অটিজম – একটি নিউরো-ডেভ্যলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার
নিউক্র্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদন। মোনালিসা মহান্ত এপ্রিল ০২, ২০২৩
প্রতি বছর জাতিসংঘ এবং সকল সদস্য রাষ্ট্র এপ্রিল (ASD) সম্পর্কে জ্ঞান ও সচেতনতা বিস্তারের জন্য 2রা এপ্রিল “বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস” পালন করে।
যাইহোক, প্রশ্নটি হচ্ছে এই একটি মাত্রদিন সচেতনতা পালন করে কী, সমস্যার সুরাহা হবে?
ট্রেনিং ও গবেষণার জন্য সরকারের কী আরও অর্থ সরবরাহ করা প্রয়োজন? অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা বিস্তারের ক্ষেত্রে সাধারণ জনসংখ্যার দায়িত্ব গুলি কি? কিভাবে আমরা পিতামাতার ও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে পারি ? অটিজম’ সম্পর্কিত সচেতনতা সম্পর্কে আরও জানতে নিবন্ধটি পড়তে থাকুন ।
অটিজম কি?
অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD) সহ শিশু সামাজিক মিথস্ক্রিয়া গুলো করতে পারে না।
তারা পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ প্রদর্শন করে। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (CDC) এর তথ্য অনুসারে, মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের মধ্যে অটিজম হবার প্রবণতা বেশি থাকে। এই নিউরো-ডেভ্যলপমেন্টাল ডিসঅর্ডারের পুরুষ ও মহিলাদের হবার অনুপাত 4:1।
2014 সালে, প্রতি 59 জন ব্যক্তির মধ্যে একজন অটিজমের সাথে সম্পর্কিত লক্ষণের বহিঃপ্রকাশ দেখিয়েছিল।
অটিজম লক্ষণ:–
অটিজমের লক্ষনগুলো 12 থেকে 24 মাস বয়স থেকেই দেখা যায়। এর প্রাথমিক লক্ষণগুলি নীচে দেওয়া হল।
- ভাষা এবং সামাজিক দক্ষতা বিকাশে বিলম্ব।
- আবেগ, অনুভূতির বহিঃপ্রকাশে অক্ষমতা।
- অন্য জনের সাথে যোগাযোগ করার সময় অসুবিধা র সম্মুখীন।
- অন্যের চোখের বা শরীরের ভাষা পড়ায় অক্ষমতা।
- কথা বলার সময় একই কথা বারবার বলা।
- কোনো নির্দিষ্ট আচরণ বারবার পুনরাবৃত্তি করা।
- বিশেষ কোনো বিষয়ে আগ্রহ দেখানো।
অটিজমের কারণ কি?
বিজ্ঞানীরা এখনও অটিজমের সঠিক কারণটি খুঁজে পাননি। গবেষকরা জানিয়েছেন অনেক গুলো ফ্যক্টর একত্রে এই অবস্থা তৈরি করতে পারে। পারিবারিক ইতিহাস, জেনেটিক মিউটেশনগু, ফ্র্যাজাইল এক্স সিন্ড্রোম, পিতামাতার যদি খুব বেশি বয়সী হয়, অতিরিক্ত কম ওজনের সন্তান প্রসব, বা ভ্যালপ্রোয়িক অ্যাসিড এবং থ্যালিডোমাইড মত ঔষধের ব্যবহার ইত্যাদি নানান কারণে, ভ্রূণের অটিজম বিকাশের প্রবণতা দেখা যায়। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডারস অ্যান্ড স্ট্রোক (NINDS) এর তথ্য অনুসারে, পরিবেশগত ও জেনেটিক উভয় কারণেই শিশুদের মধ্যে অটিজম দেখা দিতে পারে।
অটিজম সনাক্তকরণ:-
প্রাথমিক পর্যায়ে অটিজমের যে সমস্ত উপসর্গগুলো দেখা যায় সেগুলো দেখে এবং কিছু জেনেটিক পরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসকরা অটিজম নির্ণয় করেন। আমেরিকান একাডেমী অফ প্যাডিয়াট্রিক্স (AAP) 18-24 মাস বয়সের শিশুদের ASD স্ক্রীনিং করিয়ে নিতে পরামর্শ দেন।
