এই প্রথমবার ম্যালেরিয়া ভ্যাকসিন বিতরণ শুরু করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
নিউক্র্যাড হেলথ বাংলার প্রতিবেদন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) তার অংশীদারদের সাথে মালাউ-এর ম্যালেরিয়ার প্রবন জায়গাগুলিতে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী টিকাদান কর্মসূচি চালু করেছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন এই কর্মসূচিটি খুব শীঘ্রই ঘানা এবং কেনিয়াতেও চালু হবে। এটি হেলথ কেয়ার পেশাদাররা প্রথমবারের মত শিশুদের ম্যালেরিয়ার প্রতিরোধী এই পাইলট প্রকল্পটি শুরু করেছে। তারা মশারি এবং অন্যান্য মশা প্রতিরোধী জিনিস ব্যবহার সাথে সাথেই, টিকাককরনে সাহায্যেও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ শুরু করতে চান। WHO বিশ্বাস কর যে এই প্রকল্প সফলভাবে চালু করলে প্রতি বছর ম্যালেরিয়ার প্রকোপ থেকে বিশ্বব্যাপী 360,000 শিশুকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
এই অনন্য ম্যালেরিয়াল ভ্যাকসিনটির নির্মাতা হল গ্ল্যাক্সো স্মিথক্লাইন (GSK)। পরজীবী-বাহিত রোগের বিরুদ্ধে সফল প্রতিরোধ গড়ে তুলতে GSK চারটি (4) ডোজ টিকা সুপারিশ করেছে। ক্লিনিকাল ট্রায়ালের সময়, এই টিকা দশজন ব্যক্তির মধ্যে চারজনের ম্যালেরিয়ার সফলভাবে প্রতিরোধ করতে কার্যকর ছিল।
ডাঃ টমাস ক্রুজার, লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের একাজন বিখ্যাত ম্যালেরিয়া বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন “এটি একটি অত্যন্ত কার্যকর জিনিস, কিন্তু এটা কখনোই একটি রূপালী বুলেট নয়।” টিকাকরনের পাশাপাশি অন্যান্য প্রতিরোধী ব্যবস্থাও চালু রাখতে হবে, সেগুলো বন্ধ করলে চলবে না। যেমন- ভালো ইনসেক্টিসাইডের প্রয়োজনীয়তা।
GSK -এর ম্যালেরিয়া টিকার তাৎপর্য কী?
ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী এই ভ্যাকসিন তৈরী করে GSK একটি চমৎকার প্রচেষ্টা করেছে। প্রতি বছর, এই পরজীবী-সংক্রামিত রোগের প্রকোপে শুধুমাত্র আফ্রিকাতেই প্রায় 250,000 শিশুমৃত্যু হয়। এখন পর্যন্ত, এই মারণ রোগের বিরুদ্ধে কোনও কার্যকর টিকাই ছিল না। উষ্মমন্ডলীয় দেশগুলিতে মশা ও মশাবাহিত রোগের ব্যাপক প্রকোপ থাকা সত্ত্বেও, প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ হিসাবে এখনো শুধুমাত্র মশারি এবং মশা প্রতিরোধী ক্রিম ব্যবহার করে। মালাউ, কেনিয়া, ঘানা, ভারত, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড এবং ইন্দোনেশিয়ার মত মশা-প্রবণ, উষ্ণঅঞ্চলে বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য ভ্যাকসিনটি অত্যন্ত কার্যকর হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, 2017 সালে, 87 টি দেশের মোট 219 মিলিয়ন মানুষ এই মারাত্মক সংক্রমণের শিকার হয়েছিল।
কিভাবে ম্যালেরিয়াল সংক্রমণ হয়?
