IISc, ব্যা্ঙ্গালোরে গবেষকরা গ্লুকোমা নির্নয় করতে নিয়ে এলেন স্মার্টফোন আ্যাপ্লিকেশন
কলমে- স্পূর্তি রমন, অনুবাদ ও অক্ষরদানে-মোনালিসা মহান্ত, নিউক্র্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদন
10- 16 ই মার্চ সারা বিশ্বজুড়ে পালিত হয়ে গেল গ্লুকোমা সপ্তাহ। গ্লুকোমা, এমন একটি সমস্যা যাতে চোখের অপটিক নার্ভ গুলি নষ্ট হয়ে গিয়ে ডেকে আনে অন্ধত্ব। বিশ্বের যত মানুষ অন্ধ তাদের মধ্যে 8 % ই গ্লুকোমার কারনে অন্ধ হয়ে যান। ভারতে, অন্ধত্বের এটি প্রধানতম কারণ গ্লুকোমা। 12 মিলিয়ন অন্ধ লোকের মধ্যে প্রায় দশ ভাগ জনই গ্লুকোমার থেকে অন্ধ হয়ে গেছে। 90% ক্ষেত্রেই প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্তকরণের অভাবে ও সঠিক চিকিৎসার অভাবেই, নেমে এসেছে অন্ধকার।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের (ব্যাঙ্গালোর) একদল গবেষক বেশ কিছুদিন ধরে এর ওপর কাজ করছিলেন। সম্প্রতি তারা মোবাইল ফোনে ব্যবহার যোগ্য একটি অ্যাপ্লিকেশন বার করেছেন, যার সাহায্যে প্রাথমিক পর্যায়েই গ্লুকোমা হয়েছে কিনা তা নির্ণয় করা যাবে। এই চমকপ্রদ তথ্যটি তারা 2018 সালের কোয়েম্বাটুর যে সর্বভারতীয় অপথ্যালমোলজিক্যাল কনফারেন্সটি হয়ে গেল সেখানে প্রকাশ করেছেন। আর সাথেই, BIRAC ও C-CAMP দ্বারা পরিচালিত ন্যাশনাল বায়ো-ইন্টারপ্রিনিউশিপ কম্পিটিশনে, “ডিজিটাল হেলথ পুরস্কারটিও জিতে নিয়েছে।
সফটওয়্যারটি ফান্ডাস অন ফোন (FOP) টেকনিকের উপর ভিত্তি করে কাজ করে। যেখানে চোখের ফান্ডাস বা স্কন্দ গুলির ছবিগুলি ক্যাপচার করার জন্য একটি স্মার্টফোন ব্যবহার করা হয়। ফান্ডাস হল লেন্সের বিপরীত পৃষ্ঠ, যেখানে রেটিনা, অপটিক ডিস্ক, ম্যাকুলা, ফোভিয়া এবং পশ্চাৎ মেরু অবস্থিত। ছবি তোলার পর সেটা বিশ্লেষণ করে দেখা হয় গ্লুকোমা সম্পর্কিত কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কিনা।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স ব্যাঙ্গালোরের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর চন্দ্রশেখর সিলামানটুলা জানিয়েছেন, “স্মার্টফোনের মতো উন্নয়নশীল ফটোগ্রাফিং ডিভাইসগুলিও অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এবং উচ্চতর কম্পিউটিং দক্ষতা রয়েছে, যা এই কাজটি করতে খুব সাহায্য করেছে”।
গবেষকরা যে সফ্টওয়্যারটি তৈরি করেছেন, তা সহজেই যে কোনও স্মার্টফোনে ইনস্টল করা যায়। তারপর অপটিক্যাল ডিভাইসকে স্মার্টফোনের সাথে সংযুক্ত হতে পারে, ফান্ডাসের ছবি ফোনে তোলা হয়। সফ্টওয়্যারটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছবিগুলি মূল্যায়ন করতে শুরু করে। প্রচলিত পদ্ধতিতে চিকিৎসকেরা ‘কাপ-টু-ডিস্ক রেশিও’ (CDR) পরিমাপ করে গ্লুকোমা নির্নয় করেন। CDR হল অপটিক ডিস্কের ডায়ামিটারের সাথে গুকোমা