মহামারী চলাকালীন আমরা কীভাবে বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যদের যত্ন নেব, আসুন জেনে নিই

COVID-19 সমাজের প্রত্যেককেই প্রভাবিত করেছে। তবে SARS-CoV-2 আক্রান্ত তরুণদের তুলনায় বয়স্কদের প্রাণ সংশয়ের ঝুঁকি বেশি। আমেরিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রর (CDC) মতে, COVID-19 এর কারণে যুক্তরাষ্ট্রে মারা যাওয়া প্রতি 10 রোগীর মধ্যে 8 জন 65 বছরের বা তার বেশি বয়সের মানুষ। অন্যান্য দেশেও পরিস্থিতি প্রায় একই রকম। বিভিন্ন দেশ থেকে প্রাপ্ত সামগ্রিক তথ্যানুসারে 0-39 বছর বয়সীদের মধ্যে COVID-19 আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার 0.2 শতাংশ। এটি 60-79 বয়সী ব্যক্তিদের মধ্য এই মৃত্যুর হার বেড়ে হয় 3.6 শতাংশে এবং 80 বছরের উপরে জনসংখ্যায় এই মৃত্যুর হার 14.8 শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এইরকম পরিস্থিতিতে যুব-প্রজন্মকেই এগিয়ে এসে বয়স্ক ব্যক্তিদের বিশেষ যত্ন নিতে হবে, যাতে মহামারী চলাকালীন সময়ে তারা শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে কোনও সমস্যায় না পড়েন।

আসুন আমরা মহ মহামারী চলাকালীন বয়স্ক ব্যক্তিদের মানসিক এবং শারীরিক যত্ন কিভাবে নেব তা জেনে নিই।
বাড়ির বাইরে যতটা সম্ভব কম পারা যায় বেরোনোর চেষ্টা করুন:-

ভারতে, বাড়ির বয়স্করা বেশিরভাগই তাদের ছেলে বা কন্যার সাথে থাকেন। তাই, বাড়ির সদস্যদের উচিত 60 বছরেরও বেশি বয়সী পিতা মাতা বা বাড়ির যেকোন বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যকে বাজারহাট বা ছুটকো কোন প্রয়োজনে বাইরে না পাঠানো। বাড়ি তরুণ সদস্যরা সহজেই কাজগুলি করে দিতে পারবেন। এমনকি এই বয়সের ব্যক্তি যদি একা থাকেন, তাহলেও তাদের উচিৎ সমস্ত প্রয়োজনীয় পণ্য অনলাইনে অর্ডার করা।
বৈদ্যুতিন গেটওয়ের মাধ্যমে ইউটিলিটি বিলগুলি (বিদ্যুৎ, জল, ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল এবং মোবাইল ফোন) দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে:-

যেহেতু বয়স্কদের ক্ষেত্রে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি,তাই স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে তাদের অতিরিক্ত সতর্ক হওয়া উচিৎ। সাবান বা অ্যালকোহল-ভিত্তিক স্যানিটাইজার দিয়ে ঘন ঘন হাত ভালো করে ধুয়ে নিন। ভাইরাসটি একটি রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড (RNA) জিনোম, প্রোটিনের স্তরে আবদ্ধ এবং একটি বাইরে লিপিডের একটি স্তর আছে। তবে এই RNA, প্রোটিন এবং লিপিডের মধ্যে সংযোগ দুর্বল অসমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ। যখন এই ভাইরাসটি সাবান বা অ্যালকোহল-ভিত্তিক স্যানিটাইজারের সক্রিয় উপাদানগুলির সংস্পর্শে আসে, তখন ভাইরাসটির মৃত্যু ঘটে। সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পাশাপাশি, নিয়মিত জামাকাপড়, তোয়ালে, পর্দা এবং বিছানা-বালিশের চাদর এসব সাবান জলে ধুয়ে নেয়ার অভ্যাস করুন।

সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন:-
কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাদ্য গুলিকে এটা কম করার চেষ্টা করুন প্রোটিন যুক্ত খাবার বেশি বেশি খাওয়ার চেষ্টা করুন। নিয়মিত ডিম, মাছ, মাংস বা ডাল খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করুন। প্রাতঃরাশের সময় আপেল, আঙ্গুর, কলা, কমলা এবং আম জাতীয় তাজা ফল খান। এগুলি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা দেহে ফ্রি র্যাডিক্যালগুলি কম করে। ফলের মধ্যে ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থের মাত্রা বেশি থাকে, যা প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করবে। এই স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো আপনাকে বা আপনার বাড়ির বয়স্ক সদস্যকে কেবল করোনাভাইরাস থেকে নয়, অন্যান্য রোগ থেকেও নিরাপদ রাখে।

বাড়ির জ্যেষ্ঠ সদস্যের সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন, কিন্তু খেয়াল রাখুন তাকে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবেন না:-

পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের সাথে কথা বলার সময় 6 ফুট দূরত্ব বজায় রেখে সামাজিক দূরত্ব বজায় করাটা অপরিহার্য, তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে যেন তাদেরকে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবেন না। বিভিন্ন দেশে যেভাবে দীর্ঘকালীন লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে তাতে তারা মানসিক চাপ বাড়ছে, অনেকেই ভেঙে পড়েছেন। বয়স্করা কাছের মানুষের সান্নিধ্য পাবার জন্যে আকুল হয়ে রয়েছেন। তাদের রুমে যান, গল্পগুজব করুন, একটু সঙ্গ দেওয়ার চেষ্টা করুন, তবে তাদের সাথে কথা বলার সময় দূরত্ব বজায় রাখুন।

আপনার বাড়িতে যদি কোনও বয়স্ক সদস্য থাকে তবে বারবার দরজার হাতলগুলি, উইন্ডো সিল, চেয়ার এবং সোফা, সুইচগুলিকে স্যানিটাইজ করুন। যদি আপনার পিতা-মাতা আপনাদের থেকে দূরে অন্যত্র একা থাকেন, তবে নিয়মিত হোয়াটসঅ্যাপ এবং গুগল মিটের সাহায্যে ভিডিও কলে তাদের সঙ্গে নিয়মিত ভাবে যোগাযোগ রাখুন।
আপনার দেওয়া একটু সময় বা সঙ্গ তাকে মানসিকভাবে সবল করে তুলতে পারে; যা পরোক্ষে করোনার সাথে লড়াইয়ে তাঁকে মানসিক শক্তি যোগাবে।
এসবের পাশাপাশি দরকার হালকা কিছু যোগব্যায়াম যা ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করবে সাথেই আনবে মানসিক প্রশান্তি।
আপনার বাড়িতে যদি কোন বয়স্ক সদস্য থাকে তার খেয়াল রাখুন। বা আপনি নিজে যদি ষাটোর্ধ্ব হয়ে থাকেন তাহলে নিজের খেয়াল রাখুন । সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন।