এপ্রিল 19, 2024

কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের স্ট্রোক হবার সম্ভাবনা ক্ষীণ কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম ঘটে : মার্কিন গবেষণার তথ্য

Reading Time: 4 minutes

ডঃ শুভময় ব্যানার্জী, পিএইচডি; নিউক্র্যাড হেলথ বাংলার প্রতিবেদন, আগস্ট ১১, ২০২০

বিশ্ব জুড়ে কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিক অব্যাহত। এই মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ ও বিভিন্ন উপসর্গের কারণ জানতে বিশ্বব্যাপী চলছে নানা গবেষণা। ইতিমধ্যেই জানা গেছে নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই বিষয়ে গবেষণা চালিয়ে চীনের ইউনিয়ন হসপিটাল এবং আমেরিকার নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের নিউরোলজি বিভাগের বিজ্ঞানীরা একটি আশঙ্কাজনক তথ্য প্রকাশ করেছিলেন যে নভেল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে স্ট্রোক হবার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু সম্প্রতি, ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভ্যানিয়া স্কুল অফ মেডিসিনের গবেষকরা বিশদ গবেষণায় জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাঁদের কেবলমাত্র পূর্ব থেকেই উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে সেই সব রোগীর স্ট্রোক হবার সম্ভাবনা বেশী। এছাড়াও দেখা গেছে, সামগ্রিক ভাবে কোভিড-১৯ সংক্রমণে স্ট্রোক হবার সম্ভাবনা খুবই কম। গবেষকদের এই কাজ আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের “স্ট্রোক” পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

কিন্তু কিভাবে হয় এই স্ট্রোক? নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সাথে তার সম্পর্কই বা কি? জেনে নেওয়া যাক সেইসব কথা।

১৬০০ শতকে বিখ্যাত সুইস প্যাথলোজিস্ট যোহান জেকব উইফার প্রথম স্ট্রোকের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন মস্তিষ্কের রক্তবাহের ক্ষয়ক্ষতির ফলে মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে অথবা রক্তবাহের অভ্যন্তরে রক্ত জমাট বাঁধার ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলিতে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ ব্যাহত হয়। দেখা দেয় শরীরে পক্ষাঘাত ও অন্যান্য অসুস্থতা। স্ট্রোক হবার এটিই সর্বপ্রধান কারণ। এই স্ট্রোককে অনেক সময়ে ‘ব্রেন অ্যাটাক’ বলেও উল্লেখ করা হয়।

স্ট্রোকের প্রকারভেদ:

চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্রধানত তিন প্রকার স্ট্রোকের উল্লেখ আছে, যেমন-

১. ইস্কেমিক স্ট্রোক (Ischemic Stroke)

এই প্রকার স্ট্রোকের দুটি ভাগ, একটি হলো থ্রোম্বোটিক (Thrombotic) এবং এমবোলিক (Embolic) স্ট্রোক। সূক্ষ্য রক্তপিন্ড (Blood Clot) যখন শুধুমাত্র মস্তিষ্কের রক্তবাহ পথে (Cerebral Circulation) আটকে যাওয়ায় মস্তিষ্কে রক্ত ও অক্সিজেন কম সরবরাহ হতে থাকে, তাকে থ্রোম্বোটিক স্ট্রোক বলে। কিন্তু, যখন শরীরের অন্যত্র (প্রধানত হৃদপিণ্ডের রক্তবাহে) রক্তপিন্ড তৈরী হয়ে মস্তিষ্কে সংবাহিত হয় এবং মস্তিষ্কের সূক্ষ্য রক্তবাহে রুদ্ধ হয়ে স্ট্রোক সৃষ্টি করে তাকে এমবোলিক স্ট্রোক বলে। 

২. হেমোরেজিক স্ট্রোক (Hemorrhagic Stroke) 

মস্তিষ্কের ধমনী ফেটে, মস্তিষ্কের কোষকলায় রক্ত ছড়িয়ে পড়ে করোটি ও মস্তিষ্কের মধ্যে প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করে। একে ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমোরেজিক স্ট্রোক বলে। আবার যখন মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুধুমাত্র মস্তিষ্ক ও তাকে ঘিরে থাকা কোষকলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তাকে সাবঅ্যারাকনয়েড হেমোরেজিক স্ট্রোক বলে। 

৩. ট্রানসিয়েন্ট ইস্কেমিক অ্যাটাক (Transient Ischemic Attack-TIA)

কখনো দেখা যায় স্ট্রোকের উপসর্গ খুব সাময়িক সময়ের জন্যে শরীরে প্রকাশ পায়। অর্থাৎ, মস্তিষ্কের রক্তবাহে রক্তপিন্ডের অবস্থান খুব কম সময়ের জন্যে হয়। তবে TIA বড়ো স্ট্রোকের পূর্বাভাষ হতে পারে।

নিউক্র্যাড হেলথ নিয়ে আসছে নিউক্র্যাড হেলথ হাব – বাংলায় এক নতুন স্টার্ট আপ এক বাঙালি বিজ্ঞানীর হাত ধরে।

স্ট্রোক ও কোভিড-১৯ এর মধ্যে সম্পর্ক:

