মে 3, 2024

মুম্বাই ভিত্তিক চুলের প্রতিস্থাপন রোগীর মৃত্যু থেকে ডার্মাটোলজিস্টসদের যথাযথ সতর্কতা শিখতে এবং অনুশীলন করতে হবে

Reading Time: 3 minutes

টাঁকের সমস্যা মেটাতে প্রতিনিয়ত, নানান হেয়ার ক্লিনিকের‌ লোভনীয় হাতছানি!! বিজ্ঞাপনের জালে পড়ে, চটজলদি সমাধান করতে গিয়ে যেন জীবনটাই না চলে যায়।‌ জেনে নিন হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টেশন সংক্রান্ত তথ্য।

নিউক্র‍্যাড হেলথ বাংলার নিজস্ব প্রতিবেদন। কলমে শুভ্রা অধিকারী, অনুবাদ ও অক্ষরদানে-মোনালিসা মহান্ত মার্চ 19, 2019

মুম্বাইয়ের বিখ্যাত ব্যবসায়ী, সাকি নাগার মৃত্যুর খবরটা শুনেছেন তো ? যিনি এই মার্চেই মুম্বাইয়ের একটি বিখ্যাত হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টেশন ক্লিনিক থেকে চুল প্রতিস্থাপন করার পরই হঠাৎ করে মারা গেলেন? প্রাথমিক খবর অনুযায়ী তিনি নাকি দীর্ঘ 12 ঘণ্টা ধরে প্রায় 9500 টি‌ চুল প্রতিস্থাপন করতে গিয়েই মারা গেছেন। অপারেশন চলাকালীন তার শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়া মাত্রই তাকে মুম্বাইয়ের একটি বিখ্যাত সুপার স্পেশালিটি হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু তবুও ডাক্তারেরা তাকে শেষ পর্যন্ত বাঁচাতে পারেননি। চুল প্রতিস্থাপন অস্ত্রপাচারের (HRS) 50 ঘন্টার মধ্যেই এই ব্যবসায়ীর মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন।

কি এমন হয়েছিল যে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন?
চুল প্রতিস্থাপন এর পরেই ওই ব্যক্তির শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, সাথেই মুখ ও গলা ফুলে ওঠে। তার পরিবারের লোক তাকে সাথে সাথেই পোয়াই এই হিরানন্দানী নামক হসপিটালে ভর্তি করেন। চিকিৎসকেরা সাথে সাথে তীব্র অ‍্যানাফাইলেক্সিস নামের অ্যালার্জি প্রতিরোধী চিকিৎসা শুরু করে দেন; এমনকি তাঁর হৃদযন্ত্রের অবস্থা খারাপ হওয়ায় তারা অতি দ্রুত কার্ডিওলজিস্ট এর সাথেও কথা বলেন। কিন্তু তবুও তারা ঐ ব্যক্তি কে বাঁচাতে পারেননি, চুল প্রতিস্থাপন এর মাত্র 50 ঘণ্টার মধ্যে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়।

এই ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে , চুল‌ প্রতিস্থাপনের চিকিৎসা চলাকালীন কতটা কী নিরাপত্তা ও সতর্কতার ব্যবস্থা নেওয়া হয় তা নিয়ে মানুষের মনে গুরুতর সন্দেহ তৈরি হয়েছে। অটোপ্সি রিপোর্টগুলি কোনরকম সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয়নি, তাই মুম্বাইয়ের চিনচপোকলির ওই বেসরকারি ক্লিনিকের চিকিৎসকের বিবৃতি রেকর্ড করার জন্য পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। চিকিৎসকদের মুখে স্বীকার করে নিয়েছেন যে হ্যাঁ একদিনে যদি তিন হাজারের বেশি চুল প্রতিস্থাপন করা হয় তাহলেই শরীরের ওপর বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। ওই ব্যক্তি কে তা জানানো হলেও তিনি এক দিনেই অপারেশন শেষ করতে চান। আর সেই জন্যই তিনি এ ঐ ব্যক্তির মাথায় একদিনে 9000 চুল বুনে দিয়েছিলেন এবং এতে প্রায় 12 ঘন্টারও বেশী সময় লেগেছিলো । দীর্ঘ 12 ঘণ্টা অজ্ঞান করে রাখায় শরীরের পক্ষে এমনিতেই ক্ষতিকর।

