এপ্রিল 20, 2024

গর্ভাবস্থায় অ্যাসিটামিনোফেন জাতীয় ওষুধের ব্যবহার শিশুর অটিজমের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।

Reading Time: 3 minutes

নিউক্র‍্যাড হেলথ বাংলার প্রতিবেদন ।

আপনি কি মা হতে চলেছেন? প্রায়ই গায়ে হাতে পায়ে ব্যথা অনুভব করেন? ব্যথা কমানোর চট্‌জলদি উপায় হিসাবে অ্যাসিটামিনোফেন ব্যবহার করেন? তা হলে আপনার সাবধান হবার, সর্তক হবার সময় এসেছে।

গর্ভবর্তী মা গর্ভাবস্থাকালীন যে যে ওষুধ গ্রহণ করে তা সরাসরি গর্ভস্থ শিশুটিকে প্রভাবিত করে Placental blood এর মাধ্যমে। অর্থাৎ মা এর জরায়ুর যে অংশটি দিয়ে গর্ভস্থ শিশুর কাছে রক্ত ও পুষ্টি পৌছোঁয়। Early life origin of diseases এর অধিকর্তা ডাক্তার ইয়াকসোবিন ওয়াং একটি সতর্কবার্তায় জানিয়েছেন গর্ভাবস্থায় অ্যাসিটামিনোফেন জাতীয় ওষুধ খেলে গর্ভস্থ শিশুটির অ্যাটেনসন ডেফিসিট হাইপারএ্যাক্টিভ ডিসঅর্ডার (ADHD) বা মনোযোগের ঘাটতি ও অটিজমের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আমেরিকায় প্রায় ২/৩ ভাগ বাঃ ৬০% গর্ভবর্তী মায়েরা গর্ভাবস্থাকালীন গায়ে হাতে পা যন্ত্রণা কমানোর জন্য অ্যাসিটামিনোফেন ব্যবহার করেন এবং অজান্তেই বাড়িয়ে তোলেন গর্ভস্থ ভ্রুনটির ADHD এর সম্ভাবনা। 

ডাক্তাররা কি কারনে অ্যাসিটামিনোফেন নিয়ে চিন্তিত?

অতি সাম্প্রতিক কিছু গবেষক ও ডাক্তারদের একটি দল বিভিন্ন রক্তের নমুনার উপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছেন। এই নমুনাগুলির মধ্যে ছিল বিভিন্ন গর্ভবতী মায়েদের গর্ভাবস্থাকালীন রক্ত ও তাঁদের সদ্যোজাত শিশুর অ্যাম্বিলিক্যাল কর্ড ব্লাড বা নাড়ির রক্তের নমুনা। সমীক্ষার ফলাফল চমকে দেবার মত। তাতে দেখা গেল যে সব মায়েরা গর্ভাবস্থায় অ্যাসিটামিনোফেন ব্যবহার করেছেন তাদের শিশুদের ADHD বা অর্টিজমের মতো কিছু জন্মগত ক্রটির সম্ভাবনা বেড়ে গিয়েছে, দ্বিগুন পরিমানে। অ্যাসিটামিনোফেন মায়ের রক্তে মিশে Placenta বা ফুলের মধ্যে দিইয়ে ভ্রুনের অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে এবং এইরকম একটি বহিরাগত রাসায়নিক ভ্রুনের নানা অঙ্গের, বিশেষ করে মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা দিতে থাকে।

কেন অ্যাসিটামিনোফেন ঝুঁকিপূর্ণ?

গর্ভবতী ইদুঁরদের নিয়ে একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে গর্ভকালীন অবস্থায় অ্যাসিটামিনোফেনের ব্যবহার মস্তিষ্কের কোষগুলিতে প্রভাব বিস্তার করার সাথে শরীরের নানা হরমোন এর মাত্রায় ও বদল ঘটায়। পরবর্তীকালে এই সমীক্ষাকারী দলই গড়ে ১০ বছরের প্রায় ১০০০টি বাচ্ছার উপর পরীক্ষা চালিয়ে লক্ষ্য করেন যে নমুনাস্থিত ১০০০টি বাচ্ছার মধ্যে ADHD বা অটিজমে আক্রান্ত বাচ্ছাদের সংখ্যার মধ্যে অর্ধেকএর বেশী ছেলে এবং তাদের মায়েরা গর্ভাবস্থাকালীন অ্যাসিটামিনোফেন এর প্রয়োগ করেছিলেন নিজেদের শরীরে। সমীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী এই বাচ্ছাগুলির মধ্যে ২৬% এর ADHD, ৭% এর অটিজম এবং ৪% এর মধ্যে দুটিরই অর্থাৎ ADHD ও অটিজম ঘটনা লক্ষ্য করা গেছে। আবার এদের মধ্যে ৩০% এর অন্যান্য গঠনজনিত ক্রটি দেখা গিয়েছে।

সমীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে গবেষকের দল গর্ভাবস্থায় অ্যাসিটামিনোফেন এর প্রেসক্রিপসন এর ব্যাপারে আরো সর্তক হবার দাবী জানিয়েছেন। যদিও একথা অনস্বীকার্য এই সমীক্ষা এই ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্ককে প্রতিষ্ঠা করেনা এবং সর্বোপরি কেবলমাত্র ১০০০ জন বাচ্ছার উপর করা সমীক্ষার ফলাফল ADHD বা অর্টিজমের ঘটনার কেন্দ্রগুলিকে সঠিকভাবে নির্দিষ্ট করার পক্ষে যথেষ্টও নয়। এরজন্য আরো দীর্ঘমেয়াদী নিবিড় গবেষণার প্রয়োজন।

ADHD (Attention deficit hyperactive disorder) বা চঞ্চলতাজনিত মনোযোগে ঘাটতি বিষয়টি কি?

ADHD হলো একটি nurodevelopmental condition বা অবস্থা যেখানে একটি বাচ্ছা দীর্ঘসময় ধরে কোনো বিষয়ে মনোনিবেশ করতে পারে না কখনও বা একদমই মনোযোগ দিতে পারেনা। ফলে মারাত্মক চঞ্চল ও অমনোযোগী এইসব বাচ্ছারা বাড়িতে বা স্কুলে অসম্ভব সমস্যার সন্মুখীন হয়।

সাধারণত তিন ধরনের ADHD বা অ্যাটেনসন্‌ ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভ ডিসঅর্ডার এর ঘটনা দেখতে পাওয়া যায়। অমনোযোগীতা (inattentive), চঞ্চলতা ও জেদী (impulsive) ও এই দুইয়ের মিশ্র প্রভাব। তৃতীয় ক্ষেত্রে আক্রান্ত বাচ্ছা ছেলে বা মেয়েটি স্কুল ও সামাজিক জীবনে ভীষণভাবে অসুবিধাবোধ করতে থাকে।  

অটিজম কি?

অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD) বা অটিজম বলতে কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য বোঝায় যেখানে একজন মানুষ স্বভাবগত ও বাকবিনিময় বা ভাববিনিময়গত কিছু অসুবিধা বোধ করেন। সাধারণত দেখা যায় যে এই সব বাচ্ছারা স্কুলের প্রথাগত কাঠামোতে অসুবিধা বা অস্বস্তির মুখোমুখি হলেও কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে যেমন সংগীত, বাদ্যযন্ত্রচালনা, চিন্তাশক্তি কিংবা অঙ্কের মতো বিষয়ে অসম্ভব পারদর্শী হয়।

সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল এর সমীক্ষা অনুযায়ী আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৫৯ জন বাচ্ছার মধ্যে একজন বাচ্ছা অটিজমে আক্রান্ত এবং এঁদের মধ্যে বেশীরভাগ বাচ্ছারই জন্মের দুই বছরের মধ্যে অসুবিধার বিষয়টি নজরে আসে।

গর্ভাবস্থায় অ্যাসিটামিনোফেন এর ব্যবহার বিষয়ে সমীক্ষার ফলেই এই সমস্ত ঘটনা সামনে এসেছে, যদিও পুরো নিশ্চিত হবার আগে আরো অনেক অনেক গবেষণার প্রয়োজন, কিন্তু সবথেকে বড়ো কথা গর্ভাবস্থায় ওই মধুর দশটি মাসে একজন হবু মা এইটুকু সাবধানতা চাইলেই নিতে পারেন যা তার গর্ভস্থ ভ্রুনটিকে অটিজমের মতো জন্মগত ক্রটির থেকে একটু হলেও নিরাপদে রাখতে পারবে।