যৌবনে লাগামছাড়া লাইফস্টাইল? পৃথিবী জুড়ে বেড়ে চলেছে AIDS এর সন্ত্রাস
বিশ্বরূপ ঘোষ, পিএইচডি, কো-ফাউন্ডার, নিউক্র্যাড হেলথ হাব, ডিসেম্বর ১, ২০২২
মনিপুরের বিখ্যাত বডিবিল্ডার কে প্রদীপকুমার সিং এর জীবনের গল্প কিছুদিন আগেই সকলের সামনে আসে এবং আমাদের মনে এক গভীর শঙ্কার জন্ম দেয়। প্রদীপকুমার যিনি শুধু মাত্র মিস্টার মনিপুর, মিস্টার ইন্ডিয়া বা মিস্টার সাউথ এশিয়ার উপাধিতেই ভূষিত হন নি, মিস্টার ওয়ার্ল্ড এর মতো প্রতিযোগিতায় ও ব্রোঞ্জ মেডেল জিতে নেওয়ার মতো অসাধারণ কৃতিত্বের অধিকারী হয়েছেন। আমরা জানতে পারি প্রদীপকুমারের যৌবনের কথা, যখন খ্যাতির আলোয় নীচে ফাঁদ পেতেছিল ড্রাগ এর মতো মারণনেশা। একটা সময় তিনি নিয়মিত ড্রাগ সেবন করতেন এবং একজন নেশাগ্রস্থ মানুষের আর যে সমস্ত ক্ষতিকারক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে অর্থাৎ নেশার ঘোরে অন্য বহু অসংলগ্ন অভ্যাসের বশবর্তী হয়ে AIDS (Acquired immunodeficiency syndrome) এর মতো মারণ রোগের সংস্পর্শও লাভ করেন। এরপর ২০০০ সালে প্রদীপকুমার অবশেষে বুঝতে পারেন যে তার শরীরেও ধীরে ধীরে দখল করছে AIDS এর মারণ থাবা যা ওনাকে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই ভয়ঙ্কর সত্যের মুখোমুখি হবার পর তিনি ঠিক করেন যে AIDS এর বিরুদ্ধে সমানতালে তিনি লড়াই চালাবেন।
প্রদীপকুমার বনাম AIDS এর যুদ্ধ
প্রথমদিকে তিনি শারীরিক ভাবে দূর্বল বোধ করতেন এবং অসুখটির পরিনতির নিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর মানসিক যন্ত্রণাও তার শরীরে প্রভাব ফেলতে শুরু করে। পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন সবাই এড়িয়ে চলতে থাকে তাঁকে, এমনকি যে হসপিটালে চিকিৎসা শুরু হলো তাঁর সেখানকার চিকিৎসা কর্মীরাও অচ্ছুত করে রাখে প্রদীপকুমারকে।
থেরাপি চলাকালীন হসপিটালে একটি কোনে দয়া করে ম্যাট্রেস ও বিছানার চাদর বিহীন একটি বেড দেওয়া হয়েছিল তাকে। যদিও তাঁর পরিবার বিশেষ করে তাঁর শ্যালিকা পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল চিকিৎসার পুরো সময়কাল জুড়ে। চিকিৎসা বা থেরাপি চলার সাথে সাথে প্রদীপকুমার নিজেকে একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনে অভ্যস্ত করে তোলেন, সঠিক পুষ্টিকর খাওয়া, ঠিক সময়ে ওষুধ নেওয়ার পাশাপাশি যে কোনো ধরনের নেশার দ্রব্য থেকে নিজেকে সম্পূর্নভাবে সরিয়ে রাখা ইত্যাদির ব্যক্তিগত পালনীয় বিষয়ের সাথে সাথে তিনি AIDS এর বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলার কাজেও মন দিলেন। তিনি মনিপুর সরকারের যুব ও ক্রীড়া দপ্তরে ফিজিক্যাল ট্রেনার হিসাবে সরকারী চাকরি ও নিলেন।
বর্তমানে সারা বিশ্বের নিরিখে AIDS এর অবস্থান
প্রতিবছর ১লা ডিসেম্বর তারিখটি গোটা পৃথিবীতে AIDS DAY বা এইড্স দিবস হিসাবে পালিত হয়। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার বেশ বড় শতাংশ মানুষ AIDS এর মতো মারণব্যাধি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকলেও দেশে দেশে আজও প্রতিদিন বহুমানুষ এই নিশ্চিত মৃত্যুর ফাঁদ এড়াতে না পেরে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। WHO (World Health Organisation) বা ‘হু’ এর কাছে রাখা তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালের শেষের দিকে অবধি আনুমানিক প্রায় ৩৭.৯ মিলিয়ন মানুষ তাদের নিজেদের শরীরে Human Immune Virus বা (HIV) নিয়ে বেঁচে আছে, যার মধ্যে ২০১৮ সালেই ৭৭০,০০০ জন মানুষ মৃত্যুর দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছেন।
এত ভয়ঙ্কর একটি পরিসংখ্যানের পাশাপাশি কিছু আশার আলো ও দেখা যাচ্ছে। ২০০০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে WHO এর তথ্যসমূহ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ওই ৮ বছরে নতুনভাবে AIDS আক্রান্ত হওয়ার হার সারা পৃথিবীতে কমেছে প্রায় ৩৭% শতাংশ। ভারতবর্ষের চিত্রটিও আশা জাগায়, যেখানে দেখা যাচ্ছে এদেশেও নতুনভাবে এইড্স আক্রান্ত হবার হার ২০১০ এর তুলনায় প্রায় ৪৬% কমেছে, এবং ওই একই সময় আক্রান্তদের মৃত্যুর হার ও কমেছে প্রায় ২২%। সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৯ সালের জুন মাস অবধি সারা বিশ্বে প্রায় ২৪.৫ মিলিয়ন মানুষ ART (Antiretroviral therapy) মাধ্যমে চিকিৎসা পাচ্ছেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সদর্থক সাড়াও দিচ্ছেন।
HIV ও AIDS এর মধ্যকার সম্পর্কটি কি?
