করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা কেন?
মোনালিসা মোহন্ত, নিউক্র্যাড হেলথ বাংলা
এখন, সবাই করোনা ডাইরাস বা Covid -19 যে সারাবিশ্বে মহামারীর আকার ধারণ করেছে সে বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠেছে। ইউরোপ ও আমেরিকায় প্রায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ নতূন করে আক্রান্ত হচ্ছে SARS-CoV-2 দ্বারা। পাশাপাশি ভারতেও বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। যদিও ভারতের অধিকাংশই প্রাথমিক উপসর্গগুলিরই সম্মুখীন হয়েছে, প্রায় 10 শতাংশ রোগীদের গুরুতর রকমের অসুস্থ হয়ে পড়ায় আইসিইউ-তে ভর্তি করার প্রয়োজন হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী, নরেন্দ্র মোদী ভারতে 24 শে মার্চ থেকে 21-দিনের লকডাউন জারি করেছেন। তবে এই সময়কালে, অপরিহার্য পরিসেবা গুলোই উপলব্ধ থাকবে। আর মানুষজন সত্যিই কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন হলে তবেই বেরোতে পারবেন। এই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কতটা কম হতে পারে বা মহামারী সময়ে এর উপকারিতা গুলি কি কি তা আমরা একটু জেনে নিই:-
আপনি যদি সঠিকভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেন তাহলে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নিম্নমুখী হওয়া সম্ভব:-
করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির হার তৃতীয় বা চতুর্থ সপ্তাহের পর থেকে দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে, গ্রাফিকাল লাইন এই সময়ের থেকে উর্দ্ধমুখী থাকে। এই সময়ে, একজন SARS-CoV-2 আক্রান্ত ব্যাক্তি একদিনেই আরো অনেক ব্যাক্তিকে সংক্রমিত করতে পারে। এমন অবস্থায়, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলে বা দেশের অভ্যন্তরে লকডাউন ঠিকভাবে কার্যকর করলে তবেই গ্রাফের মুখ নিম্নমুখী করা সম্ভবপর।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ ((ICMR)) -এর বিশেষজ্ঞদের মতে, আমরা এই অনুশীলন সঠিকভাবে অনুসরণ করেতে পারলে করোনা সংক্রমণ 62 শতাংশ পর্যন্ত কম করা সম্ভব। তবে, নাগরিকদের আইনগুলির কঠোরভাবে অনুসরণ করা উচিত, এবং প্রশাসনের উচিৎ লকডাউনের নিয়মাবলী পালন করতে নাগরিকদের বাধ্য করা । সিঙ্গাপুর, জাপান এবং চীন তাদের দেশে সামাজিক দূরত্ব সঠিকভাবে অনুশীলনের পরে আশানুরূপ ফলাফল পেয়েছে।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলে করোনা সংক্রমন মহামারীর আকার নিতে বিলম্ব করবে, এই সময়ের সদ্ব্যবহার করতে হবে:-
সাধারণভাবে, এই সংক্রমণ মহামারীর আকার ধারণ করা অবধি করোনাভাইরাস অতি দ্রুত হারে ছড়াতে থাকে। উর্দ্ধমুখী গ্রাফ শীর্ষস্থানে পৌঁছানোর পরে,আক্রান্তের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে।
চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, এবং জাপান ইতিমধ্যে করোনা দ্বারা সর্বোচ্চভাবে আক্রান্ত হয়েছে। বর্তমানে এইসব জায়গাগুলিতে নতুন আক্রান্তের সংখ্যার কম সংখ্যা হয়েছে।
সংক্রমন শুরু হবার প্রথমিক পর্ব থেকেই সামাজিক দূরত্ব সঠিকভাবে বজায় রাখলে, করোনা ভাইরাস এর সংক্রমণ কে কমানো সম্ভব এবং মহামারীর আকার নেয়া থেকে কয়েক সপ্তাহ বিলম্বিত করা সম্ভব। আর এই গুরুত্বপূর্ণ সময়কালকে সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগিয়ে, প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ গুলির উচিৎ নতুন হাসপাতাল স্থাপন করা, উপযুক্ত সংখ্যক বেডের ব্যবস্থা করা, আক্রান্তদের আইশোলেশন রাখা সম্ভবপর হয় তার উপযুক্ত ব্যবস্থা করা, ভেন্টিলেটর এবং সুরক্ষা সরঞ্জাম কিনে রাখা ইত্যাদি মাধ্যমে নিজেদের প্রস্তুত করতে পারে। নার্স এবং চিকিৎসকদের জন্য এই সময়সীমার মধ্যেই COVID-19 এর সাথে মোকাবেলার জন্য উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার।
