নভেম্বর 23, 2024

নভেল করোনাভাইরাসের ধীরগতির মিউটেশান ভ্যাকসিন তৈরির পথ সহজ করছে

Reading Time: 3 minutes

ডঃ শুভময় ব্যানার্জী, নিউক্র্যাড হেলথ বাংলা জুলাই ৮, ২০২০

বিশ্বব্যাপী ঘটে চলা ক্রমবর্ধমান কোভিড-১৯ সংক্রমণের মধ্যে আশার আলো দেখাচ্ছে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের এক নতুন তথ্য। তাঁরা গবেষণায় দেখেছেন, নভেল করোনাভাইরাসের পরিব্যাপ্তি বা মিউটেশানের গতি অত্যন্ত কম। ফলে এই মারণভাইরাস খুব তাড়াতাড়ি তার নতুন প্রকার বা ‘ভ্যারিয়েণ্ট’ তৈরি করতে পারছে না। এই ঘটনা চিকিৎসাবিজ্ঞানী, গবেষক এবং জনসাধারনের কাছে সুখবর। এর ফলে, বিজ্ঞানীরা সহজে এবং দ্রুত ভ্যাকসিন তৈরির কাজে সাফল্যলাভ করতে পারবেন।

এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার আগে, মিউটেশান ও ভাইরাসের সাথে তার সম্পর্কের কথায় আসা যাক। 

মিউটেশান বা পরিব্যাপ্তি ঘটনাটি আসলে কি? প্রাণী ও উদ্ভিদের শরীরে কোষের নিউক্লিয়াসের ভিতর পাওয়া যায় ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড )। এই ডিএনএ থেকে তৈরি হয় আরএনএ (রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড)। আরএনএ নিউক্লিয়াসে তৈরি হলেও, তা সাইটোপ্লাসমে স্থানান্তরিত হয়। আরএনএ থেকে ট্রান্সলেশান পদ্ধতিতে তৈরি হয় প্রোটিন। যা কোষের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি সম্পাদন করে।  ডিএনএ ও আরএনএ উভয়েই অসংখ্য নিউক্লিওটাইডের  ক্রমপর্যায়ে (Sequence) তৈরি হয়। ডিএনএ-র কিছু নিউক্লিওটাইডের ক্রমপর্যায় বা সিকোয়েন্স জীবের বংশগতির ধারক ও বাহক। একে ‘জিন’ বলা হয়। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, ভাইরাসের ক্ষেত্রে, বংশগতির উপাদান (Genetic Material) ডিএনএ বা  আরএনএ হতে পারে। বিভিন্ন কারনে এই জিনের অর্থাৎ নিউক্লিওটাইড সিকোয়েন্সের কোন পরিবর্তন হলে, তার থেকে তৈরি প্রোটিনের গঠনগত ও কার্যগত পরিবর্তন হয়। একেই মিউটেশান বা পরিব্যাপ্তি বলে। মিউটেশানের বহু প্রকারভেদ দেখা যায়। কোন কোন মিউটেশান জীবের বিবর্তনের সহায়ক আবার কোন কোন মিউটেশান জীব বিবর্তনের পরিপন্থী।  

চার্লস ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচন বা ন্যাচারাল সিলেকশানের ফলে ভাইরাসগুলি ধারাবাহিকভাবে বিবর্তনের পথে এগিয়ে যায়।  এর কারন হোল ভাইরাসের সূক্ষ্ম জিনগত পরিবর্তন এবং পুনরায় বৃহৎ জিনগত পরিবর্তন। বিজ্ঞানের পরিভাষায় প্রথমটিকে ‘মিউটেশন’ এবং দ্বিতীয়টিকে ‘রিকম্বিনেশান’ বলে। এই রিকম্বিনেশান ঘটনাটি মিউটেশানের থেকে আলাদা, কারন দুটি ভাইরাসের মধ্যে জেনেটিক তথ্য বিনিময় ও পুনরায় সমন্বয়ের ফলে রিকম্বিনেশান ঘটে এবং একটি নভেল ভাইরাসের জন্ম হয়।  

আমাদের পরিচিত SARS-CoV-2 এর ক্ষেত্রেও মিউটেশান ঘটছে, কিন্তু অত্যন্ত ধীরগতিতে। জিনগত পরিবর্তনের হার কম বলে, ভাইরাসটির সংক্রমণযোগ্য নতুন ভ্যারিয়েণ্ট তৈরি হতে পারছে না। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরাল জিনোমিক্স প্রোজেক্টে যুক্ত থাকা বিজ্ঞানী উইন্সটন টিম্প ও স্টুয়ার্ট রের মতে, যেহেতু বর্তমানে নভেল করোনা ভাইরাসের বিরুধে কোন রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা মানুষের ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে তৈরি হয় নি, ভাইরাসটির উপর কোন বিবর্তনজনিত  চাপ (Evolutionary Pressure) নেই, এই মুহূর্তেই মিউটেশানের মাধ্যমে নতুন কোন ভ্যারিয়েণ্ট ভাইরাস তৈরি করার। অন্যান্য ভাইরাসজনিত অসুখ, যেমন- ইনফ্লুএঞ্জার ক্ষেত্রে ভাইরাসের জিন মিউটেশানের হার ভীষণ বেশি অর্থাৎ ভাইরাসটি দ্রুত তার চরিত্র বদলে ফেলে। তাই সহজে ভ্যাকসিন তৈরি করা সম্ভব হয় না। নভেল করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে আপাতত এই সমস্যা নেই। তবে, বিজ্ঞানীরা করোনা পরিস্থিতির যথাযোগ্য বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণের জন্যে গড়ে তুলেছেন-’কোভিড-১৯ রিসার্চ রেস্পন্স প্রোগ্রাম’, যা নভেল করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কতটা ইমিউনিটি মানুষের মধ্যে গড়ে উঠছে, তা পর্যালোচনা করতে সাহায্য করবে। বিজ্ঞানীদের আশা, এই ঘটনায় ভাইরাসের প্রোটিন থেকে উপযুক্ত ভ্যাকসিন তৈরি হতে দেরি হবে না।  

https://www.covid19india.org/

তথ্যসূত্রঃ 

  1. Jia Y, Shen G, Zhang Y, Huang K-S, Ho H-Y, et al. 2020 Analysis of the mutation dynamics of SARS-CoV-2 reveals the spread history and emergence of RBD mutant with lower ACE2 binding affinity. bioRxiv10.1101/2020.04.09.034942
  2.  Pachetti M, Marini B, Benedetti F, Giudici F, Mauro E, et al. Emerging SARS-CoV-2 mutation hot spots include a novel RNA-dependent-RNA polymerase variant. J. Translat. Med. 2020;18:179. doi: 10.1186/s12967-020-02344-6
  3. https://www.sciencemag.org/news/2020/03/mutations-can-reveal-how-coronavirus-moves-they-re-easy-overinterpret
  4. Zhao, Z., Li, H., Wu, X. et al. Moderate mutation rate in the SARS coronavirus genome and its implications. BMC Evol Biol 4, 21 (2004). https://doi.org/10.1186/1471-2148-4-21
  5. https://www.nature.com/scitable/topicpage/genetic-mutation-1127/
  6. Fleischmann WR Jr. Viral Genetics. In: Baron S, editor. Medical Microbiology. 4th edition. Galveston (TX): University of Texas Medical Branch at Galveston; 1996. Chapter 43. Available from: https://www.ncbi.nlm.nih.gov/books/NBK8439/
Beladidi
Biggodadu