নভেল করোনা ভাইরাস ফুসফুস ছাড়াও মস্তিষ্কেও সংক্রমণ ছড়ায়। এই ভাইরাস মস্তিষ্কে প্রদাহ (Inflammation) সৃষ্টি করে। ফলে মস্তিষ্কের কলাকোষের রক্তবাহগুলিতে রক্ততঞ্চনের মাধ্যমে সূক্ষ্য রক্তপিন্ড তৈরী হয়। মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের গতি রুদ্ধ হয়ে স্ট্রোক ও অন্যান্য স্নায়বিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। তবে এখনো পর্যন্ত কিভাবে SARS-CoV-2 ভাইরাস মস্তিষ্কের ক্ষতি করে তা বিজ্ঞানীদের কাছে অজানা রয়ে গেছে। এটা এখনো স্পষ্ট নয়, ভাইরাসটি মস্তিষ্কের ‘ব্লাড-ব্রেন-ব্যারিয়ার’ এর সরাসরি ক্ষতি করে নাকি সংক্রমণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রোগীর রক্তচাপ বৃদ্ধি পেয়ে স্ট্রোক হয়।

ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভ্যানিয়ার পেরেলম্যান স্কুল অফ মেডিসিনের নিউরোলজি বিভাগের বৈজ্ঞানিক ডঃ ব্রেট কুখিয়ারা জানিয়েছেন, অবশ্যই কোভিড-১৯ এর সাথে স্ট্রোকের সম্পর্ক আছে, কিন্তু শুধুমাত্র কোভিড-১৯ স্ট্রোকের জন্যে দায়ী নয়। ফিলাডেলফিয়ার তিনটি হাসপাতালের মোট ৮৪৪ জন করোনা রোগীর উপর গবেষণা করেন ডঃ কুখিয়ারা ও তাঁর গবেষকদল। রোগীদের মধ্যেযাঁদের ইন্ট্রাক্রেনিয়াল হেমারেজ আছে, তাঁদের ডেটা আলাদা করে বিশ্লেষণ করা হয়। তাঁরা দেখেন মাত্র ২.৪% রোগীর ইস্কেমিক স্ট্রোক হয়েছে এবং তাঁদের সবার উচ্চ রক্তচাপ আছে। আশ্চর্যের বিষয়, হাসপাতালে ভর্তি কোভিড-১৯ রোগীর মাত্র ০.৯% ইন্ট্রাক্রেনিয়াল হেমারেজে আক্রান্ত এবং তাঁদের গড় বয়স ৬৪ এর উপর। অর্থাৎ সামগ্রিক ভাবে বলা যায়, কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের স্ট্রোক হবার সম্ভাবনা খুব কম এবং বেশীরভাগ প্রবীনরাই স্ট্রোকের শিকার হয়েছেন। এখনো অনেক গবেষণা দরকার কোভিড-১৯ ও স্ট্রোকের মধ্যে স্পষ্ট সম্পর্ক বুঝতে।

খুব তাড়াতাড়ি বাংলায় আসছে অনলাইনে এক অভিনব ডাক্তার পরিষেবা – সঙ্গে থাকুন
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন [email protected]
Panel discussion with Doctors (ডাক্তার ও উপদেশ )
আসছে নতুন সচেতনতামূলক বার্তা – স্তনদুগ্ধ ও শিশুর পুষ্টি

তথ্যসূত্রঃ 

  1. Rothstein A, Oldridge O, Schwennesen H, Do D, Cucchiara BL. Acute Cerebrovascular Events in Hospitalized COVID-19 Patients [published online ahead of print, 2020 Jul 20]. Stroke. 2020;STROKEAHA120030995. doi:10.1161/STROKEAHA.120.030995
  2. Yaghi S, Ishida K, Torres J, et al. SARS-CoV-2 and Stroke in a New York Healthcare System [published correction appears in Stroke. 2020 Aug;51(8):e179]. Stroke. 2020;51(7):2002-2011. doi:10.1161/STROKEAHA.120.030335
  3. Mao L, Jin H, Wang M, et al. Neurologic Manifestations of Hospitalized Patients With Coronavirus Disease 2019 in Wuhan, China [published online ahead of print, 2020 Apr 10]. JAMA Neurol. 2020;77(6):1-9. doi:10.1001/jamaneurol.2020.1127
  4. Merkler AE, Parikh NS, Mir S, et al. Risk of Ischemic Stroke in Patients With Coronavirus Disease 2019 (COVID-19) vs Patients With Influenza [published online ahead of print, 2020 Jul 2]. JAMA Neurol. 2020;e202730. doi:10.1001/jamaneurol.2020.2730
  5. Qureshi AI, Abd-Allah F, Al-Senani F, et al. Management of acute ischemic stroke in patients with COVID-19 infection: Report of an international panel [published correction appears in Int J Stroke. 2020 Jun 22;:1747493020935396]. Int J Stroke. 2020;15(5):540-554. doi:10.1177/1747493020923234
  6. Moskowitz MA, Lo EH, Iadecola C. The science of stroke: mechanisms in search of treatments [published correction appears in Neuron. 2010 Oct 6;68(1):161]. Neuron. 2010;67(2):181-198. doi:10.1016/j.neuron.2010.07.002
  7. Boehme AK, Esenwa C, Elkind MS. Stroke Risk Factors, Genetics, and Prevention. Circ Res. 2017;120(3):472-495. doi:10.1161/CIRCRESAHA.116.308398