ভারতে 5-14 বছর বয়সী শিশু মৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব
কলমে-স্পূর্তি রমন। অনুবাদ ও অক্ষরদানে-মোনালিসা মহান্ত। নিউক্র্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদন
5-14 বছরের বয়সের শিশুদের মধ্যে মৃত্যুহার 5 বছরের কম বয়সী শিশুদের চেয়ে বেশ কম, তবু এখনও বিশ্বজুড়ে 5-14 বছরের বয়সী আনুমানিক এক মিলিয়ন বাচ্চা মারা যায়। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় কানাডা, ব্রাজিল, চীন, মেক্সিকো, ভারত ও সুইজারল্যান্ডের গবেষকরা ভারত, চীন, ব্রাজিল এবং মেক্সিকোর শিশুদের মৃত্যুর কারণগুলি বিশ্লেষণ করে এই বিপজ্জনক ঘটনার কারণগুলি উন্মোচিত করার চেষ্টা করেছেন। এই দেশে 5-14 বছর বয়সী আনুমানিক 40% শিশুই এই দেশ গুলোর বাসিন্দা, যেখানে ঐ বয়সী শিশু মৃত্যু হার আনুমানিক ২00,000। তাদের গবেষণার ফলাফল পত্রিকা দ্য লান্সেটে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকরা দেখেছেন 2005 থেকে 2016 সালের মধ্যেই এই চার দেশের মধ্যে 5-14 বছর বয়সী 244,401 জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা এই মৃত্যুর বেশিরভাগের মৃত্যু এমন কারনে হয়েছে যা কিন্তু প্রতিরোধযোগ্য ছিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মৃত্যুর সাধারণ কারণগুলির ছিল সংক্রামক বা অ-সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া, পথদুর্ঘটনা , জলে ডুবে যাওয়া এবং ক্যান্সার।
শিশুমৃত্যুর হার ভারত সবচেয়ে বেশি:-
গবেষণাটির ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ভারতেই প্রতি বছর প্রায় 10,109 জন শিশু মৃত্যু ঘটে। গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে ছেলেদের মধ্যে অ-সংক্রামক রোগে মৃত্যু ছাড়াও, অন্য চারটি দেশের মধ্যে ভারতে মৃত্যুহারের সর্বোচ্চ। “ভারতই একমাত্র দেশ যেখানে সংক্রামক রোগের প্রকোপেই, অর্ধেকে শিশুর মৃত্যুর ঘটে।”
গবেষণায় বিবেচিত এগারো বছরের মধ্যে, অর্থাৎ, 2005 থেকে 2016 সাল পর্যন্ত, 1-14 বছর বয়সের বয়সী শিশুদের মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। যদিও গবেষণার প্রাথমিক বছরগুলিতে ছেলেদের এবং মেয়েদের মধ্যে মৃত্যুহারে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য ছিল, তবে এটি ২016 সালের দিকে তাকিয়ে অনেক কম হয়েছিল।
ভারতে মেয়েদের মৃত্যুর প্রধান কারণ ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া এবং নিউমোনিয়া ইত্যাদি। অন্যদিকে, ছেলেদের বেশিরভাগই ডুবে যাওয়া, ডায়রিয়া বা পথ-দুর্ঘটনায় মারা যায়। গবেষণায় পাওয়া গেছে যে চীন ও ভারতে পথদুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা সবথেকে বেশি ছিল। ভারতে প্রায় 90% পথদুর্ঘটনার শিকার সাধারন পথচারী, পেডেল সাইক্লিস্ট, বা দুই চাকা বা তিন চাকাযুক্ত যানবাহন ব্যবহারকারীরা। চীনে, সড়ক দুর্ঘটনার শিকার প্রায় 57% পথচারী। গবেষণায় দেখা গেছে যে ব্রাজিল এবং মেক্সিকোতে শিশুমৃত্যুর উল্লেখযোগ্য কারণ ছিল আগ্নেয়াস্ত্র সম্পর্কিত এবং মেক্সিকোতে ছেলেদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি ছিল।
সামগ্রিকভাবে, ভারতীয় মেয়েদের বাদে, সকল দেশে পথ-দুর্ঘটনায় মৃত্যু শীর্ষে ছিল। মেক্সিকো, ব্রাজিল এবং চীনে বালক-বালিকা দের ক্ষেত্রে ক্যান্সারে মৃত্যুর প্রকোপও চারদিকে ছিল কিন্তু ভারতে ছেলেদের ক্ষেত্রে ক্যান্সারের মৃত্যু নবম স্থানে এবং মেয়েদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু সপ্তম কারণ ছিল।
তবে আশার কথা হলো, গবেষণায় দেখা গেছে এই বয়সের শিশুদের মৃত্যুর বেশিরভাগই প্রতিরোধযোগ্য।
“2016 সালে, ভারতবর্ষের সংক্রামক রোগ থেকে প্রায় 74,000 টি মৃত্যু হয়েছিল, যা ভারতে মোট শিশু মৃত্যুর প্রায় অর্ধেক এবং চারটি দেশে শিশু মৃত্যুর এক তৃতীয়াংশ”। অধ্যয়নরত চারটি দেশে, প্রায় সব শিশু মৃত্যুই প্রতিরোধযোগ্য এবং চিকিৎসাযোগ্য।
গবেষকরা আশাবাদী যে যথাযথ সর্তকতা অবলম্বন করলে মৃত্যুর হার হ্রাস করা সম্ভব। তারা বলেন, “এই বয়সের মৃত্যুর প্রতিরোধী ব্যবস্থা কার্যকরী, সাশ্রয়ী”। এই ধরনের মৃত্যু প্রতিরোধী ব্যবস্থার একটি উদাহরণ হচ্ছে সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে টিকাদান কর্মসূচী।
এই গবেষণায় নির্ধারিত মৃত্যুর কারণ, এই ধরনের শিশুমৃত্যু প্রতিরোধী এবং নিয়ন্ত্রণ কাজে খুবই সহায়ক হবে।