ডিসেম্বর 24, 2024

একিউট এনসেফালাইটিস সিন্ড্রোম – শতাধিক শিশুমৃত্যু হল বিহারের মুজাফরফরপুরে

lychee-fruits-pink-food-46518
Reading Time: 3 minutes

নিউক্র‍্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদন

2019 সালের এই গ্রীষ্মে, বিহারের মুজাফফরপুর জেলায় নিম্ন আয়যুক্ত পরিবারের 140 টিরও বেশি ছোট শিশু একটি রহস্যজনক জ্বরের শিকার হয়। অসুস্থতার কারণে একই অঞ্চলের 309 জন শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের প্রত‍্যেকের ই খুব বেশি জ্বর, মাথাব্যাথা, খিঁচুনি, হ্যালুসিনেশন, ক্ষুধামন্দা, এবং বমিভাবের মতো নানান উপসর্গগুলি দেখা দিয়েছিল। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন এই প্রাদুর্ভাবের জন্য দায়ী একিউট এনসেফালাইটিস সিন্ড্রোম (AES)। এবং পরিস্থিতি এতটাই খারাপ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ হর্ষ বর্ধন পরিস্থিতিটির নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজ‍্য পরিদর্শন করেছেন।

শিশুবিশেষজ্ঞদের মতে, বিষাক্ত মিথিলিন-সাইক্লোপ্রোপাইল-গ্লাইসিন (MCPG) যা সাধারণভাবে হাইপোগ্লাইসিন-A নামে পরিচিত রাসায়নিকটির উপস্থিতি এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের একদল বিজ্ঞানী 2017 সালেই লিচুতে প্রাকৃতিকভাবেই হাইপোগ্লাইসিন-A উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন। 2019 সালের জুন মাসে বিহারের গ্রামীণ এলাকায় এর প্রকোপ মহামারীর আকার ধারণ করছে। মনে করা হচ্ছে অনেক শিশু লিচু ফল খাওয়ার পর প্রাণ হারিয়েছে। স্থানীয়দের মধ্যে এই জ্বর “চামকি বুখার”, ‘লিচি হাভোক’, ‘কিলার এনসেফালাইটিস’ বা ‘ডেডলি লিচু টক্সিন’ ইত্যাদি নানান নামে পরিচিত।

এতগুলি নির্দোষ শিশুর মৃত্যুর পেছন কি শুধুমাত্র এই বিষাক্ত লিচুই দায়ী? নাকি আরো অন‍্য কিছু কারন ও আছে??

আজকাল চিকিৎসক মহল ও প্রশাসনিক মহলের প্রধান প্রশ্ন হল, ” কি AES প্রাদুর্ভাবের পিছনে কেবলমাত্র বিষাক্ত লিচু একাই দায়ী? এই ঘটনার সাথে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার পিছনে অন্যান্য কিছু
কারণও সমানভাবে দায়ী ? মুজফফরপুর-ভিত্তিক শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ অরুণ শাহের মতে, “এই মহামারীর জন্য শুধু মাত্র লিচুকে দোষারোপ করা অবাস্তব। AES মহামারী পিছনে, শিশু অপুষ্টি ও মে-জুন মাসের তীব্র তাপপ্রবাহ সমানভাবে দায়ী।” 2016 MCPG টক্সিনের এর উপর যে গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছিল সালে ডাঃ অরুণ শাহও তার সাথে যুক্ত ছিলেন।

নিউক্র্যাড হেলথ নিয়ে এলো বিশ্বের প্রথম স্বাস্থ্য বিজ্ঞান সংবাদ মাধ্যম আমাদের মাতৃভাষা বাংলা তে । আপনাদের সহযোগিতা কামনা করি । নিউক্র্যাড হেলথ পড়ুন আর স্বাস্থ্য বিজ্ঞান তথ্য সংগ্রহ তে এগিয়ে থাকুন ! শেয়ার করে আমাদের সমাজের সচেনতা বাড়াতে সহযোগিতা করুন । আপনারা পেজ টি লাইক করুন । ভালো লাগলে রিভিউ দিতে কার্পণ্য করবেন না ।

ধন্যবাদান্তে
ড: বিশ্বরূপ ঘোষ, গবেষক, আমেরিকায় কর্মরত

অপুষ্টি কীভাবে AES এর সাথে যুক্ত?