ম্যালেরিয়া সাধারণত প্লাজমোডিয়াম নামক পরজীবী দ্বারা সৃষ্ট। প্লাজমোডিয়ামের ৫টি প্রজাতি মূলত ম্যালেরিয়া সৃষ্টি করে; এই প্রজাতির মধ্যে প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম এবং প্লাজমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স নামের এই দুটি প্রজাতিই সবথেকে বেশি রোগসৃষ্টি করে। প্লাজমোডিয়াম স্ত্রী অ্যানোফিলস মশার দেহে তাদের অর্ধ-জীবনচক্র সম্পূর্ণ করে; এরপর মশার কামড়ের সময় মানুষকেরদেহে প্রেরিত হয়।
এখনো পর্যন্ত জানা গেছে অ্যানোফিলস মশার প্রায় ৪00 টি ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতি রয়েছে; এবং যার মধ্যে প্রায় 30 টি প্রজাতির অ্যানোফিলস ম্যালেরিয়ার ভেক্টর হিসাবে কাজ করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে, এই পোকামাকড়গুলি সন্ধ্যায় এবং ভোরের দিকে খুব সক্রিয় থাকে এবং এই সময়ের মধ্যেই কামড়ায়।
মশার জীবনকাল যে জায়গায় যত দীর্ঘ, ম্যালেরিয়ার প্রকোপ সেই জায়গাগুলো সবথেকে বেশি। এই কারণেই বিশ্বের 90 শতাংশ ম্যালেরিয়ার রিপোর্ট আফ্রিকার দেশগুলিতেই পাওয়া যায়; কারণ আফ্রিকাতেই মশার জীবনচক্র সবচেয়ে দীর্ঘ এবং মানুষকে কামড়ানোর প্রবণতা খুব বেশি।
ম্যালেরিয়াল সংক্রমণজনিত লক্ষণ:-
ডাক্তারদের মতে দুটি ধরনের ম্যালেরিয়া আছে –
1)সাধারণ অর্থাৎ কোনো জটিলতা বিহীন এবং
2)গুরুতর অর্থাৎ সিভিয়ার ম্যালেরিয়া।
প্রথম ক্ষেত্রে যেসব উপসর্গগুলি দেখা যায় সেগুলো হলো – রোগীদের কাঁপুনি দিয়ে উচ্চ জ্বর ভোগ এবং শীত লাগা । এটি প্রায় ছয় থেকে দশ ঘন্টার জন্য স্থায়ী হয় এবং প্রতি একদিন ছাড়া-ছাড়া পুনরাবৃত্তি হয়। রোগীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চ জ্বরের সাথে সাথেই তীব্রকম্পন অনুভব করে। জ্বর ছাড়ার সময় খুব ঘাম হয় এবং চরম ক্লান্তি দ্বারা অনুভব হয়। কখনও কখনও, জ্বরের সাথে সাথেই মাথাব্যাথা এবং বমিও দেখা যায়। এই অবস্থায় সঠিক চিকিৎসা হলে উপশম সম্ভব। কিন্তু যদি এই স্টেজে ম্যালেরিয়াকে অবহেলা করা হয় এবং সঠিক চিকিৎসা না করানো হয় তবে এটি মারাত্মক আকারে রূপান্তরিত হতে পারে, এবং সিভিয়ার ম্যালেরিয়ার দিকে এগিয়ে যায়। সিভিয়ার ম্যালেরিয়ার লক্ষণগুলি আগের অবস্থারি অনুরূপ; সাথে রোগীরা অনেকসময়ই অজ্ঞান হয়ে যায়, একাধিকবার খিঁচুনি, অস্বাভাবিক অভ্যন্তরীণ রক্তপাত, অ্যানিমিয়া, জন্ডিস এবং অঙ্গ বিকল হওয়ার মতো বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়।
ম্যালেরিয়া চিকিৎসা:-
ম্যালেরিয়ার প্রধান চিকিৎসা হল রক্ত-প্রবাহ থেকে রোগ সৃষ্টিকারী পরজীবীর নিষ্কাশন।
WHO সাধারণ ম্যালেরিয়া চিকিৎসার জন্য আর্টেমিসিনিন ভিত্তিক কম্বিনেশন থেরাপি (ACT) সুপারিশ করে। ঔষধ তৈরীর কোম্পানিগুলি এই ওষুধটি আর্টেমিসিয়া নামক উদ্ভিদ থেকে সংগ্রহ করে।
চিকিৎসকেরা ম্যালেরিয়ার লক্ষণ দেখা দেওয়ার প্রথম তিন দিনের মধ্যে প্লাজমোডিয়াম নামক পরজীবীদের সংখ্যা যাতে দ্রুত কমানো যায়, তাই ACT এর সাথেই আরো অন্যান্য ওষুধ খাওয়ার সুপারিশ করেন।
এটি ম্যালেরিয়া ভ্যাকসিন এবং রোগের উপসর্গ ও চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা আজ এটুকুই।