কর্নাটকে একাধিক রোগীর দেহে মাল্টি ড্রাগ রেজিস্টেন্ট হেলিকোব্যাক্টর স্ট্রেনের সন্ধান পাওয়া গেল
নিউক্র্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদন
একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে মানুষের পেটের মধ্যে বসবাসকারী ব্যাক্টেরিয়া এবং আলসার, গ্যাস্ট্রাইটিস এবং পেটে ক্যান্সারের জন্য দায়ী হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি নামের ব্যাক্টেরিয়াটি , দুইটি বহুল ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক – মেট্রোনিডজোল এবং লিভোফ্লক্সাসিনে এতটাই রেজিস্ট্যান্সি অর্জন করেছে যে ওষুধগুলি আর কোনো কাজেই দেবে না।
মানুষের এবং প্যাথোজেনের মধ্যে সম্পর্ক বেশ ডায়ানমিক। মানুষের বেঁচে থাকা নির্ভর করে প্যাথোজেনগুলির বিরুদ্ধে কতটা ভালো প্রতিরোধ গড়ে তোলার সম্ভব হচ্ছে তার উপর; অন্যদিকে ব্যাক্টেরিয়াদের বেঁচে থাকা নির্ভর করে মানুষের দেহে উপর কতটা ভালভাবে সংক্রামন ঘটিয়ে, বংশবিস্তার করতে পারে তার উপর।
আর চিরদিনব্যাপী এই যুদ্ধে, প্যাথোজেনগুলিকে হত্যা করার জন্য মানুষ নিত্য নতুন ওষুধ তৈরি করে চলেছে, অপরদিকে প্যাথোজেনগুলি সেইসব ড্রাগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য নিজেকে ক্রমশ পরিবর্তন করে চলেছে । অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার পরিবেশে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য দায়ী একটি অন্যতম কারণ।
“গবেষণায় হেলিকোব্যাক্টর সংক্রামিত রোগে ড্রাগ প্রতিরোধের ব্যাপকতা ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করা হয়েছিল; যাতে চিকিৎসার আরও যুক্তিসঙ্গতভাবে অ্যান্টিবায়োটিক সমন্বয় ঘটিয়ে এই সমস্যার সমাধান করতে পারেন। এটি সুনির্দিষ্ট থেরাপি বাস্তবায়নে সহায়তা করবে এবং সংক্রমণের পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করবে”- বলেছেন কর্ণাটকের মনিপাল কস্তুরবা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ও এই গবেষণা দলের প্রধান নির্দেশক ডাঃ মমতা বলাল।
তাদের গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীরা 180 রোগীর কাছ থেকে টিস্যু সংগ্রহ করেছিলেন। যাদের থেকে নমুনা নেওয়া হয়েছিল এদের প্রত্যেকের হেলিকোব্যাক্টর সংক্রমণ পজেটিভ ছিল। এর যখন কস্তুরবা মেডিকেল কলেজ ও টেরিটরি হাসপাতালের চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন তখন তাদের থেকে টিস্যু নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। রোগীর মূলত কর্ণাটকের নয়টি জেলার মানুষ ছিলেন। তারা 113 রোগী থেকে হেলিকোব্যাক্টর স্ট্রেনগুলি আলাদা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সেই স্ট্রেনগুলির উপর পাঁচটি বহুল প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিক বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটা তা পরীক্ষিত হয়েছিল।
ফলাফল রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো! দেখা গেছে 14% স্ট্রেনগুলি সমস্ত পরীক্ষিত অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ছিল; এবং 59.3% স্ট্রেনগুলির একাধিক অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিরোধী ছিল; 86% স্ট্রেন মেট্রোনিডজোল এবং লিভোফ্লক্সাসিন উভয়ের বিরুদ্ধে রেজিস্ট্যান্ট ছিল। এর অর্থ এই যে, কর্নাটকের হেলিকোব্যাক্টার সংক্রমণের বিরুদ্ধে চিকিৎসা করার জন্য যে মেট্রোনিডজোল এবং লিভোফ্লক্সাকিন ব্যবহার হতো তা আর কার্যকর ছিল না।
পৃথক পৃথক ভাবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের ফলাফল হল- মেট্রোনিডজলের ক্ষেত্রে 81 শতাংশ প্রতিরোধ, লিভোফ্লক্সাসিনের বিরুদ্ধে 54.9 শতাংশ, ক্ল্যারিথোমাইসিনের বিরুদ্ধে ২0.4 শতাংশ, টেট্রাসাইক্লিনের বিরুদ্ধে 5.3 শতাংশ এবং আমক্সিসিলিনের বিরুদ্ধে 7.1 শতাংশ প্রতিরোধ ক্ষমতা দেখা গেছে।
ডাঃ বল্লাল জানিয়েছেন, – “এই গবেষণায় জাতীয় মহামারী পর্যবেক্ষণের অগ্রগতির একটি দৃঢ় ভিত্তি হিসাবে কাজ করতে পারে যা প্রমাণ ভিত্তিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে উপকারী ভূমিকা পালন করবে। এবং, প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যর্থ হলে হেলিকোব্যাক্টারের নির্মূলকরণের ব্যবস্থাপনায় অন্য পথ অনুসরণের ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।”
ভবিষ্যৎ কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এই ফলাফলটি হেলিকোব্যাক্টারে কোন কোন ড্রাগে রিজিস্ট্যান্ট তা সনাক্তকরণকারী একটি কিট বানানোর পরিকল্পনা করছে, যা চিকিৎসাকদের হেলিকোব্যাক্টারের সংক্রামন নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করবে।
গবেষক দলের অন্যান্য সদস্যরা কস্তুরবা মেডিকেল কলেজের হলেন ভিগনেশ শেঠি, গণেশ সি. পাই, রামচন্দ্র লিঙ্গদাকাই, গীরিশা বালারাজু এবং শিরিন শেঠী এবং ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাঃ এং গুয়ান চুয়া, বিনিতলামিচেন এবং চিন ইয়েন টয় ছিলেন। গবেষনাটি “গাট প্যাথোজেনস” নামের একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।