ASD স্ক্রিনিং টেস্ট:-
শিশুদের মধ্যে অটিজম আছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য একটি সংশোধিত চেকলিস্ট রয়েছে। এই চেকলিস্টে ২3 টি প্রশ্নের একটি সেট রয়েছে, যার উত্তর 2 বছরের নীচের বাচ্চাদের পিতামাতাকে জিজ্ঞেস করা হয়। শিশু বিশেষজ্ঞরা পিতামাতার দ্বারা প্রদত্ত উত্তরগুলো বিশ্লেষণ করে নির্নয় করেন, অটিজম বিকাশের ঝুঁকি আছে কিনা। বাবা-মা মনে রাখতে হবে যে যারা বাচ্চারা ASD- এর জন্য ইতিবাচকভাবে ফলাফল দেখায়, তাদের যে অটিজম দেখা দেবে তা নিশ্চিত নয় । একইভাবে, যে সব বাচ্চারা টেস্টে অটিজমের লক্ষণ দেখায় না, তারাও কিন্তু পরে অটিজমের লক্ষণ দেখাতে পারে।
প্রাথমিক পর্যায়ের পরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা কিছু জেনেটিক টেস্টিং করতে বলেন, এই টেস্টে অটিজমের সাথে সম্পর্কিত বায়োমার্কার গুলিকে চিহ্নিত করে। এই জিনিসগুলি মূলত নেগেটিভ টেস্ট এগুলি থেকেও বোঝা যায় না যে বে বাচ্চাটির অটিজম হবে কি হবে না। এটি শুধুমাত্র সুপারিশ করে যে জেনেটিক কোনো সমস্যা আছে কিনা। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ডাক্তার আরও অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন।
অটিজম এর প্রতিকার –
অটিজমের জন্য সেরকম কোন প্রতিকার নেই। তবে কিছু থেরাপি আছে যা শিশুদের সমস্যাগুলির সমাধানে সাহায্য করতে পারে। অনেক চিকিৎসক অটিজম আছে এমন বাচ্চাদের জন্য ‘আচরণ এবং যোগাযোগ বৃদ্ধিকারক থেরাপি’ করার পরামর্শ দেন। এই থেরাপি আক্রান্ত শিশুদের অন্যদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে শেখায় এবং শিশুদের নতুন নতুন দক্ষতা শেখানোর চেষ্টা করে। কিছু ঔষুধ ও রয়েছে, এগুলো সাধারণত
অ্যান্টিসাইকোটিক এবং অ্যান্টিডপ্রেসেন্ট। যে অটিজমে আক্রান্ত শিশু খুব বেশি বেশি আচরণগত সমস্যার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় তাদের জন্য এই ওষুধগুলো ব্যবহার করা হয়।
অটিজম আছে এমন শিশুর পরিবারকে ভারত সরকার কি কি সাহায্য প্রদান করে:-
অটিজম আছে এমন শিশুর পরিবারকে সাহায্য করার জন্য বেশ কয়েকটি সরকারি প্রকল্প রয়েছে।
যে সমস্ত শিশুর দীর্ঘদিন মানসিক প্রতিবন্ধকতা, সেরিব্রাল পলিসির মতো একাধিক অক্ষমতা রয়েছে তাদের সহযোগিতা করতে ‘বিকাশ ডে কেয়ার’ সিস্টেম আছে। এই কেন্দ্রগুলিতে কথন দক্ষতা, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া মূলক দক্ষতা অর্জন করতে সাহায্য করে। এছাড়াও নিরাময় নামক একটি জীবন বীমা রয়েছে যা শিশুর পিতা মাতাকে আর্থিক দিক থেকে সাহায্য করে। এছাড়াও শিশুর পরিবারকে রেলে টিকিটের ক্ষেত্রে ও আয়করের ছাড় দেওয়া হয়।
যাই হোক আমরা অটিজমের কারণ ও শিশুদের সমস্যা নির্ণয়ের পরীক্ষা, তাদের সাহায্যকারী বিভিন্ন থেরাপি পদ্ধতি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হলো । এর সাথে সাথে ভারত সরকার কি কি ভাবে সাহায্য করে তাও তুলে ধরা হলো।