HIV বা Human Immune Virus টি সর্বপ্রথম আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তির উপর আঘাত আনে শরীরের CD4 Cells বা কোষগুলিকে মেরে ফেলে। এই CD4 কোষগুলি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার কাজে বীর সৈনিকের ভূমিকা পালন করে, ফলে CD4 কোষগুলি কমে যাওয়া মানে শরীর বাইরের রোগ জীবানুর আক্রমণের মুখে দূর্বল হয়ে পড়ে। ঠিক যেমন সীমান্তে সৈন্য কমে গেলে একটি দেশ বাইরের আক্রমণের মুখে দূর্বল হয়ে যায়। একজন পূর্নবয়স্ক সুস্থ মানুষের শরীরের প্রতি কিউবিক মিলিমিটারে ৫০০ থেকে ১৫০০ CD4 কোষ থাকে। যদি কোনো মানুষের শরীরে এই কোষের সংখ্যা প্রতি কিউবিক মিলিমিটারে কমে গিয়ে ২০০ তে দাঁড়ায়, তবে তাকে AIDS আক্রান্ত বলে ধরে নেওয়া হয়, এবং সেই সময় রোগীটির শরীরে নানা রকমের সুযোগসন্ধানী জীবানুর সংক্রমণ এসে ধীরে ধীরে বাসা বাঁধে।
ডাক্তাররা HIV সংক্রমণের তিনটি স্তর বিষয়ে জানিয়েছেন, যেগুলি হলো-
- Stage 1 বা acute stage – অবস্থাটি সাধারণত রোগীর শরীরে ভাইরাসটি অনুপ্রবেশের প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দেখা যায়।
- Stage 2 বা Chronic Stage – এই অবস্থাটি কে ক্লিনিক্যাল লেটেন্সি বা প্রচ্ছন্ন অবস্থা ও বলে। যখন ভাইরাসটি রোগীর শরীরে বসবাস করে কিন্তু রোগটির কোনোরকম লক্ষণের প্রকাশ ঘটায় না, অর্থাৎ সুপ্ত থাকে।
- Stage 3 –AIDS চিহ্নিতকরণ।
সবশেষে একথা মনে রাখা দরকার যে HIV ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত মানুষকে যদি বিনা চিকিৎসায় দীর্ঘদিন ফেলে রাখা হয় তবে তার শরীরে AIDS লক্ষণ দেখা দেয়। অর্থাৎ লোকটি AIDS এর শিকার হয়। এই রোগটি এমনই মারণরোগ যা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার কোনো চিকিৎসাই নেই। এটা দেখা গেছে যে বিনা চিকিৎসায় একজন AIDS আক্রান্ত মানুষ তিন বছর অবধি মোটামুটি বেঁচে থাকে যদিও ART বা Antiretroviral therapy সাহায্য নিলে ওই মানুষটিরই আয়ু আরো কয়েকবছর বাড়ানো যায়।
“দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য সচেতনতা প্রচার করে আসছি l বাংলায় করেছি দুটি স্টার্ট আপ এর সূচনা lদীর্ঘ প্রচেষ্টার পর অবশেষে গুগল স্টোরে নিউক্র্যাড হেলথ হাব আপ পাওয়া যাচ্ছে I ডাউনলোড করে আপনার হেলথ প্রোফাইল তৈরী করে রাখতে পারেন I আমাদের পাশে থাকবেন l অফিসিয়ালি NC Health Hub app আর ওয়েবসাইট www.nchealthhub.com এর মাধ্যমে টেলিমেডিসিন সার্ভিসেস শুরু পয়লা মে থেকে lবাংলা থেকে ভারত জুড়ে আমাদের প্রচেষ্টাকে গড়ে তুলতে আমাদের পাশে থাকবেন l গুগল প্লে স্টোরের লিংক দিয়ে রাখলাম l প্লিজ ডাউনলোড করে নিজের প্রোফাইল করে রাখবেন l
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.nchealthhub” -বিশ্বরূপ ঘোষ