শিশু, শৈশব ও ব্যাড টাচ্ গুড টাচ্
নিউক্র্যাড হেলথ বাংলার প্রতিবেদন
সদ্য স্কুলে ভর্তি হওয়া ছোট্টো মিষ্টি মেয়েটি হঠাৎ করেই একদিন স্কুল থেকে ফিরে আসে পেটে ব্যাথা নিয়ে। ব্যাথায় কাতরাতে কাতরাতে সে বাড়িতে জানায় সে আর স্কুলে যাবেনা। বাবা, মা দিশেহারা হয়ে প্রথমে ভাবেন বাচ্ছাটি বায়না করছে পরে বুঝতে পারেন কোথাও একটা কিছু গোলমাল আছে। কিছুদিন বাদে তাঁরা যেটা আবিষ্কার করেন তা তাঁদের এক ভয়ঙ্কর ঘটনার মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়ে দেয়। তাঁরা জানতে পারেন বাচ্ছা মেয়েটিকে স্কুলের কোনো কর্মী নানা অছিলায় খারাপভাবে শরীর স্পর্শ করে চলেছিলেন, বেশ কিছুদিন ধরে এবং যৌনসম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করে গেছেন। বিষয়টি জানতে পেরে শিশুটি কন্যাটির বাবা মা সাথে সাথে মেয়েকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান ও স্কুল কতৃপক্ষকেও ঘটনাটি জানান।
উপরের ঘটনাটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় আমাদের আজকের সমাজে। প্রতিদিন টেলিভিশন খুললে, খবরের কাগজের পাতা উল্টানো কিংবা সোস্যাল মিডিয়া মাধ্যমে এই ধরনের জঘন্য ঘটনা আমাদের চোখে পড়ে ও আমাদের আতঙ্কিত করে তোলে। আমরা বস্তুত বুঝেই যাই এই দিনকাল কোনো বয়সের মেয়েরাই আর সুরক্ষিত নেই। তিন-চার বছরের ছোট্টো শিশুগুলোও রেহাই পায়না এইসব মানসিকভাবে বিকৃত মানুষগুলোর হাত থেকে। এরা ভালো মানুষের রূপ ধরে, কাছের লোক সাজার অছিলায় অবোধ শিশুকন্যাদের ও নিজেদের শিকার বানায় তাদের অসচেতনার সুযোগ নিয়ে। তাই এই মূহূর্তে দাড়িয়ে প্রাথমিক স্কুল স্তর বা প্রি-স্কুল স্তর থেকেই বাচ্ছাদের গুড টাচ্ ও ব্যাড টাচ্ নিয়ে সচেতন করে তুলতে হবে। যাতে এই সমস্ত বাচ্ছাগুলি ভবিষ্যৎ এ সাবধান হতে পারে অপরিচিত ও পরিচিত এইসব সুযোগসন্ধানী মানুষগুলোর থেকে।
ভালো আদর, খারাপ আদর
আপনার বাড়ির শিশুটিকে পরিষ্কার করে প্রথমেই বুঝিয়ে দিন যে বাড়ির বাইরের যে জগৎ সেখানে সে কি কি ধরনের স্পর্শের সন্মূখীন হতে পারে। টাচ্ বা স্পর্শ সাধারণভাবে আদান প্রদানের একটি শক্তিশালী মাধ্যম। মাও শিশুর বন্ধন শুরুই হয় স্পর্শের মধ্যে দিয়ে। স্পর্শ যেমন ভাললাগার, তেমনই কিছু স্পর্শ অস্বস্তির, খারাপ লাগার। জড়িয়ে ধরা, হাত মেলানো, প্রণাম, কপালে চুমু খাওয়া, পিঠ চাপড়িয়ে দেওয়া এমনকি আলতো মারধোর ও স্পর্শেরই বিভিন্ন রকম। কিন্তু এখানে লক্ষ্য রাখা দরকার যাকে টাচ্ করা হচ্ছে সে এই টাচ্টিকে কিভাবে গ্রহণ করছে। এই স্পর্শগুলি তার ভালোলাগার নাকি বিরক্তির বা অস্বস্তির!
সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠিতে দুইধরনের স্পর্শ কি কি রকম হতে পারে তা দেখে নেওয়া যাকঃ-
গুডটাচ্ (ভালো লাগার, আদরের স্পর্শ)
গুড টাচ্ আমরা তাকেই বলি যা আমাদের মনে ভালোলাগা তৈরী করে, সুরক্ষিত বোধ করায় ও রক্ষা করবে বলে ভরসা দেয়। এটা যে কোনরকমের হতে পারে যেমন বন্ধুর উষ্ণ করমর্দন, বাড়ির বড়দের বা শিক্ষকদের পিঠ চাপড়ানো, নিজের কেউ আলতো জড়িয়ে ধরা, এইসব কিছুই।
ব্যাড টাচ্ (অস্বস্তির স্পর্শ)
অপর দিকে ব্যাড টাচ্ আমাদের মনে গ্লানি, অপমান ও অস্বস্তির জন্ম দেয়। কোনো বাইরের লোক যদি আমাদের মারধোর করে, চুল ধরে টানে, লাথি মারে অথবা শরীরের গোপন ও নিজস্ব অংশে গুলি যেমন বুক, পিছনের দিক কিম্বা জনন অঙ্গের মতো একান্ত ব্যক্তিগত জায়গাগুলি ছুঁয়ে দেয় ইচ্ছা করে তবে তা আমাদের মনে অত্যন্ত খারাপ লাগার অনুভূতি তৈরী করে। তাই বাড়ির বাচ্ছাদের শরীরের বিভিন্ন গোপন ও নিজস্ব অংশগুলিকে প্রথমে চেনাতে হবে, এবং বোঝাতে হবে একমাত্র পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করতেই ওই স্থান গুলিতে হাতদেওয়া প্রয়োজন। তাদের এটাও জানাতে হবে যে নিজেদের কাজ নিজে করার মত বড় হয়ে গেলে, এমনকি তাদের অভিভাবকরাও ওই জায়গাগুলি স্পর্শ করতে পারেননা।
এই সচেতনার কাজটি এমন করে করা দরকার যাতে বাচ্ছাটির মনে মনে অন্য মানুষ সমন্ধে অকারন ভীত বা সন্ত্রস্ত হয়ে না ওঠে।
যদি কোনো বাচ্ছা ব্যড টাচ বুঝতে পারে, তবে তার কি করা উচিৎ
গুড টাচ্ বা ব্যাড টাচ্ চেনানোর পরের ধাপে বাচ্ছাকে এইরকম অবস্থায় পড়লে কি করতে হবে সেই বিষয়ও পুরোপুরি ধারণা দিতে হবে।
- অভিভাবকদের উচিৎ সবসময় বাচ্ছার সাথে একটা সরল ও সহজ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক মেনে চলা। তবেই বাচ্ছা তার খারাপ অভিজ্ঞতার কথা নিদ্বির্ধায় স্বতস্ফূর্ত ভাবে বলতে পারবে।
- বাচ্ছাটি রাস্তাঘাটে কোথাও অস্বস্তিকর স্পর্শের সন্মূখীন হলেই যেন চিৎকার করে ওঠে। চিৎকার করলে আশে পাশের লোকের নজর পড়বে বিষয়টির উপর এবং যে লোকটি অন্যায় কাজটি করছে সেও ভয় পাবে।
- কোনো বদ্ধ জায়গায় এই রকম অভিজ্ঞতা ঘটলে প্রথমেই বাচ্ছাটিকে শেখাতে হবে ছুটে পালিয়ে যাবার কথা। পালিয়ে লোকজন আছে এমন জায়গায় যাওয়ার কথা। বাচ্ছাকে বোঝাতে হবে চুপ করে না থাকতে। এইরকম কোনো ঘটনা তার সাথে ঘটলে সে যেন তার বিশ্বাসযোগ্য কোনো মানুষ যেমন ক্লাসটিচার, বাবা, মা, কিম্বা বাড়ির কাজে সাহায্য করার পিসি বা মাসিটিকে নিজের অস্বস্তির বিষয়টি খোলাখুলি জানাতে। এই ধরনের কোনো ঘটনা শিশুটির সাথে ঘটলে সেটা তার দোষ নয় সেটা যে লোকটি এই কাজটি করেছে তার অপরাধ এটাও বোঝানো দরকার। লজ্জা না করে, ভয় না পেয়ে নিজের খারাপ লাগাটা জানাতে হবে।
এই স্বল্প পরিসরে গুড টাচ্ ও ব্যাড টাচ্ নিয়ে কিছু ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হল যাতে প্রতিটি বাড়ির ছোটো ছোটো ফুলের মতো শিশুরা সচেতন থাকে, সুরক্ষিত থাকে।