ডায়াবেটিক নন অথচ হৃদযন্ত্রের সমস্যার সমাধানে এবার ডায়াবেটিক ড্রাগ মেটফরমিন -হিউমান ট্রায়াল স্টাডি
তথ্যসূত্র – ইউনিভার্সিটি অফ ডান্ডি। অনুবাদ ও অক্ষরদানে-মোনালিসা মহান্ত। নিউক্র্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদন
যারা ডায়াবেটিক রোগী নন, তাদের ক্ষেত্রে সাধারণত ডায়াবেটিসের জন্য যে মেটফরমিন নামের ঔষধটি ব্যবহার করা হয়, সেটি হৃদরোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয় অনেকটাই। মেটফরমিন হৃদপেশীকে পুরু হয়ে যাওয়ার থেকে রক্ষা করে, তাই কম হয় হৃদরোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনাও, এমনই তথ্য তুলে ধরেছেন ইউনিভার্সিটি অফ ডান্ডির গবেষকরা।
ইউনিভার্সিটি অফ ডান্ডির, মলিকিউলার ও ক্লিনিক্যাল মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক চিম লং, নেতৃত্বে বিজ্ঞানীরা এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন। গবেষকরা দেখেছেন মেটফরমিন নামের ঔষধটি যারা ডায়াবেটিক রোগী নন, তাদের ক্ষেত্রে হৃদযন্ত্রে সংক্রান্ত সমস্যা অনেক কম করে।
এই গবেষণার মেট-রিমডেলটি (MET-REMODEL) একটি বিখ্যাত ইউরোপীয় হার্ট-জার্নালে প্রকাশিত করা হয়েছে। এই খবর অনুযায়ী গত ছয় দশকের ধরে টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে যে মেটফর্মিনের ব্যবহার করা হয়, তা হাটর্টের লেফ্ট ভেন্ট্রিকুলারক হাইপারটফ্রি (LVH) কে হ্রাস করে তাদের যারা ডায়াবেটিক নন অথচ পূর্বাবস্থা ডায়াবেটিক এবং যাদের হৃদযন্তের রোগ বর্তমান।
LVH কী?
এটি এমন একটি হৃদরোগে যেখানে বামদিকের পাম্পিং চেম্বারের পেশী-প্রাচীরের পুরু হতে থাকে এবং ভবিষ্যতের হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং হার্টফেলের মতো নানান ঝুঁকির হার বাড়িয়ে দেয়।LVH এর সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হল এটি সম্পূর্ণ উপসর্গ বিহীন; ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আক্রান্ত ব্যক্তি বুঝতেই পারেন না, যে তিনি এই ধরনের মারাত্বক সমস্যায় আক্রান্ত। স্ট্রোক, হার্ট-অ্যাটাক হয়ে গেলে বা হার্টের কোনো চেকআপ করাতে গেলে তবেই মানুষ হৃদযন্ত্রে এই মারাত্মক সমস্যার বিষয়ে অবগত হন। পূর্ববর্তী বহু গবেষনার তথ্য অনুযায়ী LVH এ আক্রান্ত ব্যক্তির হৃদযন্ত্র সংক্রান্ত সমস্যায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা খুবই বেশি; কিন্তু যদি LVH নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহলে মৃত্যুর সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে।
অধ্যাপক লং বলেন, “কার্ডিওভাসকুলার রোগ বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ। আমরা পূর্বেই দেখছি যে, মেটফর্মিন কার্ডিওভাসকুলার রোগীদের উপকারী প্রভাব ফেলে।
কিন্তু এই প্রথমবারের কোনো গবেষনায় নন-ডায়াবেটিক হৃদরোগীর (LVH) উপর মেটফর্মিনের প্রভাব ক্লিনালিয়াল ট্রায়ালের মধ্যেমে দেখা হল।
গবেষকরা পুরো এক বছর ধরে একদল প্রি-ডায়াবেটিক কিন্তু LVH নামক হার্টের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপর একটি সমীক্ষা চালান। তার আক্রান্তদের দুটি দলে ভাগ করে নিয়ে – একদলকে মেটফর্মিন এবং অন্য দলটিকে প্লেসবো ড্রাগ দিয়ে ট্রিটমেন্ট করতে থাকেন। আর সাথে সাথেই দুই দলের সদস্যদের হৃদযন্ত্রের কী পরিবর্তন হচ্ছে তা MRI করে মনিটরিং করতে থাকেন। LVH প্রধান কারণ হল উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা এবং ইনসুলিন প্রতিরোধ ইত্যাদি, এগুলিই করণারী আর্টারি রোগের প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়। এই সমীক্ষাটি পরিচালনা করে গবেষকরা দেখেছেন যে দলটির উপর মেটফর্মিন ব্যবহার করা হয়েছিল তাদের বাম ভেন্ট্রিক্যলের পেশীর স্থূলতা; প্লেসবো ড্রাগ ব্যবহারকারীর তুলনায় 2 গুন কম হয়েছে।
গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী মেটফর্মিন ঔষধটি ব্লাড প্রেসার, অক্সডেটিভ স্ট্রেস কম করতে সাহায্য করে, এমনকি বডি ওয়েটও প্রায় 3.6 কেজি কম করতে সাহায্য করে।
যদি অনেক মানুষের ক্ষেত্রে মেটফর্মিনের সু-প্রভাব পাওয়া যায়, তাহলে অনেক মানুষ আশার আলো দেখতে পাবেন।
দ্যা মেট রিমডেল (MET-REMODEL) ট্রায়াল মডেলের সমস্ত অর্থভার বহন করেছে ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন (BHF)। এটাই বিশ্বের প্রথম ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল; যেখানে মেটফর্মিনের মতো সাধারণ বহূল ব্যবহৃত ওষুধে কীভাবে LVH এর মতো বিপদজনক স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধ করে বা কম করে। এই ধরনের সস্তা দামের ঔষধ ব্যবহার করে যদি LVH এর মতো হৃদযন্ত্রের সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়, তাহলে প্রতিবছর NHS এর কয়েক হাজার পাউন্ড খরচ কমে যাবে।
মহাপ্রদীপ মোহান, এই ট্রায়ালের প্রধান তদন্তকারী বলেছেন, “রক্তচাপ নিয়ন্ত্রক ঔষধগুলিই সাধারণত LVH এর চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হতো, কিন্তু এই পদ্ধতিটি বিশেষভাবে কার্যকরী ছিল না; অনেক রোগীদের রক্তচাপ নর্ম্যাল, তাদের ক্ষেত্রে এই ঔষধগুলি ব্যবহার করা যায় না। তাই আমাদের অন্য ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োজন ছিল। আর এই ক্ষেত্রে আমাদের এই চাহিদা মেটফর্মিন পূরণ করতে পারবে বলে আশা করা যায়।”
যাইহোক আমরাও আশারাখব যাতে মেটফর্মিনের মতো ঔষধ সমস্ত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলি নির্বিঘ্নে পার করে পারে। তাহলে LVH এর মতো বিপদজনক সমস্যার হাত থেকে বহু মানুষ বাঁচতে পারবেন।