চলুন জেনে নিই গবেষকদের মতামত…
গবেষকদের মতে মতে, অপুষ্ট শিশুরা যখন‌ দিনের বেলায় লিচু খায় এবং একটি খালি পেটেই ঘুমাতে চলে যায় – সেইসব শিশুদের মধ্যে AES বিকাশের উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ সঠিক পরিমাণে খাবার না খেলে লিভারের গ্লাইকোজেন স্তর হ্রাসের পেতে থাকে। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্লুকোজ না থাকলে, শরীরের সঞ্চিত গ্লাইকোজেন ভাঙতে শুরু করে। যখন গ্লুকোজের পরিমাণ খুব কমে যায় তখন এটি ভয়াবহ আকার ধারণ করে, দেহর চর্বিযুক্ত টিস্যুগুলি ভেঙে গ্লুকোজ তৈরি হতে শুরু করে! আর এই চর্বিযুক্ত স্তরগুলি ভাঙার সময় শরীরের নানান বিষাক্ত বাই-প্রডাক্ট তৈরী হতে থাকে; যেমন কিটোন – যা একটি মারাত্মক নিউরোটক্সিন। এই অবস্থায় একটি শিশু যখন লিচু খায়,এর মধ্যে উপস্থিত MCPG শরীরে উৎপন্ন বিষাক্ত বাই-প্রোডাক্টের সংস্পর্শে আসে, এবং AES হবার সম্ভাবনা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।

দিনের বেলা লিচু খেয়ে, আবার রাতে না খেয়ে খালি পেট ঘুমিয়ে গেলে শিশুর দেহে গ্লুকোজের মাত্রা কমতে শুরু করে; কখনও কখনও গ্লুকোজ মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে কমে যায় ( প্রতি ডেসিলিটারে মাত্র 30 মিলিগ্রাম)। এমতাবস্থায় শিশুর দেহে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের মাত্রা রাতারাতি বেড়ে গিয়ে, ধূম জ্বর ও‌ অনান‍্য উপসর্গগুলি দেখা দিতে শুরু করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাবা- মা ঠিক কী কারণে এমন হয়েছে তারা ধরতেই পারেন না।

AES ও অপুষ্টির মধ্যে যোগসূত্র খুঁজে বের করতে চিকিৎসকদেরো অনেক সময় লেগেছিল। যখন ডাক্তাররা দেখেন যে, দুপুরের ও রাত্রে পর্যাপ্ত পরিমান খাবার খেতে পায়, এমন পরিবারের কোনও শিশুই এই ধরনের জ্বরে আক্রান্ত হয়নি। কম আয়যুক্ত পরিবার শিশুরাই MCPG এর বিষাক্ত প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কারণে সৃষ্ট এই AES এ আক্রান্ত দের চিকিৎসকেরা কীভাবে রক্ষা করবেন?

যদিও অনেক ক্ষেত্রে হাইপোগ্ল্যাসেমিয়া রোগের কারণে AES এ মৃত্যুর হার ক্রমবর্ধমান, তবুও অনেক ক্ষেত্রেই, চিকিৎসকরা ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে ডেক্সট্রোজ (গ্লুকোজ) প্রয়োগকরে এই মৃত্যু প্রতিরোধ করতে পারেন। তবে, এই ক্ষেত্রে বেশিরভাগ বাচ্চারা প্রত‍্যন্ত গ্রামের অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারেই বেশি দেখা যায়; এই এলাকাগুলিতে চিকিৎসার সুযোগ সুবিধা সীমিত, তাই তৎক্ষণাৎ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। যথাযথ সুয়োগসুবিধা যুক্ত হাসপাতালে ভর্তি করতে করতেই অনেক শিশু অকালে প্রাণ হারায়।

পূর্ববর্তী বছরে সরকার কীভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছিল?

2014 সালে বিহারের কিছু এলাকায় লিচু মৌসমের সময় AES -এর প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যায়। যাইহোক, চিকিৎসা দলগুলি 74 শতাংশ বাচ্চাদের মৃত্যুতে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছিল। তাঁরা AES এ আক্রান্ত শিশুদের দেহে চারঘন্টার মধ্যে দশ শতাংশ করে ডেক্সট্রোজ শিশুর দেহে সরবরাহ করেন।
জেলা কর্তৃপক্ষ স্থানীয় জনতার মধ্যে সচেতনতা বাড়িয়ে তোলে যাতে কোনও শিশু খালি পেটে ঘুমাতে না যায়। 2015 সালে একই প্রতিরোধমূলক কৌশল, বাচ্চাদের মধ্যে তীব্রভাবে অসুস্থ হারকে অনেক হ্রাস করে। যাইহোক, এই বছর, স্থানীয় মানুষের মধ্যে সচেতনতার যথেষ্ট অভাব ছিল, যার ফলস্বরূপ AES এর এই বিপজ্জনক প্রাদুর্ভাব।