আক্রান্ত ব্যক্তির কাপের ন্যায় আকৃতির অপটিক ডিস্কের ডায়ামিটার অনুপাত কতটা পরিবর্তিত হয়েছে তা মাপেন। কিন্তু এই সফটওয়্যার CDR পরিমাপ করার সাথে সাথে চোখের রক্তবাহী শিরা উপশিরা গুলি কি ধরনের পরিবর্তন হয়েছে, বা অপটিক্যাল নার্ভের কোন পরিবর্তন হয়েছে কিনা, বা চোখে পিছনের অন্য জায়গা গুলো আর কোনো পরিবর্তন হয়েছে কিনা তাও পর্যবেক্ষণ করে। ফলে এই সফটওয়্যার এর দ্বারা গ্লুকোমা নির্ণয় করা অনেক বেশি নির্ভুল ও নির্ভরযোগ্য।
প্রফেসরস সেলামেনটুলা জানিয়েছেন, “যে আগে যেই পদ্ধতিতে চিকিৎসকেরা গ্লুকোমা নির্ধারণ করতেন তা অনেক বেশি পরিশ্রমসাধ্য এবং সময় সাপেক্ষ। এছাড়া এজন্য অবশ্যই একজন দক্ষ চিকিৎসকের দরকার কারণ তিনি CDR পরিমাপ করবেন, তারপর ম্যানুয়ালি সেটাকে স্ট্যান্ডার্ডের তুলনা করে দেখবেন, তবেই তিনি সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারবেন যে ওই ব্যক্তির আদেও গ্লুকোমা আছে কি নেই।”
তার বদলে তাদের এই সফটওয়্যার চক্ষুবিশেষজ্ঞের কাজ অনেক সহজ করে দেবেন বলেই মনে করছেন তিনি।
আরি নতুন পদ্ধতিতে ফোনের সফটওয়্যার ব্যবহার করে চোখে গ্লুকোমা নির্ধারণ কিন্তু চোখের পলকেই করা সম্ভব। আর এর জন্য দ্রুতগতির ইন্টারনেট বা কম্পিউটারের ও কোনো প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র ছবি তুলে নিলে নিমেষের মধ্যে সফটওয়্যারটি ছবিগুলো অ্যানালিসিস করে রিপোর্ট তৈরি করে দেয়। আপনি এই রিপোর্টটি ইমেল বা হোয়াটস অ্যাপের সাহায্যে কিন্তু শেয়ার ও করতে পারেন।
বর্তমান প্রযুক্তির যুগে ফান্ডস-অন ফোন টেকনোলজি ব্যবহার ভীষণ উপযোগী। এই টেকনোলজি ব্যবহার করে অন্যান্য অনেক অ্যাপ্লিকেশন বিভিন্ন রকমের কাজ করছে বা করার চেষ্টা করছে।
কিন্তু যে সমস্ত ফোনগুলোতে ফান্ডস-অন-ফোন টেকনোলজি আছে; সেই গুলিতে কিন্তু খুব একটা উন্নত মানের ইমেজ প্রসেসিং সফটওয়ার থাকে না। প্রফেসর সেলিমেনটুলা জানিয়েছেন, তারা কিন্তু এই ফাঁকেটি পূরণ করে দিয়েছেন। এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করার জন্য বিশেষ একটা প্রশিক্ষণের বা দক্ষতার প্রয়োজন পড়ে না। যে কোন ব্যক্তি, যে একটু-আধটু সমস্ত ব্যবহার করতে জানেন তিনি কিন্তু ছবি তুলতে পারবেন। আর একবার ছবি তুলে নিলে সফটওয়্যারটি বাকি কাজ তো নিজে নিজেই করে দেবে, তা তো আপনার আগেই জানলেন। এটি হলো এই সফটওয়্যারটির আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক গ্রামীন বন্ধ অঞ্চলগুলিতে এটি অতি সহজেই ব্যবহার করা যেতে পারে। খুব জটিলতা যুক্ত রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠিয়ে দিতে হবে। আশা করা যায় যে এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে আগামী দিনে আমরা গ্লুকোমার কারণে অন্ধত্ব নেমে আসা থেকে বহু মানুষকে এবার রক্ষা করতে পারবো।