চিকিৎসার জন্য সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা:-
2020-এর, মার্চের 11 তারিখে,নজিরবিহীন বৃদ্ধির হার দেখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) COVID-19 কে মহামারী হিসাবে ঘোষণা করেছে। সমস্ত বিশ্বজুড়ে প্রখ্যাত গবেষক পণ্ডিত এবং চিকিৎসকরা এখন এই ভাইরাসটির উপর গবেষণা চালাচ্ছেন এবং COVID-19 নিয়ন্ত্রণের জন্য নতূন ফলপ্রসূ উপায় বের করার চেষ্টা করছেন।
এমত সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাই মহামারীর বিস্তারকে কম করতে পারে। বিভিন্ন রাজ্যের চিকিৎসক কর্মীরা সফলভাবে সংক্রমণ রুখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। বর্তমানে বেশিরভাগ দেশেই SARS-CoV-2 এর চিকিৎসা করার জন্য হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার করছে। তবে এই ওষুধটি হার্ট এবং লিভারের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। আক্রান্ত রোগীদের কেবল চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানেই এই ওষুধটি খাওয়া উচিত।
প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের চাহিদা কম করা সম্ভবপর হয়:-
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলে এইরোগ ছড়ায় কম। যা পরোক্ষভাবে SARS-CoV-2 টেস্টিং কীট, n95 মাস্ক ,প্রতিরক্ষামূলক ইউনিফর্ম, ভেন্টিলেটর এবং ওষুধের জরুরীকালীন সরঞ্জামের চাহিদা সীমিত রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও যেহেতু একটি নির্দিষ্ট সময়ে কম সংখ্যক রোগী সংক্রামিত হন তাই স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষগুলি আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা সঠিকভাবে করতে পারেন এবং ওষুধের পর্যাপ্ত সরবরাহ দিতে সক্ষম হয়। হাসপাতালগুলির সরবরাহ শেষ না হওয়ায় এরকম একটা চ্যালেঞ্জিং সময়ে তারা রোগীদের ভাল যত্ন নিতে পারেন।
লকডাউন সময়ে জন্য হারিয়ে আপনার সময়টা কিভাবে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারেন তার কিছু টিপস নিচে দেয়া হল:-
- বেশিরভাগ সংস্থাগুলি কর্মচারীদের জন্য বাড়ি থেকে কাজ করার ঘোষণা করেছে, সুতরাং, আপনি আপনার প্রতিদিনের অফিসের কাজগুলো করতে থাকবেন।
- ফ্রিল্যান্সাররা এই সময়টিকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে নিজেদের দক্ষতা আরো বাড়িয়ে তুলতে পারেন।
- আপনি আপনার যেকোনো শখ যেমন রান্না, বাগান করা, পেইন্টিং এবং অন্যান্য কারুশিল্প গুলো এইময় চর্চা করতে পারেন।
- আপনার পরিবারের সাথে সময় কাটান।
নিয়মিত যোগ বা হাল্কা ব্যায়াম করুন মন ও শরীর দুই ভালো থাকবে।
করোনভাইরাস মহামারী চলাকালীন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলে কি কি সুবিধা হতে পারে তা নিশ্চয় জানতে পারলেন। পরিশেষে, আপনাদের কাছে আমাদের অনুরোধ, সমস্ত রকম সতর্কতামূলক পদক্ষেপগুলি পালন করুন, তবে, দয়া করে মহামারী সম্পর্কে আতঙ্ক বা মিথ্যা সংবাদ ছড়াবেন না।
নিউক্র্যাড হেলথ বাংলা আপনাদের সকলের আরোগ্য কামনা করে।
1 thought on “করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা কেন?”
Comments are closed.