪ জন ব্যক্তি এই ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত হন। এদের মধ্যে ৩৮ জনেরই মৃত্যু হয় (মৃত্যু হার – ৪০%)।
তীব্র জ্বর, কাশি, মাথা যন্ত্রণা, শ্বাসকষ্ট, বমি ভাব, ডাইরিয়া এই লক্ষণগুলি আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবস্স্থা সঙ্গীন হয়ে ওঠে এবং নিউমোনিয়া এবং কিডনী কার্যকারিতা বন্ধ হওয়ার মত সমস্যা দেখা যায়। ২০১৫ সালে এই মহামারীর দ্বিতীয় পর্যায় পুনরায় সংক্রমিত হয় যার ভয়াবহতা প্রথমবারের মতোই তীব্র রূপ ধারণ করে।