নভেম্বর 23, 2024

টীকা করণ কর্মসূচির ফলে হাম আক্রান্ত প্রায় 50 হাজার শিশু মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে – গবেষণা তথ্য

Reading Time: 3 minutes

নিউক্র‍্যাড হেলথ বাংলার প্রতিবেদন, অনুবাদ ও অক্ষরদানে-মোনালিসা মহান্ত, মার্চ 24, 2019

বিগত বেশ কয়েক মাসে ফ্রান্স নিউজিল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় বহু শিশু হাম বা মিজ্লস্ এ আক্রান্ত হয়েছে। চিকিৎসকেরা ক্রমবর্ধমান আক্রান্ত হবার জন্য “অ্যান্টি-ভ্যাক্স্” আন্দোলনে দোষারোপ করেছেন। অনেক বাবা-মা অটিজমের মতো অনিশ্চিত পরিণতির ভয়ে তাদের বাচ্চাদের টিকা দিতে অস্বীকার করে। কিন্তু এই ধরনের ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। আর এই রকম ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বিজ্ঞানের কিছু তথ্য আমরা তুলে ধরলাম।
প্রভাত ঝাঁ, কানাডায় বসবাসকারী একজন ভারতীয় মহামারি বিশেষজ্ঞ এর ব্যাপারে মতামত দিতে গিয়ে জানিয়েছেন- ” কিছু ব্যক্তি আছে যারা এই ভ্যাকসিন নিয়ে বিভিন্ন রকম গুজব ছড়াচ্ছে, অ‍্যান্টি ভ‍্যাক্সারা মূলত ফেসবুক বা অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে ভ্যাকসিন নিয়ে বাবা-মায়ের মনে নানারকম ভীতি তৈরি করছে। মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় কিন্তু মূল প্লাটফর্ম হয়ে উঠেছে।”

সাম্প্রতিক ভারতে হাম প্রতিরোধী টিকা কার্যক্রম অভিযানের প্রভাব বিশ্লেষণ করেছেন ডাঃ ঝা এবং লখনৌর কিং জর্জ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্যান্য গবেষকরা। এছাড়াও যুক্ত ছিল, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়; চন্ডীগড়ের মেডিকেল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ এর স্নাতকোত্তর ইনস্টিটিউট এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ। এই গবেষণার ফলাফল ই-লাইফ নামের পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

হাম বা মিজ্লস্ Measles morbillivirus দ্বারা সৃষ্ট একটি অত্যন্ত সংক্রামক এবং মারাত্মক রোগ।
মিজ্লস্ এর বিভিন্ন উপসর্গ গুলি হল বন্ধ নাক, সর্দি, হাঁচি, চোখ লাল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। একজন সংক্রমিত ব্যক্তির দেহ থেকে সুস্থ ব্যক্তির দেহে জীবাণুরা বাতাসের মাধ্যমে বা সরাসরি কন্টাক্ট এর মাধ্যমে কিন্তু ছড়িয়ে যেতে পারে। যে সমস্ত ব্যক্তিরা ইমিউনাইজেশন বা টিকাকরন হয়নি, এই রকম নয় জন ব্যক্তিকে একবারেই একজন আক্রান্ত ব্যক্তি সংক্রামিত করতে পারে। 5 বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে হামে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। পৃথিবী জুড়ে যত জন ব্যক্তি হাম আক্রান্ত হন, তাদের মধ্যে চার ভাগের তিন ভাগই ভারতবর্ষের। এই মহামারী ছড়িয়ে যাওয়া থেকে নিয়ন্রণ করতে সরকার থেকে 2005 সালে টীকা করণ কর্মসূচির ব্যবস্থা করা হয়।

” টিকাগুলির বেশিরভাগই ইন্টিগ্রেটেড চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস (ICDS) এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় (MOHFW) দ্বারা পরিচালিত করা হয়”, ডাঃ ঝাঁ ব্যাখ্যা করেন যে, তারা ‘প্যাসিভ’ স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য ক্লিনিক বা স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর ভার থাকে। ২005 সালে চালু করা রুটিন টিকা জোরদার করেছিল। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বিশেষ দিনে দায়িত্ব প্রাপ্ত দলগুলি আগের ডোজ পেয়েছিল এমন খুঁজে বের করে পরেরটা দিয়ে দেবার ব‍্যবস্থা করা দরকার। এটি একটি ‘সক্রিয়’ পদ্ধতি “, তিনি টিকা প্রশাসনের পরিবর্তন সম্পর্কে এই কথা বলছেন।

গবেষকরা এর প্রভাব বিশ্লেষণ করার জন্য দেশের সর্বত্র প্রায় 27,000 জন মিজ্লস্ আক্রান্তদের উপর গবেষণা চালান, এবং তাদের উপর পরিসংখ্যানগত একটি বিশ্লেষণ করেন। টীকাকরণ কর্মসূচি চালু হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই নিজ্লস্ বা হামে আক্রান্ত হওয়া সদ‍্যজাত (1-59মাস) মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। 2005 সালে যা 62000 ছিল না, 2015তে কমে 24000 এ দাঁড়িয়েছে।
2010 থেকে 2013 সালের মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর হার 41,000 থেকে 56,000 কম করেছে। প্রচারাভিযান করে ভারতে মিজ্লস্ প্রতিরোধ করার হার 12% থেকে 22% হয়েছে। মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড় ও গুজরাটের রাজ্যে এই কর্মসূচির উপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। প্রচারাভিযানের ফলে ছেলেদের তুলনায় অল্পবয়সী মেয়েদের মধ্যে কম সংখ্যক মৃত্যু ঘটেছিল।

তাহলে আমরা টীকাকরণ কর্মসূচির ফলে সম্পূর্ণভাবে এই রোগ দূর করার থেকে আর কত দূরে আছি? এটা কিন্ত এত সহজ ব্যাপার নয়, প্রকাশ ঝাঁ জানিয়েছেন, “আমরা টীকা করণ কর্মসূচির মাধ্যমে মিসবাহ নামের কারণে যে শিশু মৃত্যু হয় তা প্রতিরোধ করতে পারি, কিন্তু কখনোই পুরোপুরি প্রতিরোধ করতে পারি না। এতে খুব বেশি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন, এমন ভাবেই আক্রান্ত ব্যক্তিকে সর্তকতা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যাতে তার থেকে অন‍্য কোনো ব্যক্তি আর সংক্রামিত হতে না পারে। এবং প্রত্যেককে ভ্যাকসিন ও নিতে হবে।” তিনি পোলিওর উদাহরণ দিয়েছেন ,যে আমরা কিভাবে টিকাকরণ কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের দেশ পুরোপুরি পোলিও মুক্ত হয়েছে।

গবেষণার ফলাফল শুধুমাত্র হামের টিকা গুলি কতটা ভালো বা কার্যকরী তার ওপরেই নিরীক্ষণ করেননি, তারা এটাও তুলে ধরেছেন যে প্রত্যেকের ভ্যাকসিন নেওয়া টা কত জরুরী। যেখানে সমাজে টিকাকরণের সম্পর্কে মানুষের মনে ভীতি জাগানো হচ্ছে, সেই সমাজে জনসাধারণের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য এইধরনের নিরীক্ষণ কিন্তু খুবই প্রয়োজন।