চুল প্রতিস্থাপন বা হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টেশন এ আদতেই কি করা হয়?
আসলে জেনেটিক কারনে বা অতিরিক্ত প্রেসারের ফলে বাঘ ঘুম না হওয়ার কারণে বা অন্যান্য নানা রকম সমস্যার কারণেই আজকাল মানুষের খুব বেশি পরিমাণে চুল পড়ে যাচ্ছে, দেখা দিচ্ছে টাঁক। আর এই টাক ঢাকার জন্যই আজকাল মানুষ ছুটছে হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টেশন এর জন্য। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা, দেহের যে অংশে প্রচুর চুল আছে সেই অংশ থেকে চুল তুলে নিয়ে ফাঁকা অংশে লাগিয়ে দেন। বেশির ভাগ সময় চিকিৎসকেরা মাথার পিছনের দিকের চুল গুলো নিয়ে সামনের দিকের ফাঁকা অংশটা ভরাট করে দেন। আজকাল বেশিরভাগ ক্লিনিকের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা অ‍্যানাসথেসিস্টের সাহায্য না নিয়ে, নিজেরাই রোগীকে অজ্ঞান করে অপারেশন চালাচ্ছেন! আর সেখান থেকেই দেখা দিচ্ছে নানা রকম সমস্যা।

চুল প্রতিস্থাপন এর সঠিক পদ্ধতি গুলি তাহলে কি?
চুলের প্রতিস্থাপনের দুটি মূল কৌশল রয়েছে- ফলিক‍্যুল‍্যার ইউনিট ট্রান্সপ্লান্টেশন (FUT) এবং ফলিক‍্যুলার ইউনিট এক্সট্রাকশন (FUE)।

FUT ক্ষেত্রে, ডার্মেটোলজিস্ট রোগীর মাথার থেকে কয়েক ইঞ্চি লম্বা স্ক্যাল্পের একটি অংশ কেটে সরিয়ে দেন এবং তারপর সেলাই দিয়ে এলাকাটি বন্ধ করে দেন। এই পদ্ধতির পরে, তারা একটি শক্তিশালী ম্যাগনিফাইং লেন্সের সাহায্যে স্ক‍্যাল্পের কেটে নেয়া অংশকে ছোট ভাগে বিভক্ত করেন। অবশেষে, সাধারণ ভাবে চুলের বৃদ্ধির জন্য মাথার যে অংশে টাঁক পড়ে গেছে, সেখানে ছোট ছোট অংশগুলোকে লাগিয়ে দেন।

FUE তে, ডার্মাটোলজিস্টরা মাথার পিছনের দিকে অনেক ছোট্ট ছোট্ট ছিদ্র করে ফলিকলগুলোকে অক্ষত অবস্থায় নেন। তারপর টাঁক পড়ে যাওয়া অংশে, সুচ দিয়ে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র করে সেই ছিদ্র গুলিতে মাথার পিছনের অংশ থেকে উঠিয়ে আনা ফলিকলগুলোকে আস্তে আস্তে বসিয়ে দেন। ডাক্তাররা রোগ-জীবাণুর হাত থেকে বাঁচাতে যে অংশটিতে চুল লাগানো হয়েছে সেই অংশটি গজ বা ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে রাখেন। এই পদ্ধতিতে চুল লাগানোর একটি বড় সুবিধা হলো একবার অপারেশনের মাধ্যমে অনেক চুল লাগানো সম্ভব। এই জন্য পদ্ধতি বর্তমানে খুব জনপ্রিয় হয়েছে।
তাই হোক দুই ক্ষেত্রেই চুল লাগানো হয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকেরা যন্ত্রণা কমানোর জন্য সাধারণ যে যে ওষুধ পাওয়া যায় সেই ওষুধ বা ফুলে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি মলম লাগাতে বলেন। এমনকি তারা রুগীকে কয়েকদিন অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরামর্শ দেন যাতে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে।

চুল প্রতিস্থাপন সম্ভাব্য জটিলতা কি কি?
চুলের প্রতিস্থাপনের পদ্ধতিতে রক্তপাত, পরে অপারেটর সংক্রমণ, স্ক্যাল্প, খিটখিটে ফুসফুস, চুলের সরানো বা ইমপ্লান্ট করা এলাকা থেকে স্কাল্পের উপর ক্রাস্ট গঠনের পরে চুলের প্রতিস্থাপনের পদ্ধতির কিছু জটিলতা দেখা দেয়, ফুসকুড়ি , এবং নিরবতা বা সংবেদন অভাব।

অবশেষে, আমরা বলতে পারি যে চুল পড়ে টাঁক পড়ে যাওয়া থেকে মুক্তি পেতে চুল প্রতিস্থাপন এক অভিনব পদ্ধতি। যাইহোক, ডার্মাটোলজিস্টের চিকিৎসা চলাকালীন যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক।